বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
জীবনের নিরাপত্তার অভাবে ১২দিনধরে নিজবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা গ্রামের নিরাপদ মন্ডল (৬৭) ও শান্তি রানী মন্ডল (৬২) নামে এক নিঃসন্তান বৃদ্ধ দম্পতি। যে কোন সময় তাদেরকে হত্যা করে সম্পদ দখল করতে চায় বলে ভাইয়ের ছেলে ও শরিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন তারা। প্রাণভয়ে স্ত্রীকে নিয়ে গত বারদিন ধরে বিভিন্ন আত্মিয়ের বাড়িতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের দীঘা কেন্দ্রের সংগীত প্রশিক্ষক নিরাপদ মন্ডল। তাদের সম্পত্তি দখল করতে আত্মিয়-স্বজন এমনকি নিজ এলাকার মাতব্বর পর্যন্ত একজোট হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ১৭ মার্চ নিরাপদ’র বড় ভাইয়ের ছেলে কৃষ্ণপদ মন্ডল এর মারপিটে মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এ দম্পতি। এ ঘটনায় প্রথমে মহম্মদপুর থানায় অভিযোগ করলেও তারা কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন নিরাপদ। পুলিশ সুপারের নির্দেশে ২৪ মার্চ মহম্মদপুর থানা মামলা নিয়ে কৃষ্ণপদকে গ্রেফতার করে হাজতে দিয়েছে। কিন্তু তার অন্যান্য আত্মিয়স্বজন এখনও হুমকি ধমকি অব্যহত রেখেছেন বলে জানান তারা।
নিজ বাড়িতে নিরাপত্তার অভাবে পালাতক অবস্থায় পার্শ্ববর্তী বিনোদপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে অবস্থান নেয়া কৃষ্ণপদ জানান, তারা নিঃসন্তান দম্পতি। তীর্থযাত্রা, সংসার পরিচালনা ও কিছু জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য কয়েকদিন আগে তিনি তার নিজ নামীয় পৈত্রিক কিছু জমি বিক্রি করেন। প্রথমে ওই জমি তার ভাইয়ের ছেলে কৃষ্ণপদ মন্ডল নেয়ার কথা বললেও পরে সে অপারগতা প্রকাশ করে। এ সময় তিনি অন্যত্র জমিটি বিক্রি করেন। এর কয়েকদিন পরদিনই ১৭ মার্চ তিনি তার গ্রামের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি আসলে কৃষ্ণপদ অন্যত্র জমি কেন বিক্রি করলো জানতে চেয়ে প্রথমে তাকে লাঠি দিয়ে বেদম মারপিট শুরু করে। তাকে বাঁচাতে আসলে তার স্ত্রীকেও মারপিট করে। এতে তারা দুজনই শরীরে মারাত্মক জখম হয়। এ সময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মহম্মদপুর হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনার পরদিন ১৮মার্চ তিনি প্রথমে মহম্মদপুর থানায় অভিযোগ করলে সেখান থেকে মামলা না নিয়ে গড়িমসি করে। কয়েকদিন পর ২২ মার্চ কিছুটা সুস্থ্য বোধ করলে তারা মাগুরার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম এর নির্দেশে ২৪ মার্চ থানা মামলা গ্রহণ ও আসামী কৃষ্ণপদ মন্ডলকে গ্রেফতার করে। এরপর কৃষ্ণপদ পক্ষের লোকজন তাদের উপর নানা প্রকার হুমকি ধমকি দিতে থাকে। নিজ বাড়িতে নিরাপত্তা নেই দাবী করে নিরাপদ জানান- আমরা প্রথমে মামলা করতে গেলে স্থানীয় মাতব্বর ও রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে সে মামলা করতে দেয়নি। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে মামলা হয়েছে । কিন্তু তারা হুমকি ধমকি অব্যহত রেখেছে। এমনকি তারা যে কোন মুহুর্তে আমাদের ঘরে বাইরে থেকে তালা দিয়ে আগুন ধরিয়ে হত্যা করতেও পিছপা হবে না বলে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে আমাদের হুমকি দেয়। ইতিপূর্বে তারা আমার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া দুটি গোডাউন ঘর জোরপূর্বক স্টাম্পে সই দিয়ে দখল করে নিয়েছে ওই দুর্বৃত্তরা। কৃষ্ণপদ হাজতে থাকলেও তার ছেলে মানিক, ছোটভাই রাম, অন্য ভাই সুশান্ত, অমল ও সর্বোপরি এলাকার মাতব্বর নিখিল মন্ডলও তাদের স্বামী স্ত্রীর সকল সম্পত্তি গ্রাস করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি তারা ভাড়াটে সন্ত্রাসি দিয়ে তাদের হত্যা করতে পারে বলেও আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
আহত শান্তি রানি অভিযোগ করেন- আমাদের কোন ছেলে মেয়ে নেই। আর ভাসুরের ছেলেরাও আমাদের সাথে ভাল ব্যবহার করে না। আমাদের এলাকাছাড়া করা বা মৃত্যুই তাদের সবসময় কাম্য। সম্পত্তির লোভে আমাদের বিরুদ্ধে তারা নানা রকম মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অপমান অপদস্ত করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এজন্য আমরা মনে করেছি শেষ জীবনে কিছু জমি বিক্রি করে সেই টাকায় আমরা একটু ভাল থাকি। ধর্মীয় তীর্থকরাসহ কিছু জনহিতকর কাজ করার ইচ্ছা থেকেই বাজারের অব্যবহৃত সম্পত্তি থেকে মাত্র তিনশতক জমি বিক্রি করা হয়েছে। আমি কৃষ্ণর মায়ের মত। কিন্তু সম্পত্তির লোভে অন্ধ হয়ে সে নিজে আমার শরীরে আঘাত করেছে। আমার শরীরের এমন এমন সব জায়গায় সে আঘাত করেছে যেন আমি তা কাউকে দেখাতে না পারি। তারা মূলত আমাদের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা জমি বিক্রি করলে তাদের সে আশা পূর্ণ হবেনা। মারপিটের ১০ দিন পরও আমার শরীরে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। তবে শরীরের আঘাতের চেয়ে আমার মনে যে আঘাত লেগেছে তা আরও কষ্টকর। সম্পত্তির লোভে যে কোন মুহুর্তে তারা আমাদের ঘরের মাঝে রেখে আগুনে পুড়িয়ে মারতে পারে বলে আমরা আশংকা করছি। আমার স্বামী একজন সহজ সরল সংগীত শিক্ষক। প্রাণভয়ে আমরা বিভিন্ন আত্মিয় স্বজনের বাড়িতে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমরা তাদের উপযুক্ত বিচার চাই। তবে এ বিষয়ে কৃষ্ণপদের ছেলে মানিক ও ছোটভাই রাম মন্ডল দাবী করেন- তারা নিরাপদ মন্ডলকে কোন হুমকি ধমকি দেননি। নিরাপদ মন্ডলই বরং তাদেরকে বিভিন্ন সময় হয়রানি করে আসছে। জানতে চাইলে মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: ইকরাম হোসেন জানান- ১৭ মার্চ মারপিটের ঘটনার পর ২৪ তারিখে মহম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়। ওই দিনই আসামী কৃষ্ণপদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবারটিকে নিরাপত্তার আশ^াস দেয়া হয়েছে।

রূপক/ মাগুরা/২9 মার্চ ২২