অনলাইন ডেস্ক, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
মাগুরা জেলাকে রেল সংযোগের আওতায় আনতে আজ মঙ্গলবার একনেকে ১ হাজার ২০২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে।  বাস্তবায়নাধীন পদ্মাসেতুর মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপন করতে  ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে ২৩ দশমিক ৯০ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ তৈরী হচ্ছে শিগগিরই।

এতে এ অঞ্চলে বাণিজ্য প্রসার ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ উন্নয়ন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল এমপি জানান, ‘মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২০২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি আজ মঙ্গলবার (২৯ মে) অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হয়। প্রকল্পটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেকের সভায় আজ দুপুরে অনুমোদন হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রধান সৈয়দ আলী বিন হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মঙ্গলবার একনেক সভায় বেশকয়েকটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। এর মধ্যে অন্যতম মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৪ কিলোমিটার নতুন ব্রডগেজ রেলপথ নির্মিত হবে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের মে থেকে ২০২২ সালের এপ্রিলের মধ্যে এ রেলপথ বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। প্রায় ৪৬ বছর আগে ফরিদপুর মধুখালী থেকে কামারখালী পর্যন্ত রেলপথ ছিল। কিন্তু এটা এখন আর ব্যবহার হয় না। তবে কামারখালী থেকে মাগুরা পর্যন্ত কোনো রেলপথ নেই।

প্রকল্পের আওতায় মধুখালী থেকে কামারখালী পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথটি সংস্কার করে ব্রডগেজ এবং কামারখালী থেকে মাগুরা পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মিত হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা জেনেছি প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। অনেক আগে কামারখালী পর্যন্ত রেলপথটি সচল ছিল। কিন্তু পরে বন্ধ হয়ে যায়। এখন মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ করা হবে।

তিনি জানান, রেলপথটি নির্মাণের জন্য বৈদেশিক অর্থায়ন পাওয়ারও চেষ্টা চলছে। তবে যদি না পাই তবে দেশীয় অর্থায়নেই তা বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন

এ লাইন নির্মিত হলে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা ও মাগুরার মধ্যে রেল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে।

‘এতে ওই অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষ সরাসরি সুফল ভোগ করবেন। ওই অঞ্চলের দারিদ্র্য দূর করার দিক থেকেও এই প্রকল্পটি সহায়ক হবে।’

রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হচ্ছে। ১৮৬২ সালে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে রেলপথের যাত্রা শুরু হয়।

এরপর ১৮৭০ সালে গড়াই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারি তা গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের বাঁশ, বেত, পাট বহনের গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৩২ সালের ১ জানুয়ারি রাজবাড়ীর কালুখালী ঘাট পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন করা হয়।

একই সময়ে আরও একটি শাখা লাইন মধুখালী থেকে কামারখালী পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়। এ সময় লাইনটি এলাকার অধিবাসীর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এই শাখা লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা পরবর্তীতে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

দীর্ঘদিন পর ওই এলাকায় রেল সংযোগের আশ্বাস পেয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছেন ফরিদপুর-মাগুরার বাসিন্দারা। গত বছর মাগুরার রামনগরে এক অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী এ অঞ্চলে রেল সংযোগের ঘোষণা দেন।

এদিকে একনেকে বিল পাশ হওয়ার পরপরই রেললাইন তৈরীর কাজ শুরু হয়ে যাওয়ার আশায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন মাগুরার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

মাগুরার অন্যতম সামাজিক সংগঠন জাগো মাগুরার আহবায়ক বারিক আনজাম বার্কি জানান- রেল সংযোগ আমাদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী। এ দাবী শিগগিরই বাস্তবায়ন হচ্ছে জেনে ভাল লাগছে। এর সঙ্গে জড়িত সকলকে শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানাই।

মাগুরার অন্যতম সামাজিক সংগঠন সুপ্রভাত বাংলাদেশ এর সভাপতি প্রবীণ শিক্ষাবিদ সুনিল সরকার বলেন-   রেল একটি এলাকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাগুরায় রেল সংযোগের সঙ্গে সঙ্গে আমরা নির্মিয়মান পদ্মাসেতুর সাথে আরো বেশী সংযুক্তির সুযোগ পাবো। যা আমাদের অঞ্চলের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

মাগুরা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান খোকন জানান- মাগুরায় রেল সংযোগের জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। সেই সঙ্গে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাই মাগুরার কৃতি সন্তান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারি সচিব জননেতা এ্যাড সাইফুজ্জামান শিখরকে। যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমাদের স্বপ্নের রেললাইনটি বাস্তবায়ন হতে চলেছে।

রূপক/মাগুরা/২৯ মে ১৮