আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
সহপাঠি বন্ধুরা যখন জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফলাফল উদযাপনের আনন্দে ব্যস্ত।  জীবিকার তাগিদে কিশোর তাহের তখন বাবার সাথে পাশের গ্রাম শালথায় এক কৃষককের জমিতে পিয়াজের চারা রোপণ করে জীবিকা নির্বাহের যুদ্ধ করে যাচ্ছে। জেএসসি পরীক্ষা শেষ করেই তাহের বাবার সাথে শ্রমিকের কাজ শুরু করেছে।
স্কুল বন্ধ হলেই তাহেরকে বাবার সাথে কৃষি শ্রমিকের কাজ করতে হয়। এই টাকা দিয়েই চলে তার পড়ালেখা ও খাওয়ার খরচ। একদিনের জন্য বাড়ি এসে পরীক্ষার ফল জেনে আবার বাবার সাথে কাজ করতে চলে গেছে সে। মো. আবু তাহের শেখের (১৩) বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারি উপজেলার পাচুড়িয়া ইউনিয়নের চরপাচুড়িয়া মধ্যেপাড়া গ্রামে।
অদম্য মেধাবী তাহের এবারের জেএসসি পরীক্ষায় মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের আর.এস.কে.এইচ ইনস্টিটিউশন থকে সকল বিষয়ে জিপিএ ৫ (গোল্ডেন) পেয়েছে।
তাহেরের বাবা মোহাম্মদ শেখ দিনমজুর। সব দিন কাজ জোটে না তার। তাই সংসারে অনটন লেগেই থাকে। এ কারণে তার সন্তান আবু তাহেরকে বহুদিন না খেয়েই বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু পরিবারের দারিদ্র্য তাহেরকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। লেখাপড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহ সাফল্য এনে দিয়েছে তাকে।
মোহাম্মদ শেখ জানান, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তাহের দ্বিতীয় । বড় বোন সাথী পারভিন মহম্মদপর সদরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। চারশতক জমির উপর পাটখড়ির বেড়ার ঝুপড়ি ঘর। আর কোন জমি নাই। অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে কোনমতে সংসার চলে তার। যা আয় করেন তা দিয়ে দুই ছেলে মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালানো তার পক্ষে কষ্টকর। বাধ্য হয়ে বাবা-ছেলে মিলে পাশ্ববর্তি বোয়ালমারির রেল স্টেশন এলাকায় শ্রমিক বিক্রির হাটে যান। গৃহস্থরা তাদের কিনে নিয়ে কৃষি কাজ করান। তিনি বলেন, ছেলেকে (তাহের) নিতে চান না। অভাবের তাড়নায় না নিয়েও পারেন না। তাহের আয় করলে দুই ভাইবোনের পড়ার খরচটা চলে যায়।’magura-taher-picture-02
তাহেরদের চরপাচুড়িয়া এলাকা মাগুরা ও ফরিদপেুরের মধ্যে সীমানা বিরোধ চলে আসা একটি এলাকার গ্রাম। মধুমতি নদী সিকস্তি এই জনপদের সীমানা বিরোধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ আদালতে মামলা চলে আসছে। এই গ্রামের একটি অংশ এখন ফরিদপুরের বোয়ালমারি ও অন্য অংশ মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় অবস্থিত।
মহম্মদপুরের চরপাচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ফাতেমা বেগম জানান, ‘তাহের ছোট বেলা থেকেই মেধাবি। পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারলে সে অনেক দূর যেতে পারবে। কিন্তু দারিদ্রতা তার চলার পথে বড় বাঁধা।’
তাহেরের মা জলি বেগম বলেন, অভাবের সংসার তাদের। ঘরভিটা ছাড়া কোনো জমিজমা নেই। তিনি বাড়তি আয়ের জন্য অন্যের বাড়িতে মৌসুমি ফসল মাড়াইয়ের কাজ করেন। এ অবস্থায় তাহেরের পড়াশোনা কীভাবে চালিয়ে নেবেন, তা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় মধ্যে আছেন।
মহম্মদপুর উপজেলা সদরের আর.এস.কে.এইচ ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক এ.কে.এম নাসিরুল ইসলাম বলেন, মেধাবী ছাত্র হওয়ায় শিক্ষকেরা তাহেরকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেন, কোনো ধরনের সহযোগিতা না পেলে তাহেরের শিক্ষার পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’

শাহীন/রূপক/মাগুরা/৩১ডিসেম্বর১৬