মাগুরা প্রতিনিধি

মহান শহীদ দিবসে কলেজের শহীদ বেদিতে ফুল না দেয়ার অভিযোগে আজ মঙ্গলবার শ্রীপুরের কমলাপুর জিকে আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিয়েছে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ।

এ সময় অফিস থেকে তালা আনতে দেরী করায় আব্দুল হাই (৬০) নামে কলেজের এক এম এল এস এস তাদের হাতুড়ি পেটায় আহত হয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আহমেদ জুবায়ের, বিলাস চন্দ্র বিশ্বাসসহ কলেজের কয়েকজন ছাত্র জানায়, সকালে স্থানীয় কাদিরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান, অপর ছাত্রলীগ নেতা জিবলু, রিয়াদসহ বহিরাগত একটি গ্রুপ নিয়ে অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেনের কক্ষে আসে।

অধ্যক্ষকে কক্ষে না পেয়ে তারা তাকে ফোন দিয়ে জানতে পারেন তিনি ছুটিতে আছেন। এ সময়ে তারা উত্তেজিত হয়ে কলেজের এমএলএসএস আব্দুল হাইকে একটি তালা এনে দেয়ার জন্য বলে। আব্দুল হাই তালা আনতে একটু বিলম্ব করায় ছাত্রলীগের নেতার উত্তেজিত হয়ে তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিঠে আঘাত করে।

কলেজের অন্যান্য ছাত্ররা আহত হাইকে পার্শবর্তী নাকোল বাজারের স্থানীয় চিকিৎসক আক্তার হোসেন ও অমল কৃষ্ণ বিশ্বাসের কাছে নিয়ে চিকিৎসা দেন। পরে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। এসময় তারা ছাত্রীদের কমনরুমে ভাংচুর চালায়।

মাগুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত আব্দুল হাই জানান, তালা আনতে একটু দেরী হওয়ায় কিছু বহিরাগত ছাত্র প্রথমে কিল ঘুষি ও পরে হাতুড়ী দিয়ে পিঠে মারে। পরে অন্যান্য ছাত্ররা দৌড়ে  এসে তাকে রক্ষা করে প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে যান। পরে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। হাতুড়ী পেটায় তিনি পিঠে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছেন।

এদিকে এ বিষয়ে কাদিরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান অভিযোগ করেন, মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে কলেজের শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ দেবার জন্যে কলেজের কিছু ছাত্র অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেনকে কর্মসূচি নিতে বলেন। কিন্তু আনোয়ার হোসেন ‘প্রতিবারই শহীদ বেদিতে কি ফুল দিতে হবে ’ এমন বক্তব্য দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। ফলে ঐ রাতে ছাত্ররা শহীদ মিনারে ফুল দেয়া থেকে বঞ্চিত হয়। পাশাপাশি বিষয়টি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাছে জানায়। পরবর্তী দুইদিন কলেজ বন্ধ থাকার পর আজ মঙ্গলবার এটি খুললে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের নিয়ে বিষয়টি জানার জন্য তারা অধ্যক্ষের কক্ষে আসে ও জানতে পারে অধ্যক্ষ ছুটিতে আছে।  এসময় মোবাইল ফোনে অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে ২১ শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে তিনি আগের মতই আপত্তিকর বক্তব্য দেন। এতে উপস্থিত ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়। তবে সেখানে কাউকে আহত করার ঘটনা ঘটেনি। তালা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় কলেজের কর্মচারী আব্দুল হাইকে সামান্য বকাঝকা করা হয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মাত্র ২ বছর হলো কলেজের শহীদ মিনার স্থাপিত হয়েছে। এখনো নির্মাণ কাজ পুরো শেষ হয়নি। গত বছর থেকে স্থানীয় শিক্ষকরা ছাত্রদের নিয়ে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় সেখানে ফুল দিয়েছে। এবারো স্থানীয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ফুল দেবার কথা। আমি মাগুরা শহরে থাকি ও অসুস্থতাজনিত কারনে ছুটিতে আছি। শহীদ মিনারে ফুল দেয়া নিয়ে কোন ঘটনা ঘটেনি। কিম্বা আমি কোন মন্তব্য করিনি। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, কলেজের নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় ১১ জন শিক্ষার্থী এইচ এস সি’র ফরম পুরন করতে পারে নি। এ সময় বহিরাহত ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা তাদের ফরম পুরণ করানোর জন্য আমাকে চাপ দেয়।  কিন্তু আমি সেটি না মানায় আগে থেকেই তারা ক্ষুব্ধ ছিল। বহিরাগত সেই সব ছাত্ররাই  ষড়যন্ত্রমুলক আজ এ ঘটনা ঘটায়। এ বিষয়ে ম্যানিজিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্তক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।