বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম   
মাগুরার স্টিফেন হকিং খ্যাত বিষ্ময় বালক ফাহিম-উল করিম আর নেই। জটিল ডিএমডি রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ার পরও নিজ বাড়িতে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে লাখ ডলার আয়ে স্বাবলম্বী হওয়া ফাহিম  বুধবার (১১ নভেম্বর) রাত পৌনে ১১ টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান ।  ২২ বছর বয়সি  ফাহিম-উল করিমের বাসা মাগুরা শহরের মোল্যা পাড়া এলাকায়। বুধবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফরিদপুর নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান তিনি ডুচেনে মাসকিউলার ডিসট্রফি (ডিএমডি) রোগে ভুগছিলেন।

প্রচন্ড মেধা আর ধীশক্তির কারণে মাগুরায় বন্ধু ও স্বজনরা তাকে মাগুরার স্টিফেন হকিং বলে সম্বোধন করতেন। ১৪ বছর বয়স থেকে ফাহিম বিরল এক রোগে আক্রান্ত হলে তার গোটা শরীর অচল হয়ে পড়ে।  শুধু মাথা ও ডান হাতের তিনটি সচল আঙুল নিয়ে নিজ গুনে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে  মাসে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা আয় করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনেন ফাহিম। শুধু তাই নয়, নিজের আয় দিয়ে মাগুরা শহরে জমি কিনে বাড়ি করে মা-বাবার আজীবনের স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি।  ফাহিমের কাজে খুশি হয়ে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তাকে একটি ল্যাপটপ উপহার দেন। ফাহিম প্রতিবন্ধকতা জয় করে মেধার অদম্য শক্তি কাজে লাগিয়ে সফলতা অর্জন করেছে  অনেক যুবকের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হন।

ফাহিমের বাবা রেজাউল করিম একটি বেসরকারি কোম্পানির বিপণন কর্মী। তিনি জানান, মাগুরা শহরে ভাড়া বাসায় সন্তান, স্ত্রী, ফাহিমসহ দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি বসবাস করে আসছিলেন। টানাটানির সংসার হলেও ভালোই কাটছিল তাদের দিন। একমাত্র ছেলে ফাহিম ২০১২ সালে জেএসসি পরীক্ষার আগে হঠাৎ শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে।

দৃঢ় মনোবল, প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও মেধা কাজে লাগিয়ে ফাহিম  সফল ফ্রিল্যান্সার হন। ২০১৬ সালে অন্যের সহযোগিতা, প্রাইভেট পড়িয়ে জমানো টাকা ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তিনি একটি ল্যাপটপ কেনেন। এরপর ইন্টারনেটে গুগল ও ইউটিউব ঘেঁটে বিভিন্ন কাজ শিখে নেন। ২০১৭ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন মার্কেটে ফাইবারে গিগ খুলে কাজ খুঁজতে থাকেন। ক’দিনের মধ্যে পাঁচ ডলারের একটি কাজ পেয়ে যান। অল্প সময়ের মধ্যে সফলভাবে কাজটি করার জন্য বায়ার তাকে আরও ১০ ডলার বোনাস দেন। এর পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ফাহিমকে। প্রথমে ব্যানার ও বিজনেস কার্ড দিয়ে কাজ শুরু করলেও তিনি এখন সব ধরনের কাজই করে থাকেন।

কাজের দক্ষতার কারণে  জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সার  ফাহিম বিশ্বের ৩০ থেকে ৩৫টি দেশের কাজ করতেন।  অর্ডার এত বেশি যে, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সময় দিলেও কাজ শেষ হয় না। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে গত চার বছর ধরে ফাহিম মাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে আয় করেছেন। তার উপার্জনে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরে। বোনের লেখাপড়া চলছিল। আগে ভাড়া বাসায় থাকলেও এখন শহরের মোল্লাপাড়ায় জমি কিনে বাড়ি করেন। বর্তমানে সেই বাড়িতে ফাহিম পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করতেন।

ফাহিমের বাবা রেজাউল করিম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তার সব শেষ হয়ে হেছে। দেশের বাইরে নিয়ে ফাহিমকে উন্নত চিকিৎসার করাতে পারলে পুরোপুরি সুস্থ না হলেও শারীরিক অবস্থা কিছুটা হলেও ভালে হতো। অর্থের অভাবে তিনি তা পারেন নি।

রূপক /মাগুরা  /১২ নভেম্বর ২০২০