বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
সম্প্রতি মাগুরায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে বেশ কিছু বড় ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্কুল কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে ঢাকা থেকে বড় বড় শিল্পীদের আমন্ত্রন জানিয়ে জমকালো আতশ বাজি ফুটিয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করে এসব অনুষ্ঠানে হাজারো দর্শকের সমাগম হয়। অনুষ্ঠানের জন্য খরচ করা হয় লাখ লাখ টাকা বলে আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে। একইভাবে জেলা শহরে কিংবা উপজেলায় বেশ কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেখা গেছে উল্টোচিত্র। স্থানীয় শিল্পীদের সম্মানি তো দুরের কথা যাতায়াত ভাড়াও দেয়া হয়না এসব অনুষ্ঠানে বলে শিল্পীরা অভিযোগ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিল্পী অনুযোগ করেছেন। আমরা শিল্পী। জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমাদের নুন্যতম মূল্যায়ন করা হয় না। অনুষ্ঠানগুলিতে নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে আমাদের যেতে হয়। গান গেয়ে আবার নিজের খরচেই বাড়ি ফিরতে হয়। অথচ এ শহরেই লাখ লাখ টাকা খরচ করে বাইরে থেকে শিল্পী আনা হয়। তাদেরকে দেয়া হয় মোটা অংকের সম্মানি। কিন্তু জেলার শিল্পীদের যদি সম্মান জানানো না হয়। তাহলে ভবিষ্যতের জাতীয় মানের শিল্পী তৈরী হবে কিভাবে ?সব জায়গাতেই বাজেট থাকে শুধু শিল্পীদের বেলায় বাজেট ফুরিয়ে যায়।

অথচ স্থানীয় পর্যায়ের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড অধিকাংশ সময় স্থানীয় শিল্পীরাই পালন করে থাকেন। এমনকি বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামেও শিল্পীদেরই সবার আগে থাকার ইতিহাস রয়েছে এখানে।  সংস্কৃতি অঙ্গন নিয়ে শিল্পীদের রয়েছে নানা ক্ষোভ ও হতাশা।বিষম-নয়না-2-1

এ ধরনের একটি লেখা সম্প্রতি প্রত্যয় মাগুরা (Prottoy Magura) নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে  তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যয়ের লেখাটি এখানে তুলে ধরা হলো।

মাগুরার সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও কিছু কথা :

অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হয় যে, যাদের ওপর সাংস্কৃতি অঙ্গনের দেখভাল করার কথা, তারা এর বিন্দুমাত্রও করেন না ।
এর কিছু ছোট্ট উদাহরন আমরা এখানে উল্লেখ করবো –
১। সম্প্রতি প্রয়াত হোলেন, মাগুরার শ্রেষ্ঠ নাট্য অভিনেতা, জনাব কামরুল হুদা নিহার। নাট্য অভিনয়ে যার কোন প্রতিদ্বন্দি ছিল বলে আমরা মনে করিনা। অথচ সরকারি পর্যায়ে তার ভাগ্যে কোন সম্মাননা জোটেনি। কিছু দালাল শ্রেনীর শিল্পী সুকৌশলে সেটা তাদের পক্ষে করে নিয়েছে।
২। যখনই বড় কোন বাজেটের অনুষ্ঠান হয় তখন বিপুল অর্থের
বাজেটে ঢাকা থেকে শিল্পী আনা হয় আর যখন কোন বাজেট থাকেনা, তখন ফ্রী অনুষ্ঠানের জন্য স্হানীয় শিল্পীদের ডাক পড়ে।

৩। বেশ কিছু বছর আগের কথা। জেলার শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসাবে একজনকে নির্বাচন করা হলো। কিন্তু আমাদের জানামতে তিনি শুধুমাত্র কিছু লোক গান লিখেছেন। উচিৎ ছিল এ বিষয়ে জনসাধারন কে অবহিত করে অথবা মাগুরার সক্রিয় শিল্প/সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সমুহের মাধ্যমে লেখা আহ্ববান করে যাচাই পূর্বক মনোনয়ন দেওয়া।

৪। কিছু সঙ্গীত অনুষ্ঠান মাগুরাতে হয় যার নুন্যতম ব্যায় ১০ লক্ষ টাকা। অথচ যারা মাগুরার সাংস্কৃতিক অঙ্গন কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের অনুষ্ঠান ব্যায়ের জন্য মাত্র ১০ হাজার টাকা যোগার কোরতে মানুষের দ্বারে ঘুরে তিন জোড়া চটি ক্ষয় হোয়ে যায়। শেষে সাউন্ড সিস্টেম আর ডেকরেটর মালিক দের নিকট দেনার দায়ে ওইসব উদ্যোক্তাদেরকে পালিয়ে বেড়াতে হয়।

৫। সর্বশেষ (সম্ভবত: ৯০এর দশকে) জেলা শিল্পকলা একাডেমী’র কার্যনির্বাহী কমিটির যে নির্বাচন হয়েছিল সেবার আমরা দেখেছিলাম মজার কিছু বিষয়। যথারিতি মাগুরার কিছু কথিত সমাজ সেবক ও শিল্প অনুরাগী ব্যক্তি নির্বাচনের আগে প্রতিদিন শিল্পকলাতে নিয়মিত হাজিরা দিতেন আর মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে শিল্পী দের গান শুনে বাহবা দিতেন। তাদের সম্পর্কে পরবর্তী তে খোঁজ নিয়ে আমরা জানতে পারি যে কোন সামাজিক বা সাংস্কৃতিক কাজে ১০টি টাকাও তারা চাঁদা দেননি।

জানি আমাদের এই কথা গুলো অনেককেই পিড়া দেবে কিন্তু শিল্পীদের মনের কষ্টের কথা গুলো তাদের ক্ষোভের বিষয় গুলো তাদের পক্ষ থেকে তুলে ধরতেই হোলো।

 

 

রূপক আইচ/ মাগুরা/ ২১ ডিসেম্বর ১৭