বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
সাংবাদিকতার নাম ভাঙ্গিয়ে জনৈক ফেরদৌস রেজা ওরফে তুর্কি নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাগুরা শহরের কয়েকটি প্রাইভেট ক্লিনিক, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির একাধিক লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফেরদৌস রেজা  শহরের কাউন্সিল পাড়া এলাকার আঃ হক এর ছেলে। তবে তিনি দীর্ঘদিন মাগুরার বাইরে থাকতেন বলে জানা গেছে।
নিজেকে অপরাধ জগৎ ও ২৪ আওয়ার বিডি নামের একটি অনলাইনের জেলা প্রতিনিধি দাবী করলেও একটি ভিডিও ক্যামেরা ও বুম নিয়ে তিনি মাগুরা শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রথমে ভিডিও করেন। পরে সেখানকার মালিক কর্মচারিদের হুমকি ধমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করেন বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন একাধিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতালের কর্মকর্তারা।
মাগুরা শহরের হাসপাতাল পাড়ার জাহান প্রাইভেট ক্লিনিকের ম্যানেজার সাগর মিয়া সদর থানায় লিখিত অভিযোগে জানান- গত ৭ নভেম্বর ফেরদৌস রেজা ও তার সঙ্গী মনিরুল ইসলাম একটি ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে তাদের ক্লিনিকে গিয়ে ভিডিও করে। এ সময় তাদের নতুন ওই ক্লিনিকে নানা অসঙ্গতি আছে উল্লেখ করে ক্যামেরায় ভিডিও করার চেষ্টা চালায়। তবে তেমন কিছু না পেয়ে চলে যায়। এর কয়েকদিন পর রেজার ক্যামেরা পার্সন মনিরুল ক্লিনিক মালিক ডা. মাসুদুর রহমানের কাছে ফোন করে তাকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানায়। এ সময় সে তার সঙ্গে দেখা করতে চান। দেখা করে সে এ ঘটনায় কোন রিপোর্ট না করার শর্তে ফেরদৌস রেজার পক্ষে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ টাকা দিতে রাজী না হওয়ায় গত ৩১ জানুয়ারী ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে  ২৪ আওয়ার বিডি নামে একটি সম্পাদক- প্রকাশকের এর নাম ঠিকানা বিহীন অনলাইন পোর্টালে মনগড়া রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টে ক্লিনিক মালিক ডা. মাসুদুল হক এর বিরুদ্ধে ঠান্ডা মাথায় খুনিসহ নানা ভাষা ব্যবহার করলেও এ বিষয়ে কোন প্রমাণ কিংবা অভিযোগ উল্লেখ করেননি।
একইভাবে চাঁদা চেয়ে না পেয়ে  সদর হাসপাতালে কোনপ্রকার নিয়োগ বিজ্ঞাপন প্রকাশ হওয়ার আগেই আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে বলে মনগড়া একটি সংবাদ পরিবেশন করেছে বলে তুর্কির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন মাগুরা সদর হাসপতালের এক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে ফেরদৌস রেজাকে প্রশ্ন করলে তিনি- ডা. মাসুদ তাকে তার হাসপাতালের ছবি তুলতে দেননি। তাই তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান। এছাড়া তিনি কোন টেলিভিশনের সাংবাদিক না হয়েও ভিডিও রিপোর্ট তৈরী করেন কার জন্য জানতে চাইলে কয়েকজন ক্লিনিক মালিক তাকে এ কাজ করতে বলেছেন বলে স্বীকার করেন। এ সময় তিনি মাগুরা প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম তাকে চেনেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান।
এ প্রসঙ্গে মাগুরা প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন- ফেরদৌস রেজাকে ইউটিউটের জন্য ভিডিও নাটক তৈরী করে বলে জানি। তিনি সাংবাদিকতা করেন তা যেমন আমি জানি না। তেমনি সাংবাদিকতার নামে কোন চাঁদাবাজি বা মানহানিকর কিছু কাজ করলে তার দায় আমরা নেবেনা।
মাগুরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমেদ খান এ প্রসঙ্গে বলেন- এ ধরনের  দু একজনের অপকর্মের খবর আমাদের কাছে আছে। সাংবাদিকতার নাম ভাঙ্গিয়ে কোন অপকর্ম করলে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আমরা  প্রশাসনকে জানিয়েছি।

51300720_329972724283800_3855424032304267264_nফেসবুকে এই  ফেরদৌসের প্রোফাইলে সরকার বিরোধী একাধিক পোষ্ট দেখা গেছে। সেখানে গত ৩০ডিসেম্বরের আওয়ামীলীগের নিরংকুশ বিজয়কে তিনি ‘বিবেক ধস বিজয় হিসেবে চিহ্নিত করে এ বিজয়ে নিজের শংকা প্রকাশ করে ৩১ ডিসেম্বর একটি পোস্ট দেন।
এ প্রসঙ্গে জাহান ক্লিনিকের মালিক ডা. মাসুদুল হক জানান- মাগুরার মানুষকে মানসম্মত সেবা দেয়ার জন্য পৈত্রিক সম্পদ বিক্রি ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে মাগুরা শহরে সর্বাধিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ১০ তলা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটি করেছি। অনেক গরীব রোগীকে আমি স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে চিকিৎসাও দিয়ে থাকি। মাগুরার অধিকাংশ মানুষ আমাকে সহায়তা করলেও এ ধরনের দু একজন নামধারি ব্যক্তি আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লেগেছে। আমি এ বিষয়ে প্রশাসনের সহায়তা চাই।
মাগুরা সদর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান- জাহান ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রূপক/মাগুরা /১ ফেব্রুয়ারী ১৯