মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ঘুর্ণিঝড় রোয়ানু চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হেনেছে। বেলা ১২টার দিকে সামুদ্রিক এ ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে হানে। ঘণ্টায় প্রায় ৮০ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বেগে ঝড়টি বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেকক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল দিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে সীতাকুণ্ডু হয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দিকে এগোচ্ছে।শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে রোয়ানু উপকূল পেরিয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, স্থলভাগে পৌছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে রূপান্তরিত হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে রোয়ানু উপকূল পেরিয়ে যেতে পারে।, মেঘনা মোহনা, নোয়াখালী, কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, সীতাকুণ্ড উপকূল হয়ে রোয়ানু উত্তর দিকে চলে যাবে। এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রোববার ব্যাপক বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

ঝড়ের কারণে অনেক জায়গায় ভেঙ্গে পড়েছে অনেক গাছ পালা, ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাঁচা ঘরবাড়ি। ঝড়ো বাতাস শুরু হওয়ার পর থেকে উপকুলীয় এলাকায় ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া শুরু করে লোকজন।

সম্ভাব্য সবধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ঘটেছে হতাহতের ঘটনা। চট্টগ্রাম, ভোলা ও পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, চাঁদপুর, ঝালকাঠি, বরিশালসহ উপকলীয় জেলাগুলোতে ঝড়ে এখন পর্যন্ত ১২ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। অাহত হয়েছেন শতাধিক। পাশাপাশি ঘরবাড়ি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও বাঁশখালী উপজেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে কুতুবদিয়ার চারটি, মহেশখালীর তিনটি, টেকনাফের একটি, পেকুয়ার তিনটি ইউনিয়ন লন্ডভন্ড হয়েছে। কক্সবাজারে বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। বরগুনায় দেড় লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীতে শনিবার দুপুরে আম কুড়াতে গিয়ে নগরীর পাঁচলাইশে মো. রাকিব (১১) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে শিশুটি পাঁচলাইশে চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে আম কুড়াতে যায়। এ সময় ঝড়ে উড়ে আসা একটি টিনের নিচে চাপা পড়ে রাকিব নিহত হয়। সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল ছলিমপুরের পাহাড়ি এলাকা কালাপানিয়া লোকমানের ঘোনা এলাকায় ঘড়ের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ে মা-ছেলের মৃত্যু হয়। এরা হলেন- স্থানীয় মোহাম্মদ রফিকের স্ত্রী কাজল বেগম (৪৮) ও তার ছেলে বেলাল হোসেন বাবু (১০)।সীতাকুণ্ড উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সকালে ঝড়ের কারণে পাহাড় থেকে ভেঙে পড়া গাছ ঘরের ওপর পড়লে এ ঘটনা ঘটে।

ভোলা: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতের আগেই ভোলার তজুমদ্দিনে গতরাতে আঘাত হানে টর্নেডো। এ সময় ঘরচাপায় একজন শিশু ও দুই গৃহবধূ নিহত হয়েছে। প্রায় এক মিনিট স্থায়ী আকস্মিক এ টর্নেডোর আঘাতে তজুমদ্দিন উপজেলা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় পাঁচ শতাধিক ঘর ও তিন শতাধিক দোকান বিধ্বস্ত হয়েছে।

কক্সবাজার: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে কক্সবাজারে কুতুবদিয়া উপজেলায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১০ জন। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- উপজেলার উত্তর ধুরুং এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে মো. ইকবাল (২৫), উত্তর কৈয়ার বিল এলাকার ফয়েজুর রহমানের ছেলে ফজলুল হক (৫৫)।

নোয়াখালী: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে প্রবল জোয়ারে নোয়াখালির হাতিয়া উপজেলায় মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, ২নং চানন্দী ইউনিয়নে নলের চর আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেমের স্ত্রী মিনারা বেগম (৩৫) এবং তার মেয়ে মরিয়ম নেছা (১০)।শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. মইন উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

লক্ষ্মীপুর: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ায় গাছ উপড়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন শনিবার উপজেলার উত্তর তোওয়ারিগঞ্জ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাজ্জাদুর হাসান জানান।নিহত আনোয়ার উল্লাহ (৫৫) ওই এলাকার বশির উল্লাহর ছেলে।

পটুয়াখালিী: প্রবল ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে ঘর ভেঙে পড়লে পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়ন লক্ষ্মীপুর গ্রামে নয়া বিবির (৫২) নাম এত নারী নিহত হয়েছেন।দশমিনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি.কম