মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
মাগুরার মহম্মদপুরের ঐতিহ্যবাহী বড়রিয়া ঘোড়দৌড় মেলা আজ বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। প্রায় একশ’ বছর ধরে বাংলা পৌষ মাসের ২৮ তারিখে এ মেলা বসে। খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ এ মেলাকে ঘিরে এখন এলাকায় চলছে উৎসবের আমেজ।
বড়রিয়া গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান সর্দার জানান, আনুমানিক একশ’ বছর আগে বড়রিয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি সানু সর্দারের ঘোড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করত। তার ঘোড়ার নাম ডাক সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বাংলা ২৮ পৌষ মাগুরা সদরের বাহরবা মেলায় তার ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেও পক্ষপাতিত্ব করে হারিয়ে দেওয়া হয়। রাগে ক্ষোভে দুঃখে অপমানে তিনি নিজ গ্রামে একই দিনে ঘৌড়দৌড় মেলার আয়োজনের ঘোষণা দেন। সেই থেকে এই গ্রামে প্রতিবছর মেলা বসছে। magura-mela-picture-02

প্রথম দিকে মেলায় আশা দর্শনার্থীদেরকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতেন সানু সর্দার। কালক্রমে বাহরবা মেলার জৌলুস হারায় । পক্ষান্তরে বড়রিয়া মেলার নামডাক চারদিক ছড়িয়ে পড়ে। দিনদিন মেলার পরিসর বাড়তে থাকে।
উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের বড়রিয়া গ্রামে প্রায় তিন বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছে মেলার স্টল। চারুকারু, কাঠ-বাঁশ, প্র্রসাধনী, বেত আসবাবপত্র, তৈজষপত্র, মিষ্টি মাছসহ রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে কয়েক হাজার স্টলে ক্রেতারা ভিড় করছেন।
মাগুরাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার লোক সমাগম হয় এই মেলায়। মূল মেলা একদিন হলেও মেলার আগে ও পরে পক্ষকালব্যাপী চলে মেলার বেচা-কেনা।
মেলার মূল আকর্ষণ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ঘোড়া আনা হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে নানা ব্যবস্থা। সার্কাস, পুতুল নাচ, যাত্রা ও বিচারগান এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ।
মেলার আশপাশের গ্রামগুলোয় এখন চলছে উৎসবের আমেজ। মেলাকে ঘিরে এসব গ্রামে জামাই আদর রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ঘরে ঘরে শীতের রস-পাটালির নানান পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম। ঈদে না হলেও অন্তত মেলা উপলক্ষে জামাই-মেয়েকে দাওয়াত দেওয়া এ এলাকার রেওয়াজ। জামাই মেলা থেকে বড় মাছ মিষ্টি নিয়ে শশুরালয়ে যান। শশুর জামাইকেও উপহার দিয়ে থাকেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, মেলা এলাকায় বিক্রেতারা নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। এক সপ্তাহ আগে থেকেই তারা দোকান নিয়ে বসে আছেন। টুকটাক বেচা কেনা শুরু হলেও আজ ভোর থেকে শুরু হয়েছে মূল বেচা কেনা। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শৈত্য প্রবাহের না থাকায় ব্যবসায়ীরা দারুন খুশি। এবার মেলায় ভাল বিক্রি হবে বলে তারা আশা করছেন।
রাজশাহী, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বগুড়া, যশোর, নড়াইল, মাগুরা ও কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে নানা পণ্যের পসরা নিয়ে মেলা প্রাঙ্গনে সমবেত হয়েছেন। ঢাকার বিক্রমপুর থেকে তিন ট্রাক কাঠের ফার্নিচার এনেছেন এনামুল হক।
তিনি মাগুরাবার্তাকে  জানান, ‘তার পিতাও মেলায় পণ্য বিক্রি করতে আসতেন। গত দশ বছর ধরে তিনি এ মেলায় আসছেন। প্রতি মেলায় তিনি ফার্নিচার বিক্রি করে ভালো লাভ করেন।’
মিষ্টি বিক্রেতা নারায়ন চন্দ্র ঘোষ মাগুরাবার্তাকে   জানান, প্রতি বছর তিনি মেলায় মিষ্টির স্টল দেন। এ মেলার প্রধান বৈশিষ্ট্য, যারা মেলায় আসেন সবাই মিষ্টি কেনেন। মাটির হাড়িতে মিষ্টি নিয়ে মেলা থেকে বাড়ি ফেরেন সবাই। এবার তিনি পঞ্চাশ মণ মিষ্টি বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী মাগুরাবার্তাকে  জানান, মেলায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।
মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান ও মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খাঁন বাচ্চু মাগুরাবার্তাকে  জানান, ‘ইতোমধ্যে মেলার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। মেলায় আসা লোকজনের ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য মেলা কমিটির প্রায় এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।’

 

শাহীন/ রূপক/ ১১ জানুয়ারী ১৭