বেতনের টাকায় সিরাজ স্যারের শহীদ মিনার কি শেষ হবেনা ?
মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন,মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের পাল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। পুরনো স্কুল হিসেবে পড়ালেখা পরীক্ষার ফল ও খেলাধুলায় বরাবরই সুনাম রয়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে স্কুলকে ঘিরে একটি বিষয় সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। আর তাহলো মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারি এই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ৩ছাত্রের নামে শহীদ মিনার তৈরী। প্রধান শিক্ষকের নিজের বেতনের টাকা দিয়ে শুরু করা এ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি তৈরীর কাজ টাকার অভাবে মাঝপথে বন্ধ হয়ে রয়েছে।
পাল্লা গ্রামের বাসিন্দা এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান সিরাজ দীর্ঘদিন স্বপ্ন বোনেন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ তৈরীর। আর্থিক টানাপোড়েনে তা আর হয়ে উঠে না। এদিকে চাকরির মেয়াদ প্রায় শেষ। নিজের জমানো টাকা দিয়ই তিনি শুরু করেছেন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ। কিন্তু অর্থাভাবে শেষ করতে পারছেন না। মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে কাজ।
মেহেদী হাসান সিরাজ ভেজা চোখ আড়াল করার চেষ্টা করে বলেন- স্বপ্ন ছিল এ বছর ১৬ই ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে নিজেদের স্কুলের স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তিন শহীদকে শ্রদ্ধা জানাবো। কিন্তু এখন তা পারব কিনা জানি না।’
মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সহোদর আম্মদ হোসেন, মহম্মদ হোসেন ও আবীর হোসেন। তাদের বাড়ি স্কুল সংলগ্ন নাগড়ীপাড়া ও কাশিপুর গ্রামে। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সম্মুখ যুদ্ধে আহম্মদ হোসেন, মহম্মদ হোসেন ১৯ নভেম্বর উপজেলা সদরে ও ১৬ অক্টোবর উপজেলার নহাটার জয়রামপুর যুদ্ধে আবীর হোসেন শহীদ হন।
২০১০ সালে মেহেদী হাসান সিরাজ পাল্লা স্কুলের সহকারি থেকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। স্কুলের সাবেক ছাত্র ওই তিন শহীদের স্মৃতি নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীসহ সবার কাছে তুলে ধরতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন। ৩১ ডিসেম্বর তিনি চাকরি থেকে অবসরে যাবেন।
স্থাপত্যবিদের কাছ থেকে নকশা করান। নিজের বেতন থেকে দেড় লাখ টাকা জমিয়ে তিনি এ বছরের অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ইতিমধ্যে দেড় লাখ টাকা খরচে প্রায় অর্ধেক কাজ হওয়ার পর অর্থাভাবে এখন আর কাজ এগুতে পারছে না। বাকি প্রায় ২ লাখ টাকার অভাবে শহীদ মিনারটি অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
বসুরধুলজুড়ি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ডা. তিলাম হোসেন বলেন- মুক্তিযুদ্ধে এ এলাকার শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তি উদ্যেগে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের ঘটানা তরুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করবে। তিনি শহীদ মিনারের বাকি কাজ সম্পন্ন করতে সমাজের বিত্তশালী ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা কামনা করেন।’
কথা হয় বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহাজাবিন সুইটি, লামিয়া আলম, হাসিবুল ইসলাম ও আরমান মোল্যার সাথে। তারা জানান, মুক্তিযুদ্ধে এ বিদ্যালয়ের তিন শহীদ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা গর্ব করি। স্যার (প্রধান শিক্ষক) নিজের উদ্যেগে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করেছেন। আমরা চাই স্যারের স্বপ্ন বাস্তবে রুপ পাক।’
বিদ্যালয়ের সভাপতি অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান খাঁন জানান- দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন তিন শহীদের স্মৃতি রক্ষায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হোক। এ বিষয়ে তিনি সবার সহযোগিতা চান।’