বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
লোকলজ্জার ভয়ে সময়মত চিকিৎসা নিতে না পারা ও ধর্ষকের পক্ষ থেকে ক্রমাগত হুমকি-ধমকি দিয়ে মানসিক চাপের কারণে ধর্ষণের শিকার হয়ে মা হতে যাওয়া মাগুরার এক কিশোরী হাসপাতালে মৃত্য ঝুঁকিতে দিন কাটাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে প্রচন্ড খিচুনি ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে  মাগুরার ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয় ওই কিশোরী। পরে তাকে গাইনি ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। মাগুরা সদর উপজেলার সাংদা লক্ষিপুর গ্রামে স্বামী পরিত্যাক্তা এক গার্মেন্টস কর্মীর ৮ম শ্রেণী পড়–য়া মেয়ের সাথে এ ঘটনা ঘটেছে। পার্শ্ববর্তী গ্রাম ঝিনাইদহের দিঘির পাড়ের জনৈক তফছের মোল্যা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মেয়েটির মা।
মাগুরা সদর হাসপাতালের গাইনি কনসালটেন্ট শামসুন্নাহার লাইজু জানান- মাত্র ১৪ বছর বয়সে মা হতে যাওয়া মেয়েটিকে এ পর্যন্ত কোন গর্ভকালীন চিকিৎসা নেয়নি। ৯মাসের গর্ভবতী মেয়েটি ভিটামিনের অভাবে শারীরিক দুর্বলতা, সার্বক্ষণিক দুশ্চিন্তা ও একলামসিয়ার কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে আনা যাচ্ছে না। মেয়েটি ও তার পেটের সন্তান দুজনই জীবনহানির ঝুকির মধ্যে রয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
মেয়েটির স্বামী পরিত্যাক্তা মা জানান- দুই মেয়েকে মায়ের কাছে গ্রামের বাড়িতে রেখে তিনি ঢাকায় একটি গার্মেন্টেসে কাজ করেন। ৯ মাস আগে তার বাড়ির পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার দিঘিরপাড় গ্রামের তফছের মোল্যা নামে এক বিপতিœক ব্যক্তি মেয়েটিকে কৌশলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। এতে তার মেয়ে গর্ভবতী হয়ে পরে। এ ঘটনায় তফছের মোল্যা ও তার ২ সহযোগিকে আসামী করে ৫মাস আগে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার হয়ে তফছের মোল্যা ও তার সঙ্গীরা মাত্র ১৮দিন জেল খেটে গত ৫ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হয়ে আসে। এর পর থেকেই প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য তফছের ও তার লোকজন মামলা তুলে নেয়ার জন্য মেয়েটির মাকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে আসছে। এক পর্যায়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর তিনি মাগুরা সদর থানায় এ বিষয়ে একটি জিডি এন্ট্রি করেন। কিন্তু এতে কোন প্রতিকার হয়নি। উল্টো তফছের মোল্যার বংশের লোকজন দিনে রাতে তার বাড়ির উপর এসে অকথ্য ভাষায় গালাগাল, হুমকি ধমকিসহ তাকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। অন্যদিকে লোকলজ্জা ও অর্থাভাবে মেয়েকে ঠিকমত চিকিৎসাও দিতে পারেননি তিনি। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে মেয়েটি প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পরে। তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেয়ের করুন অবস্থায় ওই মা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি মমতাজ বেগম জানান- মেয়েটির চিকিৎসার জন্য মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক ভাবে কিছু সহায়তা দেয়া হয়েছে। যাদের কারণে মানসিক চাপে পড়ে মেয়েটি মৃত্য পথযাত্রী হয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন তিনি।
মাগুরা সদর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান- মেয়েটির মায়ের করা জিডি মোতাবেক আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। কোন প্রকার হুমকি ধমকি কিংবা নির্যাতনের প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রূপক /মাগুরা /২১ সেপ্টেম্বর ১৮