বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
চলতি আমন মৌসুমে ইউরিয়া সারের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও মাগুরায় এক শ্রেণীর সার ডিলারদের অপতৎপরতায় মাগুরায় ইউরিয়া সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কৃষকরা কেজিপ্রতি অনন্তত ৪টাকা বেশী দিয়ে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। গোপনে মাগুরার সার পার্শ্ববর্তী জেলায় নিয়ে বিক্রিরও অভিযোগ দিয়েছেন কৃষকরা।
সরকার কৃষক পর্যায়ে সারের খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১৬টাকা হিসেবে ৫০ কেজির বস্তা প্রতি ৮শ’ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এক শ্রেণীর ডিলার কৃষকদের কাছে বস্তাপ্রতি ৯শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। অনেক ক্ষেত্রে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ইউরিয়া সার ২২ টাকা পর্যন্ত বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিসিআইসির বাফার গোডাউনের গড়িমসিকে দূষছেন সার ব্যবসায়ীরা।
মাগুরা সদরের নলদাহ গ্রামের কৃষক অজয় বিশ্বাস জানান- পাট কেটে জাগ দেয়ার পর জমিতে আমন ধান লাগানোর কাজ শুরু করেছেন তারা। এ সময় জমিতে ইউরিয়া সার খুবই প্রয়োজন। কিন্তু পার্শ্ববর্তী হাজিপুর বাজারের সার ডিলার  সাবু মিয়ার দোকানে গেলে সেখানে সার নেই বলে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। অনেক ঘোরাঘুরির পর ৭ থেকে ৮ বস্তা (৫০ কেজির বস্তা) সারের চাহিদার বিপরীতে তাকে দেয়া হয় ১০ কেজি সার। যার দাম রাখা হয়েছে ২০টাকা কেজি।  যা তার চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। বাড়িয়ালা গ্রামের সার ব্যবসায়ী বাবু দাস এর দোকানে গেলেও সেখানে সার নেই বলে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ বেশী দাম দিলে মিলছে সার।
মাগুরা জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি সভাপতি আমজাদ হোসেন জানান- বিভিন্ন এলাকায় বিসিআইসির ডিলাররা গ্রাম পর্যায়ের ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে সার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরী হয়েছে। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী উচ্চমূল্যে সার বিক্রি করছে। তিনি অভিযোগ করেন ডিলাররা এ জেলার সার পার্শ্ববর্তী জেলায় পাচার করে দিয়ে বেশী মুনাফা নিচ্ছে।
জেলা সার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান জানান- বিসিআইসির এ অঞ্চলের বাফার গোডাউন ফরিদপুরের টেপাখোলা ডিপো থেকে সার সরবরাহ করতে দেরী করছে। ফলে মাগুরা থেকে ১২টি ট্রাক সেখানে অপেক্ষা করলেও কোন সুরহা হয়নি। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া  মাগুরায় সারের কোনো কৃত্রিম সংকট নেই। তবে মনিটরিংয়ের দুর্বলতার কারণে জেলায় অনুমোদন বিহীন কিছু ব্যবসায়ী বাজার অস্থিতিশীল করে তুলতে চেষ্টা করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, মাগুরায় ২২ সদস্যবিশিষ্ট একটি সার মনিটরিং কমিটি আছে। যারা নিয়মিত বিষয়টি তদারকি করছেন। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি জানান-  সার বিপণনের জন্য এ বছর মাগুরায় বিসিআইসি থেকে ৩৯ জন ডিলার নিয়োগ দিয়েছে। যাদের প্রত্যেকের ঘরেই পর্যাপ্ত সার মজুদ রয়েছে। কিন্তু  ইউরিয়া সারের চাহিদা কিছুটা বেশী  থাকার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু  ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের চেষ্টা করছে।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়- চলতি আগস্ট মাসে মাগুরা জেলায় মোট ৩৬৮১ মে.টন (মাগুরা সদর : ১হাজার৪৭১ মে.টন, শালিখা:৭শ ৫০ মে.টন, শ্রীপুর : ৯শ৬০, মহম্মদপুর : ৫শ  মে.টন) ইউরিয়া সারের বরাদ্দ রয়েছে এবং অদ্যবধি জুলাই মাসসহ ৫শ ৯৪  মে.টন সার মজুদ রয়েছে। এর পাশাপাশি জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভার সিদ্ধান্ত  মোতাবেক  জেলায় ১হাজার  মে.টন সার উপ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। প্রতি মৌসুমের ন্যায় বর্তমানে রোপা আমন মৌসুমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সকল কর্মকর্তাগণের প্রতিনিয়ত মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সারের সরকার নির্ধারিত মূল্যের বিপরীতে বেশি দামে বিক্রয় করলে তার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

রূপক আইচ/মাগুরা / ৩০ আগস্ট ১৭