বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
মাগুরা জেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের তিন নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলের নেতা কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এতে নির্বাচনের হিসাব নিকাষে জটিলতা দেখা দিয়েছে। অন্য দলের কেউ নির্বাচনে না আসলেও নিজের দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে কঠিন লড়াইয়ের সামনে পড়েছেন দলীয় মনোনীত প্রার্থী।
দলীয় দায়িত্বশীল অন্তত পাঁচ জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থী হওয়া তিনজনের মধ্যে দুইজনই আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা। আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া প্রার্থী পংকজ কুমার কুন্ডু জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দলীয় সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও জেলা কমিটির ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্পাদক রানা আমীর ওসমান, দলের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী শ্রীপুরের শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কুতুব উল্লাহ হোসেন মিয়া কুটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে পঙ্কজ কুমার কুন্ডু ও রানা আমীর ওসমানের মধ্যে জোর লড়াই হবে বলে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে আভাস পাওয়া গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা কমিটির ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্পাদক রানা আমীর ওসমান মাগুরা -২ আসনের সাংসদ ও যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদারের অনুসারি হিসেবে পরিচিত। রানার চাচা আবু নাসের বাবলু জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। তারপক্ষে দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা নেপথ্যে কাজ করলেও তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি নন।
রানা আমীর ওসমান বলেন,‘জেলা পরিষদের নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হচ্ছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এ কারণে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী ও ভোটার আমার সাথে আছেন।’
অপরদিকে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া প্রার্থী পংকজ কুমার কুন্ডু জানান,‘ প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারি সাইফুজ্জামান শিখর, মাগুরা -১ আসনের সাংসদ মেজর জেলারেল (অব:) এ টি এম আব্দুল ওয়াহ্বা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তানজেল হোসন খানসহ দলের শীর্ষ নেতারা আমার সাথে আছেন। দল করলে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’
অন্যদিকে মাগুরার শ্রীপুরের শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কুতুব উল্লাহ হোসেন মিয়া কুটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কুটি মিয়া মুক্তিযুদ্ধে আকবর বাহিনীর প্রধান মরহুম আকবর হোসেনের ছেলে। স্পষ্টভাষি ও স্বচ্ছ ইমেজের জন্য তনি এলাকায় জনপ্রিয়। শ্রীপুরের অন্তত চারটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ভোটসহ অন্যান্য ইউনিয়নের বঞ্চিতরা তাকে ভোট দেবেন এবং তিনি বিজয়ী হবেন বলে তার অনুসারিরা দাবি করেছেন। mg-candidates
মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তানজেল হোসেন খান বলেন,‘যেসব নেতা ও জনপ্রতিনিধি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো হবে।’
২৮ ডিসেম্বর মাগুরায় জেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে জেলার ১৫টি কেন্দ্র অর্থাৎ সবকটি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করেছে পুলিশ প্রশাসন ।
মাগুরা পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলায় ১৫ টি কেন্দ্র থাকবে। এ সবকটি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে ধরা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। এ নির্বাচনে ২৭৪ জন পুলিশ সদস্য, ২২৫ জন আনসার সদস্য, বিজিবি, র‌্যাব, স্টাইকিং ফোর্স, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেত্বতে ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করবে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ নির্বাচনে ৩ জন চেয়ারম্যান, ৩৮ জন সাধারণ সদস্য ও ৯ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে । নির্বাচনে ৪৭৬ জন ভোটার ১৫ টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন । নির্বাচনে ১৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩০ জন সহকারি প্রিজাডিং অফিসার ও ৬০ জন পোলিং অফিসার কাজ করবেন । জেলার ৩৬ টি ইউনিয়ন, ৪ টি উপজেলা ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত মাগুরা জেলা পরিষদ গঠিত ।

 

শাহীন/রূপক/মাগুরা/২৭ ডিসেম্বর১৬