রূপক আইচ, মাগুরা প্রতিনিধি  : 
আজ শোকাবহ ২৬ নভেম্বর। মাগুরা সদর উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের মানুষের স্বজন হারানোর শোকাবহ এক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক বাহিনীর অতর্কিত হামলায় মাগুরার ২৮ বীর মুক্তিযোদ্ধার শহীদ হন। মাগুরা-ঝিনাইদহের সীমান্তবর্তী কামান্না গ্রামে সংগঠিত এ যুদ্ধের হতাহত অধিকাংশই ছিলেন মাগুরা হাজিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের। মুক্তিযোদ্ধাদের মতে কামান্নায়ই এ অঞ্চলের সবচেয়ে বেশী মুক্তিযোদ্ধা এক যুদ্ধে শহীদ হন।  মুক্তিযুদ্ধের ৪৫ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ এ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নেয়া হয়নি তেমন কোন উদ্যোগ। ২৮শহীদের নাম সম্বলিত একটি স্তম্ভ হাজিপুর গ্রামে ১৯৯৭ সালে তৈরী করা হলেও আজো পর্যন্ত এটির কোন ফলক লাগানো হয়নি। ফলে নতুন প্রজন্ম ওই যুদ্ধ সম্পর্কে বলতে গেলে কিছুই জানতে পারছে না।

এ বিষয়ে দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়ার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসি।

হাজিপুরের ২৮ শহীদের মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন ও সেখানে একটি স্মৃতি কমপ্লেক্স তৈরীর দাবী জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও নতুন প্রজন্ম ।kamanna-sohid-dibosh-pic-1

হাজিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আমিনুল হক খোকন জানান – এ এলাকার ২৮ জন বীর শহীদের স্মরণে হাজিপুর স্কুলে ঢোকার মুখেই একটি মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভ করা আছে। কিন্তু এ জায়গাটি  অরক্ষিত থাকায় গরু ছাগল স্মৃতি স্তম্ভটিকে অপবিত্র করে। তিনি এখানে একটি কমপ্লেক্স তৈরী করে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি অম্লান করে রাখার দাবী জানান।

কামান্না যুদ্ধে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার আব্দুর রহমান ও অপর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রসুল  বলেন- মাগুরার হাজিপুর গ্রামে কামান্না শহীদদের উদ্দেশ্যে একটি স্মৃতি ফলক তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে ওই সকল মুক্তিযোদ্ধাদের  বীরত্বগাথা সম্পর্কে কিছুই লেখা নেই। এখানে একটি মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি কমপ্লেক্স তৈরী হলে সেখানে তা লিপিবদ্ধ রাখা যেতো। এরফলে নতুন প্রজন্ম ওই যুদ্ধের বিস্তারিত জানতে পারতেন। এছাড়া প্রতিবছর ২৬নভেম্বর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারিভাবে পালনের ব্যবস্থা করা হলে বিষয়টির সার্বজনীনতা বৃদ্ধি পেতো বলে তারা মনে করেন।

এ প্রসঙ্গে মাগুরার জেলা প্রশাসক মুহঃ মাহ্বুবর রহমান বলেন- নিঃসন্দেহে কামান্নায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গর্ব। এসকল মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি অম্লান করে রাখতে একটি কমপ্লেক্স তৈরী করতে আমরা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের কাছে প্রস্তাব রাখবো। আমরা আশা করছি মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে মন্ত্রনালয় থেকে ইতিবাচক সাড়া পাবো।

উল্লেখ্য- ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর  রাতে মাগুরার এক দল মুক্তিযোদ্ধা সীমান্তবর্তী কামান্না গ্রামে গিয়ে রাত্রি যাপনের জন্য মাধব কুন্ডু নামে এক ব্যক্তির বাড়ির পরিত্যাক্ত একটি টিনের ঘরে অবস্থান নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের এ খবর স্থানীয় রাজাকাররা শৈলকুপা ও মাগুরায় পাক বাহিনীর ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়। খবর পেয়ে রাজাকার আলবদর বাহিনীর সহযোগিতায় ঝিনাইদহ, শৈলকুপা ও মাগুরা থেকে আসা পাক সেনারা ২৬ নভেম্বর ভোর রাতে চারদিকে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর অতর্কিতে গুলি বর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি ছুড়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেষ্টা করে। কিন্তু ভারি অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্থানী বাহিনীর আক্রমনের মুখে ঘটনাস্থলেই ২৮ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেন আলমগীর হোসেন, আলী হোসেন, কাদের, মোমিন, সলেমান, ওয়াহেদ, আজিজ, আকবর, রিয়াদ, শরীফুল, আলিউজ্জামান, মনিরুজ্জামান, মাছিম, রাজ্জাক, শহিদুল, আব্দুর রাজ্জাক, কাওছার, সালেক, সেলিম, মতলেব, হোসেন আলী, খন্দকার রাশেদ, গোলজার, তাজুল ইসলাম, আনিসুর, অধীর হালদার ও গৌর চন্দ্র রায়। পাক সেনারা চলে গেলে মুক্তিযোদ্ধারা এলাকাবাসীর সহায়তায় কামান্না স্কুল মাঠের পাশে নদীর তীরে ৫টি গণ কবরে এ বীর শহীদদের সমাহিত করেন।

মাগুরা/ ২৬ নভেম্বর ১৬