বিশেষ প্রতিনিধি,মাগুরাবার্তা
উপজেলা নির্বাচনে বাবা নৌকা মার্কায় ভোট করায়  প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে  মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল গ্রামের এইচ এসসি পরিক্ষা দিতে পারছে না মেধাবী ছাত্র নাইমুজ্জামান হৃদয়। মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে সে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রচন্ড আঘাত ও পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারার দুচিন্তায় ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ছে হৃদয়। হৃদয়ের মানসিক ভারসাম্য ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে শংকিত তার পরিবার। গত ২৫ মার্চ দুপুরে স্থানীয় নাকোল বাজারে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের হামলার শিকার হয় সে। আগামীকাল সোমবার থেকে হৃদয়ের এইচ এসসি পরিক্ষা শুরু হবে। কিন্তু সে পরিক্ষা দিতে পারছে না। এ ঘটনায় পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকায় ক্ষোভ জানিয়েছে হৃদয়ের পরিবার।
হৃদয়ের বাবা নাকোল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মির্জা মিজানুর রহমান নওরোজ অভিযোগ করেন, নাকোলের বাসিন্দা জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক বন ও পরিবেশ সম্পাদক নাকোল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়ার সমর্থকদের সাথে গত ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত শ্রীপুরের উপজেলা নির্বাচনে তার  দ্বন্দ্ব হয়। এ উপজেলা নির্বাচনে শাহজাহান মিয়া আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহামুদুল গনি শাহীনের পক্ষ নিয়েছিলেন। অন্য দিকে মিজানুর রহমান নওরোজ নেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী পংকজ সাহার পক্ষ। নির্বাচনের দিন দুপুরে নৌকার এজেন্টদের শাহজাহান সমথর্করা নাকোল ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেবার সময় উভায় দলের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।এ উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে শাহজাহান ও তার লোকজন পরদিন ২৫ মার্চ ধারালো অস্ত্র নিয়ে নাকোল বাজারে মহড়া দেয়। এসময় কাউকে না পেয়ে শাহজাহানের লোকজন মিজানুর রহমানের ছেলে হৃদয়কে বাজারে পেয়ে তার মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়ে জখম করে। আহত হৃদয়কে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে। পরে অবস্থার অবনতি হওয়াই ফরিদপুর মেডিকের কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে সেখানে চিকিৎসাধীন।
মিজানুর রহমান কাঁদতে কাঁদতে বলেন,‘আমার ছেলেটা লেখাপড়ায় ভালো। হৃদয়ের কামারখালি বীর শ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ ডিগ্রী কলেজ থেকে এবার এইচ এসসি পরীক্ষা অংশ নেবার কথা। তাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সন্ত্রাসীরা আমার সে স্বপ্ন গুড়িয়ে দিল। আসন্ন এইচ এসসি পরীক্ষায় অংশ নেবার মত কোন অবস্থা তার নেই। উপরন্তু মানসিক ভারসাম্য ও স্বাভাবিক জীবন নিয়ে আমরা শংকিত হয়ে পড়েছি। প্রচন্ড মানসিক দুশ্চিন্তা ও পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারার কষ্টে সে ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। আমি এ হামলার বিচার চাই’। তিনি এ ঘটনার সাথে জড়িত শাহজাহান চেয়ারম্যানের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন। তিনি আরও বলেন- ঘটনার পর থেকেই শ্রীপুর থানা পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। পুলিশ আসামীদের ধরতে কোনপ্রকার চেষ্টাই করছে বলে মনে হচ্ছে না। স্থানীয়দের সহায়তা একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। অন্যরা এলাকায় থাকলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। Magura HSC candidate pic 2

এদিকে এ বিষয়ে শাহজাহান মিয়া বলেন,‘ মিজানুর রহমান নওরোজের হৃদয়ের সাথে ইভটিজিংয়ের একটি বিষয়ে স্থানীয় কিছু যুবকের বিরোধ হয়। এটির জের ধরেই এ ঘটনা ঘটেছে। এখানে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে মিজানুর রহমান আমাকে ঘটনার সাথে জড়াচ্ছে’।

এ বিষয়ে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন,‘ঘটনার পরপরই পুলিশ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে মিন্টু শিকদার নামে একজনকে ধারালো অস্ত্রসহ আটক করেছে। এ ব্যাপারে আহত হৃদয়ের বাবা মিজানুর রহমান নাকোল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়াসহ ১২ জনের নামে মামলা করেছেন’।

রূপক /মাগুরা /৩০মার্চ ১৯