আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
হেমন্ত প্রায় শেষ। পঞ্জিকার হিসাবে পৌষ আসতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। তবে শীতের আগমনী বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের মেঠো পথে। ভোরে কুয়াশার সাদা চাদরে ঢেকে যাচ্ছে পথঘাট মাঠ প্রান্তর। শিশির জমছে ঘাসে। আমলকির ডালে ডালে শীতের হাওয়ার নাচনের পূর্বাভাস বলছে হাড়কাপানো শীত সমাগত। মাগুরায় শীত-কুয়াশার দাপট বাড়ছে।

জেলার চারটি উপজেলায় শীতের কাঁপন শুরু হয়েছে। রাতে শিশির ঝরছে। জনজীবনে শীতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গরিব মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। চলছে সূর্যের আলোর লুকোচুরি। বেশ বেলা হলে সূর্যের দেখা মিলছে।

মানুষজন ছুটছেন গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে। হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

শালিখার তালখড়ি এলাকার অটোরিকশাচালক আমজাদ হোসেন বলেন, কুয়াশার জন্য ১০ হাতের মধ্যেও কিছু দেখা যায় না। যেকোনো সময় বিপদ হতে পারে।

ভেজা রাস্তা দেখে মনে হয়েছে, রাতে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। অসহায় দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। দিন মজুরেরা কাজে বের হতে পারছেন না। শহরের ফুটপাতসহ লেপ-তোশক ও শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে গেছে।

জেলা সদরের বেলনগর এলাকার কৃষিশ্রমিক শুকুর মিয়া (৫২) বলেন, ‘ঠান্ডার কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। কিন্তু কাজ না করলে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে খাব কি ? সে কারণে কাজ করতে হচ্ছে।’

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এক সপ্তাহ পর থেকে তাপমাত্রা আরও কমতে শুরু করবে। এবার ঠিক সময়েই শীত নামবে বলে তারা জানান।

গত কয়েকদিন মাগুরা সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলায় ঠান্ডার প্রকোপ বেড়ে গেছে। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টা শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য একটু খারাপ বলে জানিেেয়ছেন চিকিৎসকেরা। এ সময় শিশু ও নানা বয়সের লোকজন বিভিন্ন ঠান্ডাজনীত রোগে আক্রান্ত হন। এসময় তাদের গরম কাপড় ব্যবহার, বাসি ও ঠান্ডা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।

সদর আধুনিক হাসপাতালের বহির্বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে অসংখ্য শিশু ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।

শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অনেকে বাড়ির উঠানে খড়কুটায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। বে সরকারিভাবে কম্বল বিতরণ শুরু হলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল।

মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের মৌশা আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারি আবেজান বেওয়া (৬৬) ঠকঠক করে কাঁপছিলেন শীতে। তিনি বলেন, ‘সরকার বোলে মেলা মানষিরে কম্বল দেয়। আমারে এটটা আনে দিও…।’

মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মো. মকছেদুল মোমিন বলেন, ‘মৌসুম পরিবর্তনের সময় ঠান্ডাজনীত অসুখবিষুখ এমনিতেই বেড়ে যায়। তবে এ বছর আক্রান্তের হার এখনো মারাত্বক পর্যায়ে পৌছেনি বলে তিনি জানান।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক পার্থ প্রতীম সাহা জানান, সঠিক সময়ে শীত আসা কৃষির জন্য সুখবর। সঠিক সময়ে শীত নামলে গমসহ বিভিন্ন রবি শস্যেও আশাতীত ফলন পাওয়া যায়।’