মাগুরার প্রিয় মুখ, সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রিয় শিক্ষক খান শফিউল্লাহ ও তার ৩ সহকর্মী রবিবার (১৭ ডিসেম্বর ১৭) বেরিয়েছেন নেপাল, ভুটান ও ভারত ভ্রমণে। তাঁদের এই ভ্রমণের সংক্ষিপ্তসার তিনি প্রতিদিন জানাচ্ছেন মাগুরাবার্তার পাঠকদের। প্রিয় শিক্ষকের ভ্রমণে সঙ্গী হবো আমরা। মাগুরাবার্তা পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি শুভ কামনা। নেপাল থেকে শুক্রবার পৌঁছেছেন ভূটান। আজ ভুটান থেকে জানিয়েছেন ৯ম দিনের ভ্রমণ বৃত্তান্ত…..
খান শফিউল্লাহ….
২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭। সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। হেটেল নেমো থেকে শরু হবে আমাদের আজকের যাত্রা। থিম্পুতে দুদিনের ট্যুর যাত্রায় সঙ্গী থাকবেন ট্যাক্সি ড্রাইভার উগেন। উগেন দা অসাধারণ ভালো মানুষ। হোটেল থেকে সকাল ৯:০০ টায় বের হলাম। গত রাতে থিম্পুর তাপমাত্রা ছিলো মাইনাস ৪ ডিগ্রি। সকালে মাইনাম ১ ডিগ্রি। আজকে আমাদের গন্তব্য পুনাখা। ভুটানের একটি অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। পুনাখা যেতে রুট পার্মিট নিতে হয়। থিম্পু ইমিগ্রেশন অফিসে কাগজপত্ জমা দিয়ে চলে এলাম থিম্পু বুদ্ধা পয়েন্ট পরিদর্শনে। বুদ্ধা পয়েন্ট থিম্পুর প্রধান আকর্ষণ। পাহড়ের উপর স্থাপিত গৌতম বুদ্ধের বিশালাকার মূর্তিটির উচ্চতা ১৫৪ ফিট। মূর্তিটিকে থিম্পু শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে দেখা যায়। দেখলে মনে হয় যেন থিম্পু তথা গোটা ভুটানের আশির্বাদ কামনায় বুদ্ধ সদা ধ্যানমগ্ন। এটি পৃথিবীর অন্যতম সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মূর্তি। মূর্তিটি ব্রঞ্জের তৈরি এবং এর গায়ে স্বর্ণের প্রলেপ লাগানো। বুদ্ধা পয়েন্টে প্রধান মূর্তির সাথে আরো ১ লক্ষ ২৫ হাজার মূর্তি রয়েছে। অষ্টম শতাব্দীতে বুদ্ধা পয়েন্ট স্থাপিত হয়। বুদ্ধা পয়েন্ট থেকে আমরা গেলাম ফাজোডিং মনস্ট্রি পরিদর্শনে। এর পর ভুটান রাজার বাসভবন এবং মন্ত্রীপাড়া দেখে থিম্পু ইমিগ্রেশন অফিস থেকে রুট পার্মিট নিয়ে রওনা হলাম পুনাখার দিকে। থিম্পু থেকে পুনাখার দূরত্ব ৭৬ কিলোমিটার। পুনাখা যাবার পথে থিম্পু থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দেখা মেলে দোচুলা পাস স্তুপা। এখানে মোট ১০৮ টি স্তুপা রয়েছে। এ স্থান থেকে হিমালেরে দঙ্কর পিনচুং চূড়া দেখতে বড়ই সুন্দর। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে দোচুলা পাস এর উচ্চতা ১০ হাজার ফিট। বেলা ২:৩০ এ পুনাখা পৌঁছে লিংগা হোটেলে মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে সাইট সিং এ বের হলাম। পুনাখা ডিজং এবং পচু (নদ) মচু (নদী) নদী এখানকার বিখ্যাত দুটি পর্যটন স্থান। এ ছাড়াও পচু নদীর ওপর রয়েছে বিখ্যাত কং জম (সাসপেইনশন ব্রিজ) সেতু। পুনাখা ভুটানের প্রাচীন রাজধানী। পুনাখা ডিজং ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ভুটানের প্রশাসনিক কার্যালয় হিসেবে চালু ছিলো। এটি নির্মিত হয় ১৬৩৭ সালে। ভুটানি ভাষায় এ ডিজংকে বলা হয় Pungtang Dechen Photrang Dzong (the place of great happiness or bliss)। পুনাখা ডিজং ভুটানের দুটি বিখ্যাত নদী পচু এবং মচু দ্বারা বেষ্টিত। এ দুটি নদী একত্রে এবং একই স্রোতধারায় বয়ে চলেছে অবিরাম। পচু নদীর ওপর নির্মিত রোমাঞ্চকর সেতু (সাসপেইনশন ব্রিজ) পুনাখার আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। বিকাল ৫:০০ টায় পুনাখা থেকে থিম্পুর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ফেরার পথে দোচুলা পাসের তাপমাত্রা পেলাম মাইনাস ২ ডিগ্রি। রাস্তায় তুষার পড়তে শুরু করেছে। থিম্পু পৌঁছে আমরা আমাদের গাইড উগেন দার কাবিসা ভিলেজের বেগানা পাড়ার বাড়িতে গেলাম। বৌদি এবং উগেন দার উষ্ণ আতিথেয়তার পরশ নিয়ে শেষ করলাম আমাদের আজকের যাত্রা।