২২ এপ্রিল ২০১৫। মাগুরার মেধাবী ছাত্রী মৌমিতা হোসেন মুমু এবং তার চাচাতো বোন উসরাত জাহান অশ্রু বিকাল বেলায় নবগঙ্গা নদীতে গোসল করতে গিয়ে সুধুমাত্র সাঁতার না জানার কারনে মর্মান্তিকভাবে পানিতে ডুবে মারা যায়। অকালে ঝরে যায় দু’টি তরুণ তাজা প্রাণ। আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের সুপ্রভাত পরিবারের দু’টি সন্তান।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে মাগুরার শরীর চর্চা সংগঠন সুপ্রভাত বাংলাদেশ, মাগুরা ২০১৫ সালের আগস্ট থেকে চালু করে মুমু-অশ্রু স্মৃতি সাঁতার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ পুকুরে কলেজের অধ্যক্ষের পৃষ্ঠপোষকতায় এ সাঁতার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সুপ্রভাত বাংলাদেশ, মাগুরা মুমু-অশ্রু স্মৃতি সাঁতার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। মাগুরা জেলার যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সাঁতার প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহযোগিতা চাইলে সুপ্রভাত বাংলাদেশ, মাগুরা তাদেরকে সহযোগিতা প্রদান করবে।
সাঁতার কী ?
সাঁতার এক প্রকার কৌশল। যার সাহায্যে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণি তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে পানিতে ভেসে থেকে বিচরণ করতে পারে।
সাঁতার কেন প্রয়োজন ?
মানব সভ্যতা বিকশিত হবার সাথে সাথে আমাদের জীবনধারায় এসেছে পরিবর্তন। বিশেষ করে নগর জীবনে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। শহুরে জীবন মানেই ইট-কাঠ-পাথরের সাথে বসবাস। জলাধার বিহীন জীবন। কিন্তু নদীমাতৃক আমাদের বাংলাদেশ। শহর পেরোলেই পানি আর পানি। এ দেশে রয়েছে অসংখ্য ডোবা-পুকুর, হাওড়-বাওড়। শিরা উপশিরার মত বাংলাদেশের বুক চিরে বয়ে গেছে অসংখ্য নদ-নদী। সুতরাং পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য বিশেষ করে শিশুদের জন্য সাঁতার জানা খুবই জরুরী। শারীরিক নিরাপত্তার জন্য সাঁতার। জীবনের জন্য সাঁতার। পানি থেকে নিরাপদ জীবনের জন্যই সাঁতার জানা প্রয়োজন। আমরা পুকুর-ডোবায় সাঁতার কেটে আনন্দ পাই। সী-বিচে নেমে গোসল করতে পছন্দ করি। সাগর-নদীতে নৌ বিহার করতে ভালবাসি। কিন্তু সাঁতার না জানার কারনে প্রতিবছর বহু মানুষ পুরুর-ডোবায় পড়ে, সাগর-নদীতে আনন্দ বিহার করতে গিয়ে ডুবে মারা যায়। তাই-
সাঁতার জানা থাকলে পানি থেকে নিজেকে বাঁচানো যাবে।
সাঁতার শিখে রাখলে বিপদে নিজের জীবন রক্ষা করা যাবে।
অন্য কেউ পানিতে পড়ে গেলে তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
অযথা পানি ভীতি দূর হবে এবং নিজের উপর আস্থা সৃষ্টি হবে।
এ জন্য সাঁতার শেখার কোনই বিকল্প নেই।
সাঁতারের উপকারীতা কী ?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধু শারীরিক নিরাপত্তার জন্য নয়,শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও সাঁতার শেখা প্রয়োজন। সাঁতার কাটলে শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গ থেকে নি¤œাঙ্গ প্রর্যন্ত প্রায় প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল হয়। এ জন্যই সাঁতারকে সবচেয়ে ভাল ব্যায়াম বলা হয়েছে। যে কোন বয়সের মানুষের জন্য শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত সাঁতার কাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত সাঁতার কাটলে অনেক রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
সাঁতার শরীরের কার্ডিওভাসকুলার পদ্ধতি (সিস্টেম) ভাল রাখে। হৃদস্পন্দন, রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়, হৃদপিন্ডে চর্বি জমে না, ব্লকের মত সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়, হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
সাঁতার ফুসফুসের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শ্বাস-প্রশ্বাস সচল রাখে এবং ফুসফুসের অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। পেশি শক্তিশালী হয়।
হাড়ের জোড়গুলো সবল হয়।
সাঁতার শরীরের মেটাবলিজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
যে সব শিশু মুটিয়ে গেছে তাদের বাড়তি মেদ কমাতে সাঁতার অত্যন্ত কার্যকর।
যে সব শিশুরা অ্যাজমা রোগে ভুগছে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তাদের নিয়মিত সাঁতারে অভ্যস্ত করে তুললে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
শিশুর বাড়ন্ত শরীরের জন্য সাঁতারের কোন জুড়ি নেই। সাঁতারে বাড়ন্ত শিশুর মাংশপেশিগুলো সুন্দর ভাবে গঠিত হয় এবং শক্তিশালী হয়। ফলে শিশুর দৈহিক গঠন সুন্দর হয়।
কোমর ব্যথা, জয়েন্ট ব্যথা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সাঁতার বিশেষভাবে উপকারী।
সাঁতার শরীরের পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং খনিজ লবনের উপর কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।
উচ্চরক্ত চাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে সাঁতার উত্তম কাজ করে।
সাঁতার শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভাল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে।
নিয়মিত সাঁতার কাটলে শরীরের বাড়তি মেদ এবং ওজন দূর হয়।
সাঁতারে নামার প্রস্তুতি হিসেবে যা করতে হবে ঃ
হাত-পা ছুড়ে হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে আড়মোড়া ভাঙতে হবে। তাহলে পানিতে নেমে পেশি জমে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।
সাঁতার কাটার জন্য হালকা পোশাক পরিধান করতে হবে।
সাঁতারের জন্য যে সব জিনিষের প্রয়োজন :
সাঁতার পোশাক
লাইফ জ্যাকেট
সুইমিং ক্যাপ (চুলের সুরক্ষার জন্য)
ইয়ার প্লাগ (কানে পানি ঢোকা ঠেকানোর জন্য)।
সুতরাং জীবনের জন্য সাঁতার। দেহের সুস্থতার জন্য সাঁতার। আসুন সাঁতার শিখে জীবন বাঁচাই। দেহের সুস্থতা এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করি। সমৃদ্ধ, সুখী ও নিরাপদ জীবন গড়ে তুলি।