বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
মাগুরার শ্রীপুরে রাতের আঁধারে উড়ো চিঠি দিয়ে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে গিয়ে উড়ো চিঠি দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে হামলার ঘটনায় গ্রেফতার আসামীদের জামিন নামঞ্জুর করেছে মাগুরার একটি আদালত। হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান জানিয়ে উড়ো চিঠি দেওয়ার ঘটনায় ২১ জনের নামে থানায় মামালা দায়েরের পর এলাকায় এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে পরবর্তীতে কি হতে পারে এ চিন্তায় নতুন করে শংকা দেখা গেছে। পাশাপাশি আসামীদের পরিবারের লোকজনের মাঝে রয়েছে চাপা ক্ষোভ। এ নিয়ে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সংশ্লিষ্ট দ্বারিয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: জাকির হোসেন কানন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিয়ে গোয়ালদা গ্রামে একটি সভা আহবান করলেও স্থানীয় প্রশাসনের পরামর্শে সেটি হয়নি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এলাকা ঘুরে লোকজনের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা
আজ মঙ্গলবার গ্রেফতারকৃত চার আসামী চৌগাছি গ্রামের মঞ্জুরুল ওরফে মঞ্জু বিশ্বাসের ছেলে ইউসুফ (৩৪), মহেশপুর গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেরে কোরবান (৩৬), দ্বারিয়াপুর গ্রামের মৃত আলীম উদ্দিনের ছেলে হাবিবুর রহমান (৪৮) এবং কচুয়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মোস্তাকিম বিল্লাহ(২৮) কে শ্রীপুর আমলী আদালতে হাজির করা হয়। আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল মেজিষ্ট্রেট মাহাবুবা শারমীন তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে শ্রীপুর থানার ওসি (তদন্ত) লিটন কুমার সরকার জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে উপজেলার ৫ নং দ্বারিয়াপুর ইউনিয়নের চরগোয়ালদাহ ও মালাইনগর গ্রামে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ৫০ টি বাড়িতে নাম-পরিচয় গোপন রেখে চিঠি দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে চিঠি দেয়। যা নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে ক্ষোভ, উৎকন্ঠা ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
এদিকে এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী চৌগাছি গ্রামের ইউসুফ বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেও তার স্ত্রী পর্দার বাইরে এসে কারো সাথে কথা বলবেন না বলে ঘরের ভেতর থেকে জানিয়ে দেন। ইউসুফের বৃদ্ধ পিতা মনজুরুল বিশ্বাস মন্জু বলেন, আমার ছেলে কোনদিন কোন খারাপ কাজ করেনি। ভুল করে ইসলামের দাওয়াত গিয়ে সে এখন জেলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউসুফের এক প্রতিবেশী বলেন, ইউসুফ বিশ্বাসের স্ত্রী সব সময় বাড়ির ভেতরে অবস্থান করেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে মহিলারা তার কাছে বাড়ির ভিতরে কোরআন হাদিস শিক্ষা নিতে আসতো। আশেপাশের লোকজন অনেক দিন তার কোন চেহারা দেখেননি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামী চর-মহেশপুর গ্রামের কোরবান আলীর বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার ভাই জলিলউদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, তাদের জানামতে তার ভাই কোরবান আলী কোন খারাপ কাজ করেনি। কোরবান স্থানীয় মহেশপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরী করেন বলে জানা গেছে।
মামলার আরেকজন আসামী দ্বারিয়াপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ভাতিজা মিজানুর রহমান বলেন, আমার ছোট কাকা হাবিবুর রহমান-এর নামে মামলা হয়েছে বলে শুুনেছি।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) কামরুল হাসান আজ সোমবার বিকেলে জানিয়েছেন, এলাকায় এখন পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। কোন প্রকার অনাকাঙ্খিত ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। নতুন করে কোন আসামীকে পুলিশ আটক করতে পারেনি বলে শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আলী আহমেদ মাসুদ জানিয়েছেন।
মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য মো: সাইফুজ্জামান শিখর কোন ভাবেই ঐ এলাকায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেবেন না বলে সাংবাদিকদের কাছে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন।

মাগুরা/ ২৩ মার্চ ২০২১