বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার রাম সাগরের খাল নামে খ্যাত ৪শ বছরের পুরাতন সেচখালটি দখলদারদের থাবায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। মধুমতি নদীর সাথে যুক্ত ঘোপ বাঁওড় থেকে কাতলাশুরি বিল পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা খালটি এখন মৃতপ্রায়। সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত এই খালটি স্থানীয় কৃষকদের কৃষির অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে পরিচিত। উপজেলা সদরের পাঁচটি বিলের অন্তত ১০ হাজার একর কৃষি জমিতে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন ও শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির যোগান দিতে খালটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,  খালের দুই পাড়ে অসংখ্য ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি বাড়ির মালিকেরা খালের জায়গা দখল করে বাড়ির জায়গা বাড়িয়ে নিয়েছেন। খালের ভিতর থেকে আরসিসি পিলার তুলে সীমানা প্রাচীরসহ নির্মাণ করেছেন নানা স্থাপনা।
সদরের কাজী সালিমা হক মহিলা কলেজ এলাকায় খালের পাড় ও ভিতর মিলে ২৫ শতাংশ জমির উপর বহুতল ভবন তৈরির জন্য আরসিসি পিলারের সাহায্যে পাঁচ ফুট দেওয়াল নির্মাণ করেছেন এক ব্যবসায়ি। কলেজের এক কর্মচারী খালের মধ্যে প্রায় একশ’ ফুট দৈর্ঘ্যরে ইটের দেয়াল তুলে মাটি ভরাট করে বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা নির্মাণ করেছেন। মহিলা কলেজ এলাকায় খালের তীরে এক ব্যক্তি খালের মধ্যে থেকে সীমানা প্রাচীরের কাজ শুরু করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, অতীতে প্রায় সবকটি ভূমি জরিপে সেচখালটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ড হয়। আগের জরিপের নকশায় খালের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ২০ ফুটের বেশি। সম্প্রতি শেষ হওয়া হাল রেকর্ডে এক শ্রেণির অসাধু জরিপ কর্মকর্তাদের উৎকোচ দিয়ে খালের জমি রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন খাল পাড়ের  জমির মালিকেরা।
বাওইজানি থেকে কাতলাশুরির বিল পর্যন্ত দুই কিলোমিটার খালের দুই পাড়ের শতাধিক পয়েন্টে স্থানীয় প্রবাভশালীরা দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন। খালের জমি ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করায় গুরুত্বপূর্ণ সেচখালটি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। কয়েক জায়গায় নাব্যতা হারিয়ে খালের অস্তিত্বই সংকটের মুখে।
দখলে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী মজনু শাহসহ কয়েকজন দাবি করেছেন,‘খালের পাশে তারা তাদের কেনা জমি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।’
স্থানীয় সুবিধাভোগী কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খালের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ করায় পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। খালের মূলধারা সংকুচিত হয়ে পড়ায় বর্ষা মৌশুমে পানি প্রত্যাহার ও শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়বে। এতে খালের সাথে সংযুক্ত কাতলাশূরী, ধোয়াইল, ফলিয়া, সিন্দাইন ও সূর্যুকুন্ডুু বিলের কমপক্ষে ১০ হাজার একর কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হবে।
মহম্মদপুর সদরের প্রবীণ সংবাদকর্মী আব্দুল ওয়াহাব জানান, ভূষণা অঞ্চলের স্বাধীনচেতা জমিদার রাজা সীতারাম রায়ের সময়ে সেচ সুবিধার জন্য খালটি খনন করা হয়। উপজেলা সদরে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক জলাধার ঘোপ বাঁওড়। পদ্মার শাখা মধুমতি নদীর সাথে যুক্ত এই বাঁওড়ের আরেক নাম রামসাগর। বাঁওড়ের সাথে যুক্ত বলে স্থানীয়ভাবে রাম সাগরের খাল নামে পরিচিত। canal grave in magura picture 02
সদরের কানাই নগর গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার অধিকারী (৭৫) বলেন,  ‘শৈশবে তিনি খাল ২০-২৫ ফুট প্রস্থ দেখেছেন। এখন কোথাও ৩-৪ ফুটে এসে ঠেকেছে।’
সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্যা বলেন,‘খালের মধ্যের জমি কোন ব্যক্তির হতে পারে না। বিষয়টি আমি উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় উত্থাপন করবো।’
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) অফিসার চৌধুরী রওশন ইসলাম  বলেন, ‘ আমি এখানে সম্প্রতি যোগ দিয়েছি।  খালের দুই পারে অনেকেই স্থাপনা  নির্মাণ করেছেন। জরীপ প্রতিবেদন দেখে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মাগুরা/ ৩০ মে ১৭