মাগুরার প্রিয় মুখ, সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রিয় শিক্ষক খান শফিউল্লাহ ও তার ৩ সহকর্মী রবিবার (১৭ ডিসেম্বর ১৭) বেরিয়েছেন নেপাল, ভুটান ও ভারত ভ্রমণে। তাঁদের এই ভ্রমণের সংক্ষিপ্তসার তিনি প্রতিদিন জানাচ্ছেন মাগুরাবার্তার পাঠকদের। প্রিয় শিক্ষকের ভ্রমণে সঙ্গী হবো আমরা। মাগুরাবার্তা পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি শুভ কামনা। নেপাল থেকে শুক্রবার পৌঁছেছেন ভূটান। আজ ভুটান থেকে জানিয়েছেন ৭ম দিনের ভ্রমণ বৃত্তান্ত…..
খান শফিউল্লাহ পারো। ভুটানে পাহাড়ঘেরা একটি ছোট্ট শহর। ভুটানের একমাত্র বিমানবন্দরটি এখানে অবস্থিত। চারদিকে পাহাড়। তার মাঝে বিমানবন্দর। পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম ঝুকিপূর্ণ বিমানবন্দর। পাহাড়ের মাঝ দিয়ে একেবেকে বিমান ওঠানামা করে। বিমানবন্দরের পাশ দিয়ে উত্তর দক্ষিনে বয়ে চলেছে স্রোতস্বিনী পারো রিভার। রাজধানী থিম্পু থেকে পারোর দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। আমরা যে হোটেলে উঠেছি তার নাম হেটেল পারো। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭। আজকে পারো হোটেল থেকেই শুরু হবে আমাদের ভুটান পরিদর্শ যাত্রা। সকাল ৯:০০ টায় নাস্তা সেরে নিলাম। পারো থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে চিলালাপাস। সমভূমি থেকে এর উচ্চতা ৩,৯৮৮ মিটার। অর্থাৎ প্রায় ১২ হাজার ফিট। এখানেই আমাদের প্রথম গন্তব্য। ট্যক্সি ড্রাইভার কারমা অরফে আয়রনম্যান দুমা (পান) মুখে পুরে আমাদের নিয়ে যাত্রা করলো চিলালাপাসের উদ্দেশ্যে। পাহাড়ি সর্পিল রাস্তা। U আকৃতির মোড় কোথাও কোথাও প্রায় O এর আকার ধারণ করেছে। রাস্তার পাশে সাইনবোর্ডে লেখা Death vally। অর্থাৎ আমরা চলেছি মৃত্যু উপত্যকার দিকে। নীরব নিস্তব্ধ গভীর পাহাড়ী বনের মাঝ দিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি চিলালাপাসের দিকে। যতই ওপরে উঠছি ততই তাপমাত্রা কমছে। তাপমাত্রা এক সময় শূণ্যে নেমে গেলো। তুষার এখানে পাহাড়কে সাদা চাদরে ঢেকে রেখেছে। চিলালাপাসের দিকে যেতে যেতে সুন্দর কিছু সাইনবোর্ড চোখে পড়লো। যার একটি এরকম- Alert today, Alive tomorrow দেড় ঘন্টা চলার পর চিলালাপাস চূড়ায় পৌঁছলাম।চূড়ায় আজকের তাপমাত্রা শূণ্য ডিগ্রির উপরে ছিলো। চূড়া থেকে প্রায় ৩০০ ফিট উপরে একটি মোবাইল টাওয়ার আছে। সেখান থেকে হিমালয় খুব পরিষ্কার দেখা যায়। সাহস করে উঠে গেলাম সেখানে। পিছন ফিরে দেখি দেলোয়ার স্যার আমার সাথে আছেন। দুজনে মিলে ছবি তুললাম। নিচে নেমে দেখি অন্য দুজন তৃষ্ণায় ওষ্ঠাগত। এবার ডেথ ভ্যালি থেকে জীবনটাকে হাতের মুঠোয় পুরে আবার চলতে শুরু করলাম বরফ আচ্ছাদিত আকাবাকা পথ ধরে পারো শহরে। মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে বেরিয়ে পড়লাম পারো শহরের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রসমুহের মোহনীয়তা উপোভোগ করতে। কিচু মনস্ট্রি, ধুনচি লগং টেম্পল, ডিজং মনস্ট্রি পরিদর্শনের পর আমরা গেলাম বিখ্যাত পারো মিউজিয়মে। ভারত সরকারের অর্থায়নে নির্মিত পারো মিউজিয়াম ২৯ অক্টোবর, ২০০৮ সালে ভুটান রাজতন্ত্রের ৫ম রাজার রাজ্য অভিষেকের শতবার্ষিকী উৎসবে উদ্বোধন করা হয়। এবার এলাম পারো নদীর পাড়ে। স্বেত পাথরের বুকের উপর দিয়ে প্রবল বেগে ছুটে চলেছে রূপালী জলের স্রতধারা। সেই সৌন্দর্য উপভোগ করেই শেষ হলো আমাদের আজকের দিনলিপি।