রূপক আইচ, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

তোমার মনে ফাল্গুনি সুখ
আমার মনে কি?
আমার মনে দুখের বোঝা
নিরবে বইছি…

এমনি প্রায় অর্ধশত গান লিখে নিজ গন্ডি পেরিয়ে এখন জাতীয় পর্যায়ে ভূমিকা রাখতে চলেছেন মাগুরার মহম্মদপুরের জোকা গ্রামের কৃতি সন্তান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ওয়াসিউজ্জামান অনন্য(২২)।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতাকে দুর করে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন অনন্য(২২)। বাবা ও মা স্কুল শিক্ষক এএনএম নুরুজ্জামান ও হাসিনা সুলতানা জামান এর ৩ ছেলের মধ্যে ছোট সন্তান অনন্য জন্ম থেকেই অন্ধ ছিলেন না। শিক্ষকতার পাশাপাশি বাবা কৃষি কাজ করতেন। মাত্র ৪ বছর বয়সে খেলতে খেলতে বাবার আনা কিটনাষক অসাবধনতায় নিজের দুচোখে লাগিয়ে ফেলেন শিশু অনন্য । অনেক চেষ্টা করেও চোখদুটিকে আর ফেরানো সম্ভব হয়নি। আদরের সন্তানের এমন করুন পরিণতিতে বাবা মা মুষড়ে পড়েছিলেন। তবে সন্তানকে পৃথিবীতে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়তে বাবা মায়ের ছিল অগাধ বিশ্বাস। তাই ছোট বেলা থেকেই তারা অনন্যকে মানষিকভাবে শক্তি যুগিয়েছেন সকল বাঁধা অতিক্রম করাতে। তাইতো একের পর এক বাধা টপকে অনন্য এখন দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যায়ের গর্বিত ছাত্র। তার লেখা গান শিঘ্রই দেশের প্রথিতযশা কয়েকজন শিল্পী গাইবেন বলে জানালেন অনন্য। তবে ওই শিল্পীদের নাম প্রকাশ করতে চাননি অনন্য।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীতাকে অতিক্রম করে অনন্য ২০০৯ সালে মাগুরা পারনান্দুয়ালী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় থেকে এস এসসি পরিক্ষায়  জিপিএ ৪.৮৮ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। পরে ২০১১ সালে নহাটা কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিট লিস্টে চান্স পেয়ে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে এখন তিনি কৃতিত্বের সাথে অনার্স শেষবর্ষে পড়াশুনা করছেন।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এ কৃতি ছাত্র মাগুরাবার্তাকে  জানান- মানুষের আগ্রহ আর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকলে যে কোন ধরণের প্রতিবন্ধীতাই অতিক্রম করা সম্ভব। আমি আমার দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। বিশেষ করে যারা সুযোগ ও সামাজিক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে নিজের প্রতিভাবে মেলে ধরতে পারছে না। তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে কাজ করতে চাই।

a
বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন অনন্য। – মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

এ প্রসঙ্গে মাগুরা সদর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো: জাহিদুল আলম মাগুরাবার্তাকে  জানান- প্রতিবন্ধীরা প্রাকৃতিকভাবেই অত্যন্ত মেধাবী হয়ে থাকেন। অনন্য’র মাঝে রয়েছে অসাধারণ প্রতিভা। বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবসে অনন্য অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় বক্তব্য রেখে উপস্থিত প্রতিবন্ধীদের মাঝে অনুপ্রেরণা ছড়িয়েছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।