আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
‘টাকায় কিনা কিনা হয়’- এই প্রবাদ এখন এক টাকার কাগুজে নোটের ক্ষেত্রে অনেকটা অসার প্রমান হতে বসেছে। কারণ এক টাকার বলতে গেলে এখন কোন মূল্য নেই। এক টাকায় তেমন কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দিনে দিনে একটাকার নোট অচল হিসেবেই ধরে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ।
এক টাকার মূল্যমানের বিকল্প হিসেবে বিক্রেতা ক্রেতাকে খুচরা নাই অজুহাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন চকলেট।
অথচ ইতিহাস বলছে, এক টাকায় শায়েস্তা খাঁর আমলে আট মণ চাল পাওয়া যেত। ৫০ বছর আগে পাওয়া যেত একটি মুরগি। গত শতাব্দীর শেষের দিকেও মিলত মুরগির একটি ডিম। এখন বড়জোর মেলে একটা চকলেট। ভিক্ষুকরাও আর নিতে চাননা এক টাকার নোট। এই হচ্ছে এক টাকার কাগুজে নোটের অবস্থা।সিকি, আধুলি তথা ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সার মতো এক টাকার স্থান হবে জাদুঘরে।
জানা গেছে, লেনদেনে এক টাকার ব্যবহার প্রায় উঠে যাচ্ছে। খুচরা দেওয়ার সময় দোকানি এক টাকার বদলে একটা লজেন্স ধরিয়ে দিচ্ছেন। বাসভাড়া রিকশাভাড়াাসহ কেনাকাটায় এক টাকা কম বা বেশি দিতে বা নিতে হচ্ছে। এক টাকার বদলে লজেন্স দেওয়ার পেছনে অবশ্য দোকানদারদের ব্যবসায়িক স্বার্থটাই বড় ।
সদরের চা-সিগারেটের কয়েকজন দোকানদার জানান, ১০০ লজেন্সের একটি প্যাকেট তারা কেনেন থেকে ৫০ টাকায়। চা বা সিগারেটের ক্রেতাদের এক টাকার বিনিময় পণ্য হিসেবে ১০০ লজেন্স গছিয়ে দিতে পারলে লাভ হয় ৫০ টাকা।
এক টাকার সরবরাহ কম ও ভাংতির আকালের অজুহাতে তুচ্ছ ভেবে এক টাকা কম বা বেশি দেওয়া হচ্ছে। এতে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন লোকজন। এক টাকা ছাড় দেওয়ার কারণে পণ্য বা সেবার দাম এক টাকা বেড়ে যাচ্ছে। এটা মূল্যস্ফীতি তৈরি করছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে লেনদেনের চলতি একক বা ইউনিট মূল্যহীন হয়ে পড়ছে।
লেনদেনে এক টাকা ছাড় দেওয়ার যে চর্চা গড়ে উঠেছে, তা পাল্টানো দরকার। একদিকে অনেক কয়েন মানুষের ঘরে পড়ে থাকছে। অন্যদিকে, সবাই এক টাকা করে ছাড় দিতে দিতে অনেক বড় অঙ্ক লেনদেনের হিসাব থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
এক টাকার কাগুজে নোট বা ধাতব মুদ্রাটি ব্যাংক নোট নয় এটি সরকারের। সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়ে এই টাকা বা কয়েন ছেপে বাজারে ছাড়ে।
অর্থ লেণদেনের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক টাকার নোট না পাওয়ার পেছনে এক টাকার ধাতব মুদ্রা বা কয়েন দায়ী । এক টাকার নোটের চেয়ে বাজারে কয়েনের সরবরাহ প্রায় পাঁচ গুণ বেশি কয়েনের চেয়ে নোট ছাপার খরচ বেশি। আবার কয়েনের চেয়ে টাকা বেশি দিন ব্যবহার করা যায়।
তাই বাংলাদেশ ব্যাংক আর এক টাকার কাগুজে নোট বেশি সরবরাহ করে না। আবার কয়েন কেউ ব্যবহার করতে চায় না। ব্যাংকের ভল্টে ও বাসা-বাড়ির মাটির ব্যাংকে অথবা বিছানার নিচে পড়ে আছে কোটি কোটি টাকার কয়েন। এতে বাজারে এক টাকার নোটের সংকট বাজারে থেকেই যায়। নোট বনাম কয়েনের এই টানাপোড়েনে মৃতপ্রায় ও অচল এক টাকা।
মাগুরার এর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিনয় সাহা মাগুরাবার্তাকে বলেন, ‘এক টাকা এখন আর লেনদেনে ভুমিকা রাখতে পারছে না। ফলে খুচরা টাকার অভাব সবসময় থাকে। ক্রেতা কিংবা বিক্রেতাদের মধ্যে এক টাকা ছেড়ে দেওয়া অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কারণ এক টাকায় বাজারে তেমন কোন পণ্য এখন আর পাওয়া যায় না।
সোনালী ব্যাংক মাগুরা প্রধান শাখাার ব্যবস্থাপক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘গ্রাহকের কাছে এক টাকার নোটের চাহিদা নেই। ব্যায় বেশি হওয়ায় নতুন করে একটাকার কাগুজে নোট আর ছাপানো হচ্ছে না। কয়েন দিয়ে মেটানো হচ্ছে এক টাকার নোটের চাহিদা।’
সম্পাদনা: রূপক আইচ, ১৫ অক্টোবর ১৬