মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
‘বাজান জাড়ের (শীত) কাল চলে আসল। মাথার উপরের চালডা কেউ ঠিক করে দিলো না। নিজিও ঠিক করতি পারলাম না। চাল ছাড়া ঘরে কী টিহা যায়।’-বলছিলেন বৃদ্ধা আবেজান বেওয়া (৬৫)।
আবেজান বেওয়া থাকেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের মৌশা আশ্রয়ন প্রকল্পের সরকারের দেওয়া একটি ঘরে।
১৯৯৮ সালের এক নভেম্বর সেনাবাহিনীর ১২ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ানের ব্যবস্থাপনায় তৈরি আশ্রয়নের ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয়। এখানে ২৫টি দিনমজুর ভূমিহীন পরিবারের সাথে বাস করেন আবেজান বেওয়া।
একবছর আগে ঝড়ে আশ্রয়নের বেশ কয়েকটি ঘরের চাল উড়ে যায়। বৃদ্ধা আবেজানের ঘরটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরপর ঘরগুলো মেরামতের কোন সরকারি উদ্যোগ না নেওয়ায় অধিকাংশ পরিবার পাশের জায়গায় ঝুপড়ি ঘর তুলে, কেউ পলিথিন টানিয়ে কোন মতে মাথা গুঁজে আছেন। দরিদ্র ও দিনমজুর এসব লোকজনের ঘর মেরামতের সামর্থও নেই।
আবেজান বেওয়ার স্বামী শুকুর মোল্যা মারা গেছেন অনেক আগেই। পাশ্ববর্তি বড়রিয়া গ্রামে একসময় তার বাড়ি ছিল। স্বামী মারা যাওয়ার পর সামান্য জমাজমি প্রতিবেশিরা দখল করে নিয়ে যান। একমাত্র মেয়ে পারভীন ও জামাই নূর ইসলামকে নিয়ে মৌশা আশ্রয়নে চলে আসেন। জামাই নূর ইসলাম অন্যের কৃষি জমিতে শ্রমিকের কাজ করে সামান্য আয়েই কোনমেত চলে তাদের সংসার।
আশ্রয়নে আবেজানের নামে বরাদ্দ দেওয়া ঘরটি এখন বসবাসের অনুপযোগি। চাল ভেঙ্গে গেছে। ঘরের বেড়া খুলে গেছে। হু হু করে কনকনে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। শীতের সময় এই ঘরে বাস করা দায়।’
সরেজনি গিয়ে কথা হয় আবেজান বেওয়ার সাথে। তিনি মাগুরাবার্তাকে  জানান,‘ টাহা-পয়সা কহানে পাবো। খাতি পারিনে আর চাল তোলব ক্যামমাইয়ে। একজনের ঘাড়ের উপর বসে খাই। সরকার যদি আমার ঘরের চালডা তুলে দিত তালি শেষ কডা দিন এটটু আরামে থাকতি পারতাম।’magura-date-plant-picture-02
আশ্রয়নের বাসিন্দা ফসিয়ার রহমান (৫৫) ও আমিনুর রহমানসহ (৪৫) কয়েকজন মাগুরাবার্তাকে  জানান,‘দীর্ঘদিন সংস্কার না আশ্রয়নের একটি ঘরও বসবাসের উপযোগি নাই। এছাড়া বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যানিটেশনের অবস্থাও খারাপ। গত বছর ঝড়ে ভেঙে পড়া ঘরগুলো এখনো মেরামত করা হয়নি।’
মহম্মদপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) মিরাজ হোসেন খাঁন মাগুরাবার্তাকে  জানান,‘আমি নতুন এসেছি। খোঁজখবর নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’
মহম্মদপুর উপজেরা নির্বাহী অফিসার মো. শাহীন হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান,‘ আশ্রয়নবাসীর সমস্যা সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’

রূপক/শাহীন/৮ডিসেম্বর১৬