অলোক বোস, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
মাগুরা সদর হাসপাতালে আরএমও মুক্তাদির রহমানের সহযোগিতায়ই চলছে অবৈধ ক্লিনিক ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ব্যবসা। আজ সোমবার সকালে ২জন মুমুর্ষূ রোগীর জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন বিক্রি করার অভিযোগে মুন্সী মেডিকেল নামে একটি ওষুধের দোকানে ২০ হাজার টাকা জরিমানার প্রেক্ষিতে এ অভিযোগ করেন ভূক্তভোগীরা।
সদর হাসপাতালের অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. চিত্ত রঞ্জন রায় মাগুরাবার্তাকে জানান, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় ওই ওষুধ ফেলে দিয়ে তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওই রোগিদের ইনেজেকশন প্রদান করেন। যদিও সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারনে ওই দুই রোগিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তবে মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রাণরক্ষাকারী ওই ইনজেকশন শরীরে পুশ করলে রিয়্যাকশনেই মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
তবে জীবনরক্ষাকারী অতি গুরুত্বপূর্ণ মেয়াদ উত্তীর্ণ ওই ইনজেকশন বিক্রির মত বড় অপরাধে লঘু দন্ডের কারনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগিসহ স্থানীয়রা। তারা মাগুরা সদর হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্চাচারিতা, দালালদের দৌরাত্মের জন্য ক্লিনিকবাজ আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মুক্তাদির রহমানকে দায়ী করেছেন।
ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পরিমল কুমার সরকার ও ভুক্তভোগীরা মাগুরাবার্তাকে জানান, সকালে সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে সড়ক দুর্ঘটনায় মুমূর্ষ দুই রোগীর জন্য ব্যবস্থাপত্রে ২ টি জীবন রক্ষাকারী ইনজেকশন লেখেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এসময় হাসপাতাল সংলগ্ন মুন্সি মেডিকেলের এক দালাল ওই দোকান থেকে এড্রনিল নামের ওই ইনজেকশন দুটি এনে দেয়। যা অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইনজেকশনটি দুটি মেয়াদোত্তীর্ণের লক্ষ্য করে তা ফেরত পাঠান। এ সময় স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানালে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে ওই দোকান মালিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তবে জরিমানা দিয়ে ওই ব্যবসায়ী কারদন্ডের হাত থেকে রক্ষা পান।
ম্যাজিষ্ট্রেট পরিমল কুমার সরকার জানান, অনেক বড় অপরাধ হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে আরএমও যে অভিযোগ এনেছেন তাতে তিনি স্বাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে এ সাজা দিয়েছেন।
ঘটনার সময় উপস্থিত বশিরুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, সমীর কুমার, ফজলুর রহমানসহ শহরের একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে মাগুরাবার্তাকে বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু গুরুতর অপরাধে আরএমও সাহেব ব্যক্তি স্বার্থে আদালতে ছোট অভিযোগ দিয়েছেন। আদালত তার আওতায় সর্বোচ্চ বিচার করেছেন।
তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মুক্তাদির রহমানের কারনে এখানকার সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। তিনি নিজে একজন ক্লিনিকবাজ। হাসপাতালে সময় না দিয়ে অন্যর নামে প্রতিষ্ঠিত নিজের মালাকানাধীন পলি ক্লিনিকে সারাদিন রাত অপারেশন করেন। যদিও তিনি কোন সার্জন নন, একজন মেডিকেল অফিসার। প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি মাগুরা শহরে ক্লিনিকের ব্যবসা করছেন। প্রায় একই সময় ধরে মাগুরায় চাকরি করছে। নানা দুর্নীতি সাথে জড়িত থাকলেও তার পোষা দালাল ও মাস্তানদের ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায়না।
মুক্তাদির রহমানের কাছে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি মাগুরাবার্তাকে বলেন- “মাগুরার সুশিল সমাজ, সুধী সমাজ, প্রশাসনসহ সবাই খারাপ। যে কারনে তিনিও খারাপ। পারলে তার বিরুদ্ধে প্রত্রিকায় বড়-বড় নিউজ করেন। তাতে তার কিছুই হবে না।”
এ ব্যাপারে মোবাইলে সিভিল সার্জন এফবিএম আব্দুল লতিফ এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আরএমও’র হাসপাতাল ক্যাম্পাসে থাকার কথা। তবে এ বিষয়ে তিনি পরে সরাসরি কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সম্পাদনা: রূপক আইচ, ১৯ সেপ্টেম্বর ১৬