বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম:
শহীদ মিনার ভাষা সৈনিকদের আত্মত্যাগের স্মৃতির স্মারক।আমাদের আত্মমর্যাদার প্রতীক।অথচ এই শহীদ মিনারটির এই হাল । মাগুরার শালিখা উপজেলার সীমাখালী  স্কুল অ্যান্ড কলেজের শহীদ মিনারটি চারপাশ আবর্জনায় সয়লাব।মিনারের গা ঘেষে  গণপ্রস্রাবখানা। দারুণ অবহেলার শিকার এই শহীদ মিনারটি দেখার কেউ নেই।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,  প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়।এর পর দীর্ঘ দিন সংস্কার না করায় এখন তা জরাজীর্ণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনার হওয়া সত্ত্বেও অবহেলায় পড়ে থাকে সারা বছর। ময়লা আবর্জনায় বেহাল অবস্থা শহীদ মিনারটির। কর্তৃপক্ষের অসচেতনতায় শহীদ মিনারটি পরিষ্কারের অভাবে পড়ে আছে। নেওয়া হচ্ছে না কোন স্থায়ী পদক্ষেপ।

জানতে চাইলে শালিখা উজেলার প্রবীন সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা সরদার ফরুক আহমেদ বলেন, ‘ভাষা শহীদের স্মরণে স্থাপিত এই শহীদ মিনারটি যেমন ভাষার জন্য যারা আত্নত্যাগ করেছিল তাদের স্মৃতি ধরে রাখে, তেমনই তাদের প্রতি সম্মান ও তরুণ প্রজন্মের শহীদ মিনারের তাৎপর্য তুলে ধরা একান্ত প্রয়োজন।

কিন্তু শহীদ মিনারটির এই অবস্থা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে যেমন ভাবিয়ে তুলে, তেমনই ভাষা শহীদদের আত্নত্যাগের স্মৃতি তুলে ধরা ব্যাঘাত ঘটে। তাই অবিলম্বে শহীদ মিনারটি পরিষ্কার করা হোক এবং একটি স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।

তিনি আরও বলেন, ভাষার মাসেই কেবল শহীদ মিনারটির যত্ন নিলেই চলবে না-তা রক্ষনাবেক্ষনের জন্য সদূরপ্রসারি চিন্তাভাবনা একান্ত প্রয়োজন। তা না হলে, যারা আমাদের মাতৃভাষার জন্য এত বড় আত্মত্যাগ করল, তাদের স্মৃতি ধরে রাখা সম্ভব হবে না। যা আমাদের জাতি হিসাবে অত্যন্ত দুঃখজনক ।’

সরেজমিন দেখা গেছে, শালিখা উপজেলার সীমাখালী বাজার সংলগ্ন্ এলাকায় ১৯৫৭ সালে  সীমাখালী স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।সম্প্রতী চালু হয় কলেজ শাখা।  একই আঙিনায় রয়েছে  মডেল সরকারি প্রাইমারি নামের আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দুটি মিলে এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৩০০।

বিদ্যালয়ের পেছনে একটি জরাজীর্ণ শহীদ মিনার মাথা উচু উচু করে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। পিছনে একটি খাল। চারপাশে জঙ্গল ও ময়লা আবরজনা ঢাকা। প্রতি বুধবারে বিদ্যালয়ের মাঠ জুড়ে গরুর হাট বসে।

মাঠের এক অংশ পশুর হাটে আগতদের গণপ্রস্রাব খানায় পরিণত হয়েছে। হাটে আসা লোকজন শহীদ মিনারের আশপাশেই প্রাকৃতিক কাজ  সারেন।

 এর পাশে সারা মাঠজুড়েই গরু-ছাগলের বর্জ্য ও রকমারি গর্ত, নালা-নর্দমার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা তো দূরের কথা সে মাঠে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা-চলাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমসহ স্বাভাবিক চলাফেরা ও খেলাধুলা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী শিমুল, আরিফ ও শান্তাসহ কয়েকজন জানায়, বিদ্যালযের পিছনে একটি শহীদ মিনার আছে। আমরা কখনো ওই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে দেখিনি। দুর্গন্ধে এর আশপাশে যাওয়াই যায় না।

সীমাখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম  বলেন, ‘নতুন মহীদ মিনার তৈরির পরিকল্পনা আছে। বড় সমস্যা বিদ্যালয় মাঠে গরুর হাট। গো-হাট অন্যত্র সরানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেও কোনো ফল হয়নি। তবে সরানোর চেষ্টা চলছে।’

সীমাখালী  স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি ও শতখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ঝন্টু জানান, ‘তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদে নতুন এসেছেন।খুব শ্রীঘ্রই শহীদ মিানরটি সংস্কারের উদ্যেগ নেবেন বলে জানান।’

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন / মাগুরা/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭