অপূর্ব মিত্র,মাগুরাবার্তা
মাগুরায় দুই জনপ্রতিনিধির করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ রেজাল্ট আসার মাত্র ৩ দিন মাথায় দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়   রেজাল্ট  নেগেটিভ আসায় করোনা পরিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে ।  মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা  আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের করোনা সন্দেহে দু’দফা নমুনা সংগ্রহের করে তা পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি পরীক্ষা পদ্ধতি এবং তার মান নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। একাধিক সচেতন ব্যাক্তির প্রশ্ন , আমরা কীভাবে এ ধরনের পরীক্ষার ফলাফলে আস্থা রাখব? কোনটি সঠিক? যশোর না খুলনা?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১১ মে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা শাখা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৮ নং নাকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমাউনূর রশিদ মুহিত এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৩ নং শ্রীকোল ইউপি চেয়ারম্যান এম.এম. মোস্তাসিম বিল্লাহ সংগ্রাম এর নমুনা সংগ্রহ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষাগারে পাঠনো হয়। দু’দিন পরে গত ১৩ মে প্রাপ্ত ফলাফলে তাদের দুু’জনের শরীরে কভিট-১৯ সংক্রমন ধরা পরে। যদিও তাদের শরীরে কোন উপসর্গ ছিলো না। ফলে এর মাত্র ৩ দিন পরেই গত ১৪ মে আবার তাদের নমুনা সংগ্রহ করে খুলনা পাঠানো হয়। কিন্তু গত ১৮ মে প্রাপ্ত ফলাফলে তাদের দু’জনেরই নেগেটিভ আসে। দ্বিতীয় দফার ফলাফল নেগেটিভ আসায় সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদ্বয়ের পরিবার পরিজন সহ এলাকাবাসী খুশি হলেও এখন আলোচনা চলছে কীভাবে মাত্র ৩ দিনের ব্যাবধানে পজিটিভ রেজাল্ট নেগেটিভ হয়ে গেল?

শ্রীপুর উপজেলা সদরের সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তা এ.এস.এম সাইফুজ্জামান বলেন, করোনা হয়েছে, এ কথা শোনার সাথে সাথেই স্বাভাবিকভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি সহ পরিবারের সকলে এক ধরনের দুশ্চিন্তা ও টেনশনে ভুগে থাকেন। কিন্তু ৩ দিনের ব্যাবধানে ফলাফল উল্টে গেল-তাহলে ঐ কয়েকদিন সেই ব্যাক্তি এবং তাদের পরিবারের লোকজন যে মানুষিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, এর দায় কে নেবে?

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার (ইউ.এইচ.এফ.পি.ও) ডা: রইসুজ্জামান বলেন, আমার অবস্থান থেকে এ বিষযে মন্তব্য করা সমিচীন হবে না।

কিন্তু মাত্র তিন দিনের ব্যাবধানে কীভাবে পজিটিভ রোগীর দ্বিতীয়দফা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসলো-  এমন প্রশ্নের উত্তরে মাগুরার সিভিল সার্জন ডা: প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, প্রথমে পজিটিভ আসলেও দ্বিতীয়বার নেগেটিভ আসতেই পারে। যশোরে পরীক্ষার মান সঠিক আছে কি না?-এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা এখন থেকে সব নমুনা যশোর না পাঠিয়ে খুলনা পঠাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, মোট তিন দফা নমুনা পরীক্ষার পরে ফলাফল নেগেটিভ আসলেই তখন আমরা তাকে সুস্থ ঘোষনা করব।

এ বিষয়ে ভূক্তভোগী শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৩ নং শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম.এম.মোস্তাসিব বিল্লাহ সংগ্রাম বলেন, আমার আগে থেকেই কোন প্রকার উপসর্গ ছিলো না। কিন্তু যেহেতু জনগনের সেবায় মাঠে কাজ করেছি তাই, নমুনা দিয়েছিলাম। আমি কখনো মনোবল হারাইনি। দূর্বল চিত্তের মানুষ হলে পজেটিভ রেজাল্ট শুনে কেউ হার্ট এটাকে মরাও যেতে পারতো। তিনি সকলকে আতংকগ্রস্ত না হওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন। এদিকে শরীরে অন্যান্য সমস্যা থাকায় দ্বিতীয় দফার রেজাল্ট নেগেটিভ আসার পূর্ব থেকে শ্রীপুর উপজেলা শাখা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হুমাউনূর রশিদ মুহিত বর্তমানে ঢাকার রিজেন্ট করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।

সার্বিক বিষয়ে যশোর বিঙ্গান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও করোনা পরীক্ষা ল্যাবের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ইকবাল কবির জাহিদ মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের এখানে ব্যবহৃত কিট অত্যন্ত উন্নত। যা বাংলাদেশের অনেক ল্যাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে না। কিন্তু নমুনা সংগ্রহের ২৪ ঘন্টার মধ্যে পরীক্ষা করা না হলে ভাইরাসের আর এন এ নষ্ট হয়। সে ক্ষেত্রে এখানকার রেজাল্ট নেগেটিভ আসতে পারে। তিনি বলেন- তার জানামতে খুলনায় পরিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক সময় ২/৩ দিন পর পরিক্ষা সম্পন্ন হয়। সে ক্ষেত্রে রেজাল্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তিনি জানান- যশোর পজেটিভ হয়ে খুলনায় নেগেটিভ রেজাল্ট আসায় যশোরে নমুনা আসা আগের চেয়ে কমে গেছে।

 

মাগুরা/ ১৯ মে ২০২০