মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মহম্মদপুর

মাগুরার মাঠে এক নতুন ফসল নতুন সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। ক্ষেতের আইলে উৎসুক জনতার ভিড়। কৃষক-কৃষি বিভাগ সবাই খুশি। নতুন এ ফসল নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন তারা।

মশলা জাতীয় এ ফসলের নাম জিরা। সুগন্ধি ইরানি জিরার চাষ করে সাফল্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ছয় কৃষক।

বাংলাদেশের মাটিতে জিরা চাষ হয় না- দীর্ঘদিনের এমন ধারনা ভুল প্রমাণ করে তারা সফলতার চুড়ান্ত পর্বে পৌছে গেছেন তরা। এতে দেশে দামি মশলা জিরা চাষে যুগান্তকরি বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই।

মহম্মদপুর উপজেলায় আমন ধান কাটার পর পরই রবিশস্যের মৌসুম শুরু হয়েছে। রবিশস্যের মৌসুমে কৃষকেরা সাধারণত মুগ, মসুর ডাল, মরিচ, গম খেসারী, তিল, তিসি, সরিষা, বাদাম ও সবজি চাষ করলেও চলতি মৌসুমে জিরা চাষে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।

mohammadpur (magura) 02 copy

উপজেলার বালিদিয়ার মাঠপাড়া গ্রামে আকতারুজ্জামান মৃধা ২১ শতাংশ জমিতে, পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের কালিশংকরপুর গ্রামের চাষি চান্দু মোল্যা ১৫ শতাংশ জমিতে, নহাটা ইউনিয়নের খলিশাখালির তৈয়োব বিশ্বাস ৩ শতাংশ জমিতে, রামদেব পুরের ডাঃ খবির হোসেন ও একই গ্রামের মতিয়ার মোল্যা ১২ শতাংশ জমিতে , সালধা গ্রামের অসিম গয়ালী ৬ শতাংশ জমিতে ও হরিয়াখালী গ্রামের মশিয়ার ১২শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে জিরার চাষ করে সফল হয়েছেন।

জিরা চাষীরা জানান, বীজের সমস্যার কারণে জিরা আবাদে সফল হচ্ছিলেন না তারা। প্রতিবেশি নড়াইল সদরের নাজমুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ইরানের জিরা উৎপাদনের কৃষি খামার থেকে গোপনে দেশে বীজ আনেন। পরে তিনি বীজ বিক্রি করেন। এই বীজ বপণ করে কৃষকেরা জিরা উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন।

আতিয়ার মোল্যা জানান,‘ বীজ না ভিজিয়ে পরিমিত জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে মাটি ভালোভাবে গুঁড়া করে জিরা বীজ বুনতে হবে। জিরার বীজ বপনের পর মাটি ভালভাবে সমান করে মিশিয়ে দিতে হয়। চারার বয়স ১৫-২০ দিন হলে ১ বার ও ফুল আসার পর ১ বার পানি দিতে হবে। ৮০-১০০ দিনের মধ্যে কৃষক জিরা ফসল ঘরে তুলতে পারবে।

কৃষক আক্তারুজ্জামান মৃধা জানান, নড়াইল থেকে ৩০০ গ্রাম ইরানি জিরার বীজ ৬ হাজার টাকায় কিনে ২১ শতাংশ জমিতে বপন করেন তিনি। কোন রোগ-বালাই ছাড়াই যেভাবে জিরার গাছ বেড়ে উঠছে এবং ফুল দেখা যাচ্ছে তাতে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শতক প্রতি জমিতে জিরা চাষ করতে গড়ে ২শ টাকা খরচ হয়েছে। আর ১ শতাংশ জমিতে জিরা উৎাদন করা যাবে ২ থেকে আড়াই কেজি।

যার বাজার মূল্য হবে ১ হাজার টাকা। আর বীজ উৎপাদন করতে পারলে প্রতি কেজি বীজ তিনি ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

তিনি জানান, জিরা চাষের খবর আশপাশে ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছেন জিরা ক্ষেত দেখতে। উন্মুক্ত স্থানে জিরা চাষে সফলতা আসলে সর্বত্র এর আবাদ ছড়িয়ে পড়বে বলে তিনি জানান।

মহম্মদপুর কৃষি অফিসের উপসহকারি কৃষিকর্মকর্তা মো: শহীদুল ইসলাম জাননা, ‘উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে উপজেলার পাঁচজন কৃষক জিরা চাষ করেছেন। কোন রোগ-বালাই ছাড়াই যেভাবে জিরার গাছ হয়ে উঠেছে এবং ফুল দেখা যাচ্ছে তাতে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

মাগুরা মশলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুহম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, ‘ আমাদের দেশের মাটিও জিরা চাষের উপযোগী। মানসম্মত বীজের কারণে জিরা আবাদ সফল হচ্ছিল না। সাধারণত জিরার বীজ উৎপাদনকারী দেশ রপ্তানি করে না। কোন মধ্যমে মাগুরায় জিরার বীজ চলে আসায় উৎপাদনে সফল হচ্ছেন কৃষক। উন্নত বীজ উৎপাদন করতে পারলে দেশে আমদানি নির্ভর জিরা চাষে সফল হলে মসলা চাষের নতুন দিগন্ত উন্মেচিত হবে।’