বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
দুখিরাম মালে’র (৬৫) দুঃখের দিন যেন আর শেষ হয় না। জীবনের অধিকাংশ সময় মধুমতি নদীতেই কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। এ নদীতে ইলিশ, রুই, কাতলা, বোয়াল, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছ মেরেই সুখে দুখে সময় গেছে দুখিরামের। এ নদীই তার সংসার পরিচালনার একমাত্র মাধ্যম। অথচ চলতি অক্টোবর মাসের ১ তারিখ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত সরকার ঘোষিত ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের ফলে তিনিসহ অনেকেই এখন বেকার হয়ে পড়েছেন। ইলিশ মাছ মারা বন্ধের পাশাপাশি তাদের অন্যান্য মাছ মারাও বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে এ এলাকাটিকে ‘ইলিশ জোন’ হিসেবে ঘোষণা না করায় কোনপ্রকার সরকারি সহায়তা পাচ্ছে না মৎস্যজীবিরা। ফলে মহম্মদপুর উপজেলার পাশ দিয়ে প্রাবাহিত প্রায় ৩০ কিলোমিটার নদীর উপর নির্ভরশীল প্রায় ৩শ পরিবার এখন অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এ নদীর উপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবি হাদান মালো, কালিদাস রাজবংশী, হিমল রাজবংশী, পরিতোষ মালো, দুলাল মালো, মন্মথ রায়সহ আরো অনেকে জানান- নদীতে ইলিশ মাছ মারা নিষেধ করা হয়েছে। এখন জাল নৌকা নিয়ে নদীতে নামলেই প্রশাসনের লোকজন জাল কেড়ে পুড়িয়ে দেয়। ফলে তারা অনেকটা বেকার জীবন যাপন করছেন। এ অবস্থায়  মৎস্যজীবি হিসেবে নিবন্ধিত এসব জেলেদের সংসার চালানো দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানে এ সময়টিতে মৎস্যজীবিদের সরকারি বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা দেয়া হয়। কিন্তু মাগুরার মহম্মদপুরের মধুমতি নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধের জন্য প্রশাসনের একের পর এক অভিযান থাকলেও সরকারি কোন ভর্তুকি কিংবা প্রনোদনা তারা পান না। ফলে এ সময়টিতে তারা মনবেতর জীবন যাপন করছেন। তারা এ সময়টির জন্য সহকারি সহযোগিতা দাবী করেন।
এ প্রসঙ্গে মহম্মদপর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য অফিসার লিয়াকত হোসেন জানান- মহম্মদপুরে মোট ১২শ ৭জন মৎস্যজীবি নিবন্ধিত হয়েছে। যার মধ্যে নদীকেন্দ্রীক মৎস্যজীবি রয়েছেন ৩ শতাধিক। গত ১ থেকে ২২ অক্টোবর  পর্যন্ত নদীতে অভিযান চালিয়ে উপজেলায় প্রায় ৭৫হাজার মিটার অবৈধ জাল আটক করে ধ্বংস করা হয়েছে। তবে এ এলাকার মৎস্যজীবিরা কোন প্রনোদনা পান না। মা ইলিশ সংরক্ষণের এ সময়টিতে এ এলাকাটিকে ইলিশ জোন হিসেবে ঘোষণা করা হলে এলাকার মৎস্যজীবিরা উপকৃত হতো। আগামী বছর থেকে এ এলাকাটিতে মৎস্য জোন হিসেবে ঘোষণার জন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাবো।

রূপক আইচ/মাগুরা / ১৪ অক্টোবর ১৭