বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
মাগুরার শালিখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তানভীর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্চাচারিতার বিরুদ্ধে একাধিক জনপ্রতিনিধির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলার আড়পাড়া ডাকবাংলোর হল রুমে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীদের স্বাক্ষাতকার গ্রহণ করেন খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) সৈয়দ রবিউল ইসলাম। এ সময়ে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মোঃ মাহাবুবুর রহমান উপপরিচালক স্থানীয় সরকার বিভাগ মাগুরা। উল্লেখ্য, গত ২৪/০৬/২০২০ তারিখে শালিখা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগন ও উপজেলা পরিষদের দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে  মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, জনপ্রশাশন মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা বরাবর অভিযোগ পত্র পাঠান। বদলী পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য  মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. শ্রী বীরেন শিকদার ওই আবেদনে সুপারিশ করেন। অভিযোগ পত্রে উল্লেখ রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের না জানিয়ে গ্রাম পুলিশ/চৌকিদারদের দিয়ে বয়স্ক ভাতা, জমি আছে ঘর নাই প্রকল্প সহ বিভিন্ন প্রকল্পের উপকার ভোগীর তালিকা তৈরি করেছেন, চেয়ারম্যান মেম্বরদের সাথে খারাপ আচারন ও মানহানিকর মন্তব্য করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তানভীর রহমান। কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমনের শুরুতে জনপ্রতিনিধিদের সাথে কোন পরামর্শ ছাড়াই সেচ্ছাসেবক গঠনের নামে বিএনপি/জামাত-শিবীরদের দিয়ে সেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন তিনি। শতখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান বলেন অত্র ইউনিয়নের ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের একাধিক নাশকতা মামলার আসামী শিবির ক্যাডার ছয়ঘরিয়া গ্রামের বনে আমিন,সুমন পাটোয়ারী, নজরুল ইসলাম ও রফিকুলের নেতৃত্বে সূর্যসৈনিক শতখালী ইউনিয়ন নামে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে। তালখড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজউদ্দীন মন্ডল জানান অত্র ইউনিয়নের ছাত্রদল নেতা পাথরঘাটা গ্রামের খালিদ হাসান,পিয়ারপুরের একাধিক নাশকতা মামলার আসামী রুবেলের সহ একাধিক শিবির ও ছাত্রদল নেতাদের সমন্বয়ে সূর্যসৈনিক তালখড়ি ইউনিয়ন নামে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে। আড়পাড়া ইউনিয়নের বিএনপি নেতা একাধিক নাশকতা মামলার আসামী নয়ন মুন্সীর ভাগ্নে ছাত্রদল নেতা পাভেল মুন্সি সহ একাধিক শিবির ও ছাত্রদলের নেতাদের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেন। একই ভাবে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের নামে বিএনপি- জামাতকেই তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সিএ মোঃ জহির রায়হান একই উপজেলার কাতলী গ্রামের বাসিন্দা এবং ঘৃন্ন রাজাকারের সন্তান । তাকে দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ভয় ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগে জানা যায়। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে অসহায় ও কর্মহীন মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার নামে বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা চাঁদা বাজি করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। শালিখা বাসীকে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক বলে মন্তব্য করেন অভিযুক্ত নির্বাহী কর্মকর্তা। এছাড়াও ভুয়া বিলভাউচারের মাধ্যমে বিল উত্তোলন, ওভারল্যাপিং এর মাধ্যমে পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পের বিল উত্তোলন এবং নির্বাহী কর্মকর্তার সেচ্ছাচারির সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করলেই তিনি নানা উপায়ে হয়রানী,হুমকী ও ভয় ভীতি প্রদর্শন করেন বলে অভিযোগকারী চেয়ারম্যানগন জানান। ফলে বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় শালিখা আড়পাড়া ডাকবাংলো হল রুমে অভিযোগকারী চেয়্যারম্যানগন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে তদন্ত করেন। ইউপি চেয়ারম্যান শ্রী বিমলেন্দু শিকদার, মোঃ আরজ আলী বিশ্বাস,মোঃ বক্তিয়ার উদ্দিন লস্কর, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল ইসলাম, মহিলা ভাইস্ চেয়ারম্যান জেসমিন আক্তার শাবানাসহ অভিযোগকারী চেয়ারম্যানগন বলেন আমাদের একটাই দাবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আইনগত শাস্তি ও বদলীর দাবি জানাই। অন্যথায় গণ আন্দোলন শুরু হবে বলে তারা জানান।
অভিযোগর বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তানভীর রহমান বলেন, চেয়ারম্যানদের সাথে বনিবনা না হওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমুলক অভিযোগ করেছে।
তদন্তকারি কর্মকর্তা খুলনা বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার জানান- অভিযোগের বিষয়ে শালিখায় এসে অভিযোগকারী চেয়ারম্যানদের ডেকে পর্যায়ক্রমে অভিযোগ শুনেছি। এব্যাপারে তাদের সাথে মতবিনিময়ও করেছি। এ বিষয়ে পরবর্তিতে যেকোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

মাগুরা/ ৮ জুলাই ২০২০