বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
এ যেন ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। করোনার এই মহামারির সময়ে এমনিতেই কাজকর্ম কম। বাড়ি বাড়ি কাজ করা স্ত্রীও কর্মহীন। এ সময় একমাত্র অবলম্বন অটো রিক্সাটি চুরি হয়ে যাওয়ায় মাগুরার দরিমাগুরা এলাকার রিক্সা চালক ওবায়দুল হোসেন অদলত (৬৫) এর সংসারে নেমে এসেছে ঘন অন্ধকার। গত রবিবার একমাত্র উপার্জনের উৎস্য সে রিক্সাটিও চুরি হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সংসার চালাতে অথৈ সাগরে পড়েছেন ওবায়দুল মিয়া ও তার পরিবার। Magura Riksha Poolar obaidur pic 2
ওবায়দুল মিয়া জানান- স্ত্রী সিতারা বেগম এর মানুষের বাড়ি বাড়ি ঝি এর কাজ বন্ধ। স্ত্রী আর বাক প্রতিবন্ধী নাতনি মাহমুদাকে নিয়ে রিক্সা চালিয়ে কোনমতে সংসার চলছিল তার। লকডাউনের ফাঁকে ফাঁকে যা আয় করতেন তা দিয়ে কোনমতে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলছিল। গত রবিবার সকালে শহরের দরি মাগুরা কারিকর পাড়া এলাকার নিজ বাড়ির সামনে রিক্সা গ্যারাজে রেখে বাড়ির মধ্যে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই চোরের দল একমাত্র রিক্সাটি নিয়ে কৌশলে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুজি করেও রিক্সাটি না পেয়ে তিনি মাগুরা সদর থানায় একটি জিডি করেছেন। রিক্সা হারিয়ে ওবায়দুল মিয়া এখন পাগল প্রায়।
ওবায়দুল জানান- দুটি ছেলের মধ্যে বড়জন মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে প্রায় ৬ বছর ধরে নিরুদ্দেশ এবং ছোটছেলে ঢাকায় ছোটখাট কাজ করে। সে বাড়ির কোন খোঁজ খবর রাখে না। ৩ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন সবাই অত্যন্ত গরীব। এর মধ্যে আবার মেঝ মেয়ের প্রতিবন্ধী কন্যা মাহমুদাকে (১০) তাদের ঘাড়ে ফেলে রেখে গেছে। শত কষ্টের মাঝেও কারও কাছে হাত পেতে কিছু চাইতে যেন না হয় সেজন্যই এই বৃদ্ধ বয়সে ধারদেনা করে একটি রিক্সা কিনে তা চালিয়ে সামান্য যা আয় হতো তাই দিয়ে কোনমতে দিনাতিপাত করছিলেন তিনি। কিন্তু রিক্সা চুরির পর এখন তার মাথায় যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়েছে। তিনি বলেন- রিক্সা হারিয়ে এখন আমি খাবো কি, দেনা শোধ করবো কি করে? কোন সহৃদয় ব্যক্তি যদি আমাকে একটি রিক্সা কিনে দিতেন হাতলে হয়তো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারতাম। অন্যথায় ভিক্ষা করা কিংবা স্বপরিবারে মরে যাওয়া ছাড়া আমার এখন কোন উপায় নেই।

রূপক / মাগুরা /২০ জুলাই ২০২১

১ thought on “উপার্জনের শেষ সম্বল রিক্সাটি চুরি গেল ; অথৈ সাগরে বৃদ্ধ অদলত

Comments are closed.