তাসিন জামান, মাগুরাবার্তা
যোগদানের মাত্র এক বছর পরে বদলি হলেন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলারা রহমান। কিন্তু নিজের সৃষ্টিশীল কাজ আর উদ্যোমী মানবিক চরিত্রের মাধ্যমে এরই মধ্যে তিনি উপজেলা বাসীর মন জয় করেছেন । গত বছরের ৭ আগস্ট তিনি শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসনে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। মাত্র এক বছরেই প্রমান রাখলেন মানুষের জন্য কিছু করতে চাইলে তার জন্য সময়টা মুখ্য নয়। মুখ্য হচ্ছে ইতিবাচক উদ্যোগ। যেন এলেন, দেখলেন আর জয় করলেন। তাইতো তার বিদায় বেলায় শ্রীপুরের সাধারণ মানুষ,স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী এমনকি ছোট শিশুরাও তার সঙ্গে এক নজর দেখা করতে আসছেন তার বাসায় কিংবা অফিসে। অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। এ যেন আত্মারা আত্মীয় বিদায়ের ক্ষণে প্রিয়জনের ভালবাসার একান্ত আকুতি।

গত ৮ জুলাই খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়ার  স্বাক্ষরিত এক আদেশে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় তাকে বদলি করা হয়। জানা গেছে, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় ইউএনও পদে যোগদান করবেন তিনি। মাগুরার শ্রীপুরে যোগদানের পর থেকে  শিক্ষা বিস্তার ,মাদক ও ইভটিজিং বিরোধী একাধিক অভিযান, নারী উন্নয়নে ব্যতিক্রমী নানা উদ্যোগসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে গেছেন।  যোগদানের এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি স্থানীয় জনসাধারণের মন জয় করে নিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, দিলারা রহমান  একজন সৎ এবং নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা। তার কাছে কেউ সহযোগীতার জন্য এলে এ পর্যন্ত তিনি কাউকেই নিরাশ করেননি। সরকারের সেবা জনসাধারণের দোর গোড়ায় পৌছে দিতে তিনি সদা বদ্ধ পরিকর।

1564410978307_10R 1 Copy

মাদক ও ইভটিজিং এর বিষয়ে ছিলেন কঠোর –

মাদক ও ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে  জিরো ট্রলারেঞ্জে কাজ করেছেন ইউএনও দিলারা রহমান । রাত দিন বলে ছিলোনা কোন পার্থক্য। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকার মাদক সেবীদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।আজকের সমাজে এখন  আরেক ব্যধির নাম ইভটিজিং । রাস্তাঘাটে সেখানেই যখন শিক্ষার্থীদের উত্যক্তের খবর পেয়েছেন ঠিক তখনই ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে উত্যক্তকারীদের দিয়েছেন সাজা।অভিভাবকদেরও  বলেছেন যখনই আপনার সন্তান এ ধরণের কার্যক্রমের সম্মুখীন  হবে; সাথে সাথে প্রশাসন কে অবহিত করবেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন ছিলো তার নেশা :

দায়িত্বরত নেওয়ার পর থেকেই তিনি বলে চলেছেন শিক্ষাক্ষেত্রে অন্য সবের চেয়ে তার আগ্রহ একটু বেশি। এ পর্যন্ত দারিদ্র, অসহায় মেধাবী শিক্ষর্থী তার কাছে সহযোগীতার জন্য

আসলে যতটুকু পেরেছেন সহযোগীতা করেছেন। গঠন করেছেন শ্রীপুর শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তা ট্রাস্ট। উপজেলার দরিদ্র ও  মাধাবী শিক্ষার্থী এবং অসহায় অসুস্থ মানুষের পাশে দাড়াবে এই ট্রাস্ট। এই ট্রাস্ট একটি যুগান্তকারী ইতিহাসের অভ্যুদয়।

20151209054340_IMG_8073

দুস্থ ও আসহায়দের পাশে দাড়িয়েছেন তিনি :

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মো: খলিল আহমেদ, বারইপাড়া শ্রীকোলের বাসিন্দা ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে বাদাম বিক্রি করে তার ৫ সদস্যবিশিষ্ট পরিবার নিয়ে নিদারুণ সংগ্রাম করছেন। খলিলের পরিবারে উপার্জনকারি আর কোন সদস্য নাই। এই শারিরীক সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করে তার এই জীবন সংগ্রামে উৎসাহ দেওয়ার জন্য তারই ইচ্ছের প্রেক্ষিতে তার পরিবারকে গরু উপহার দিয়েছেন।

হতদরিদ্র এক মা যদি তার সদ্য বিবাহিত মেয়েকে একটি বাকসো দিতে পারেন তবে নাকি তার মেয়ের সম্মান রক্ষা হয়। অসহায় মায়ের আর্তি পূরণ করেছেন,দিয়েছেন বাকশো।

কন্যা দায়গ্রস্ত অসহায় এক মায়ের অশ্রু মোচনের ক্ষুদ্র উদ্যোগের মাধ্যমে কনের নতুন সংসারের খুঁটিনাটি সাংসারিক তৈজসপত্র প্রদান করেছেন। পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি রয়েছে তার অগাধ ভালোবাসা।সম্প্রতি ক্ষুদ্র – নৃগোষ্ঠী ৭০ জন মেয়েদের স্কুলে যাতায়াতের জন্য বাই সাইকেল বিতরণ করেছেন।  এভাবে তিনি প্রায় এক বছরের উপজেলার বিভিন্ন স্থানের অসহায়, দরিদ্র মানুষের সহযোগীতা করেছেন।

শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী জালাল উদ্দিন বলেন, ইউএনও সাহেব এক কথায় খুব জনবান্ধব,দেশ প্রেমিক ও কর্মঠ মানুষ। শিক্ষা ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি তাকে আরো কিছুদিন এখানেই চাই।

ইউএনও দিলারা রহমান সবার প্রতি কৃতঙ্গতা প্রকাশ করে বলেন,প্রায় এক বছর শ্রীপুরে রয়েছি। শ্রীপুরবাসীর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। শ্রীপুরের মানুষ আমাকে খুব আপন করে নিয়েছে।বদলির কারণে খারাপ লাগছে। যেখানেই থাকি  না কেন আমার প্রতি শ্রীপুর বাসীর দোয়া থাকবে এটা আমার বিশ্বাস। এই শ্রীপুর উপজেলায় যে কোন ধরণের কাজ করতে কখনোই আমাকে বেগ পেতে হয়নি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। যেখানেই থাকি না কেন মানুষের জন্য যেন কাজ করতে পারি। মানবিক সমাজ গঠনে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে পারি।

রূপক/ মাগুরা/ ৩০ জুলাই ১৯