রূপক আইচ, মাগুরাবার্তা
মাগুরা পৌরসভার দোয়ারপাড়-কারিকরপাড়া এলাকার শত বছরের পুরাতন একটি খাল দখল হয়ে যাওয়ার উপক্রমে ওই এলাকার কয়েক হাজার জনগণ স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকারে ব্যাপক জনভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত পৌরসভা কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় জনগণের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্লট বিক্রেতাদের কাছে খালের অর্ধেক বুঝিয়ে দেয়ায় ও নানা রকমের নির্মাণসামগ্রী খালের ভেতরে ফেলায় দাসেদের খাল নামে পরিচিত ওই প্রবহমান জলাধারটি এখন নিজেই জীবন সংশয়ে রয়েছে। স্থানীয় ভূমি ব্যবসায়ী প্রশান্ত সাহা নামে এক ব্যক্তি প্লট আকারে জমি বিক্রি করতে গিয়ে খালটি কে দখল করে মেরে ফেলছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এ এলাকার বাসিন্দা খন্দকার সবুর হোসেন, পারভীন আক্তারসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন শহরের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজপাড়া, সাহাপাড়া, কেশবমোড়, জেলা পাড়া, নতুন বাজার, দোয়ার পাড়, কারিকরপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকার বৃষ্টির পানি ও বাড়িঘরে ব্যবহৃত পানি বিভিন্ন ড্রেনের মাধ্যমে এলাকার বৃহৎ জলাশয় ছোটদোয়া ও বডদোয়া হয়ে শত বছরের প্রাচীণ দাসেদের এই খাল দিয়ে নবগঙ্গা নদীতে গিয়ে পড়ে। যার ফলে এখানে দীর্ঘস্থায়ী কোন জলাবদ্ধতা এতদিন সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি ব্যবসায়ি প্রশান্ত সাহা তার জমি প্লট আকারে বিক্রি করতে গিয়ে ঐতিহ্যবাহী ওই খালটির একটি বড় অংশ প্লট ক্রেতাদেরকে জোর করে গছিয়ে দেন। ক্রেতারা বাধ্য হয়ে খালের ভেতরে নানাভাবে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংবাদও প্রচার হয়েছে। কিন্তু বিষয়টিকে থোরাই কেয়ার করে খালটি দখল অব্যহত রেখেছে ওই ভূমি দস্যুরা।ফলে ওই জায়গা থেকে পানি গতি একেবারেই স্থবির হয়ে গেছে। যার ফলে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে জনদূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
এ ব্যাপারে শহরের দোয়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা ইমন হোসেন, উজ্জ্বল বিশ্বাস, ইকবাল মিয়াসহ একাধিক বাসিন্দা জানান – দীর্ঘ বছর আমরা এ এলাকায় বাড়ি করে বসবাস করছি। কিন্তু বৃষ্টির পানির এত দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা কোনদিন দেখিনি। গত প্রায় এক মাস ধরে এখানে স্থায়ী জলাবদ্ধতার তৈরি হয়েছে। আগে দোয়া থেকে উল্লেখিত খালটি হয়ে পানি দ্রুত বেরিয়ে যেত। সম্প্রতি পানি যাওয়ার পথ সংকুচিত হয়ে যাওয়াতে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের বাড়ি ঘরে এখন হাঁটু পর্যন্ত ময়লা পানি। বাড়িতে আসার রাস্তাটির উপরও দীর্ঘদিন ধরে পানি জমে রয়েছে। এ কারণে অনেক ভাড়াটে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। পৌরসভাকে হাজার হাজার টাকা ট্যাক্স দিয়ে আমরা কোন ধরনের পৌর নাগরিক সেবাই পাচ্ছিনা। তারা দাবী করেন এখানে পাকা রাস্তা নেই, ড্রেন নেই, পানি নেই এমনকি দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতায় আটকে থাকলেও দেখার কেউ নেই।
এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান, পারভিন আক্তার, জ্যোতি রানী দাস সহ একাধিক ব্যক্তি জানান – আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি দাসেদের এ খাল থেকে পানি বেরিয়ে শহর পরিস্কার থাকে। খালটি আগে অনেক চওড়া ছিল এখন দখলের ফলে ক্রমে ক্রমে আরও বেশী সরু হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি পাশের জমি প্লট আকারে বিক্রি করে ফেলার সময় ইট বালু ফেলে পানি বের হওয়ার পথ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়াতে এখানকার পানি জমে পচে গেছে। যার ফলে এই পানির ভেতর দিয়ে হাঁটাচলা করলেই শরীরে চর্মরোগসহ নানা রকম রোগ ব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে। সেইসঙ্গে বদ্ধ পানিতে প্রচুর মশা ও তৈরি হচ্ছে। এতে এলাকার ঘরে ঘরে রোগব্যাধি লেগেই আছে।Magura Khal Dokhol News Pic 2
এ প্রসঙ্গে মাগুরা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশুতোষ সাহা জানান- পানি বের হওয়ার জন্য আমি নিজে গিয়ে খাল পরিস্কার করার ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতিমধ্যে খালের ভেতরে দখল করে কাজ করা বন্ধ করা হয়েছে।খালের ভেতরে কোন নির্মাণ সামগ্রী ফেলে থাকলে আমি পরিস্কার করার ব্যবস্থা নেব।
মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসিন কবির জানান- খাল দখল যেন না হয় এবং এটি যেন প্রবহমান থাকে সে জন্য আমরা ব্যবস্থা নেব। আমি অচিরেই খালটি পরিদর্শণ করে উদ্ধারের ব্যবস্থা করবো।

রূপক /মাগুরা /৯ আগস্ট ২০২১