স্টাফ রিপোর্টার,মাগুরাবার্তা
চাকুরির পেছনে না ছুটে ৫ বছরের ব্যবধানে এখন নিজেই বেকারদের চাকরি দেন মাগুরা সদরের হাজরাপুর গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত কৃষক চাষি রবিউল ইসলাম। কৃষি বিষয়ে উচ্চ ডিগ্রী শেষে বন্ধুরা যখন চাকুরির জন্য দৌড়ঝাপ এ ব্যস্ত। রবিউল তখন কাদা মেখে পুরোদস্তুর কৃষক।
এলাকায় তিনি চাষী রবিউল ইসলাম বা চাষী ভাই নামে পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে এলাকার গন্ডি ছাড়িয়ে এখন তার পরিচিতি সারাদেশে। এমনকি সারা বিশ্বে। কৃষি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা শেষ করার পর যিনি পুরো পুরি কৃষি কাজকেই নিজের পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। গত পাঁচ বছরে বাবার নার্সারী কে করেছেন চারগুন বড় । নার্সারী ব্যবসাতে যেখানে ব্যবহার হয়েছিল ৫ একর জমি। এখন সমন্বিত ফল চাষে ব্যবহার করছেন প্রায় ২০ একর জমি। যার বেশির ভাগ আলাইপর পুব পাড়া এবং ইখাখাদা বাজারের পাশে। চাষী হিসাবে নাম রবিউলের ভাল লাগে।
চাষী রবিউল ইসলাম জানান,আমার খারাপ লাগে না। পড়ালেখা শেষ করার পর এই কাজে আসতে আমাকে অনুপ্রেরনা দিয়েছেন আমার বাবা। বাবা বলেন,চাকুরি করে তুমি একটা নির্দিষ্ট বেতন পাবে,কিন্তু কৃষি কাজে তুমি নিজে তো স্বাবলম্বি হবেই,সাথে অন্যদের কমসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারবে। এত তোমার জীবনটি উপভোগ্য হয়ে উঠবে। বাবার অনুপ্রেরনা হয়ে গেলাম কৃষক। এখন আমার ২০ একর জমিতে রয়েছে পেয়ারা থেকে মালটা, বড়ই, নালিম, কমলা, লিচু থেকে আম চাষ। এক জায়গায় এগুলো নেই। যেখানে জমি লিজ নিতে পেরেছি সেখানেই চাষবাস শুরু করেছি।
রবিউল ইসলামে বাবা শরিফুল ইসলাম বলেন,ছেলের পড়াশোনা শেষ হলে বাড়িতে সবসময় ভাবতো কি দিয়ে কি করবে। আমি বললাম কৃষি কাজ করো। কারন আমি কৃষক পরিবারের। আধুনিক জ্ঞান দিয়ে কুষি কাজ করলে তা সফল হবেই।
চাষী রবিউল ইসলাম আরো জানান,এ বছর পেয়ারা বিক্রি করেছেন ১৬ লক্ষ টাকার। তিন জাতের বরই বিক্রি করেছেন ৭ লক্ষ টাকার। সেই সাথে লিচু এসেছে। ছোট লিচু থাকতেই দাম পেয়ে যাবেন। গত বছর আম্পানের কারনে লস থাকলেও এ বছর আশা করছি লাভ উঠিয়ে নিবো। দু বছর আগে শুধু লিছুই বিক্রি করেছি ২০ লক্ষ টাকার। তিনি আরও বলেন,আমার সাথে অনেকে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ফেসবুকে যোগাযোগ করে। তারাও অনেকে চাষে যুক্ত হয়েছে। এবং তারাও আমার মত উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন। আমার দেখাদেখি অনেক শিক্ষিত বেকার প্রায় প্রতিদিনই আমার বাগানগুলো দেখতে আসছেন। আমার থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।
তার এই কৃষির প্রতি ভালোবসাকে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সুশান্ত কুমার প্রমানিক বলেন, পড়াশুনা শেষ করে চাকুরির পিছনে না ছুটে নিজে উদ্দ্যক্তা হয়ে যে ভালো কিছুর করা যায় মাগুরার চাষি রবিউল তার প্রামাণ। তিনি নিজে কৃষি কাজ করছেন পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানের নতুন চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।তার মত শিক্ষিত যুবকরা যদি চাকুরির পিছে না ছুটে নিজেদের মেধাটাকে কৃষির পিছে কাজে লাগায় তবে এ দেশের কৃষি আরো অনেকদুর এগিয়ে যাবে।

মাগুরা/ ৬ এপ্রিল ২০২১