Magura River (1)

দেলোয়ার হোসেন
প্রস্তাবেই আটকে আছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মাগুরার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃতপ্রায় কুমার ও নবগঙ্গা নদী খনন কাজ। ফলে নদীদুটিতে জেগে ওঠা চর অপসারণ সম্ভব না হওয়ায় নৌ চলাচল যেমন ব্যাহত হেচ্ছে,তেমনি তীরবর্তী অনেক এলাকায় ফসলী জমিতে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এ পরিস্থতি থেকে উত্তরণের জন্য মাগুরা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস থেকে নদী দুটি’র ১২ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করলেও দীর্ঘ দিনেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

সরেজমিন দেখে গেছে, মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া উভয় নদীর ব্যাপক এলাকা জুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোটবড় চর। এসব চরের ব্যাপক এলাকা জুড়ে চাষ হচ্ছে ধান, গম বিভিন্ন ফসলের। নদী দুটি শুকিয়ে এর প্রশস্ততা কমে যাওয়ায় বর্ষা মৗসুমে পানি উপচে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় বন্যা ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অথচ এক সময় বিশেষত কুমার ও নবগঙ্গা নদীতে বড় বড় স্টিমারসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচলের মাধ্যমে মাগুরার সাথে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে নদী দুটি’র বাণিজ্যিক গুরুত্ব একেবারে নেই বললেই চলে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে অনেক স্থানে মানুষ হেটে পার হচ্ছে। নদী চরের চরের কোন কোন অংশ খেলার মাঠ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

নদী তীরবর্তী মাগুরা সদর উপজেলার বরুনাতৈল গ্রামের হালিম শেখ, একই এলাকার বাহদুর মোল্যা, মাঝিপাড়ার কুমারেশ রাজ বংশী, সম্ভুনাথসহ অনেকেই এ প্রতিনিধির সাথে কথা প্রসঙ্গে জানান , নদী দুটি শীর্ণ হতে হতে এখন একেবারেই মৃতপ্রায়। যে নদীতে এক সময় লঞ্চ, ইষ্টিমারসহ বড় বড় নৌকা চলতো তা বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। নদী মরে এখন শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। নদীতে এখন মাছ নেই বললেই চলে। নদী খনন করে এর প্রাণ ফিরিয়ে জীববৈচিত্র রক্ষার দাবি জানান তারা।

মাগুরা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সুত্রে জানা গেছে, ভারতের উজান থেকে পানি প্রবাহ কমে যাওয়া, ফারাক্কা বাধসহ নদীর বিভিন্ন অংশে বাঁধ ও ব্রীজ নির্মাণ, পলি পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাওয়াসহ নানা কারনে নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। নাব্যতা হারনোর কারণে নদী দুটি’র বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জেগে উঠেছে চর। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্ট ফান্ডের অর্থায়নে’ নদী দুটি‘র ১২ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়। এর মধ্যে কুমার নদীর ৬ কিলেমিটার এলাকা খননের জন্য ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে ২৪ কোটি ৬১ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যায়সহ প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়। এটির খনন কাজ সমাপ্ত করার সময় ধরা হয় ২০১৩ সালের জুন মাস । এছাড়া নবগঙ্গা নদী ৬ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য ২০১৫ সালের জুলাই মাসে ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ৮৩ টাকা ব্যায়সহ একই প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাব পাঠানো হয়। এটির কাজ শেষের সময় সীমা ধরা হয় ২০১৬ সালের জুন মাস। কিন্তু কুমার নদী খননের প্রকল্প প্রস্তাবটি গত ৪ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। একইভাবে নবগঙ্গা নদী খননের প্রকল্প প্রস্তাবেও এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

Magura River (3)

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় নদী দুটির তলদেশে উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাগুরা জেলার সদর উপজেলাধীন বড়বিলা বিল, কৈবিলা বিল, পুটুলিয়া বিল, রূপদাহ বিল এলাকার জমির জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে কুমার ও নবগঙ্গা নদী পুনঃখনন করা একান্ত জরুরী। এটি বাস্তবায়িত হলে এসব এলাকার বন্যার পানি নিষ্কাশন হওয়ার পাশপাশি জমির ফসল রক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জমির নাব্যতা বৃদ্ধি, বন্যাকালীন সময়ে এলাকাবাসীদের নিজ গৃহে অবস্থান করা ও দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি সফল হওয়াসহ প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ৩০ হাজার মেট্রিকটন অতিরিক্ত খাদ্য শস্য উৎপাদন সম্ভব হবে। এ ছাড়া এলাকার আর্থ-সমাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, নদীতে মাছ চাষ বৃদ্ধি, পরিবেশর ভারসাম্য রক্ষাসহ উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের নিরাপদ জীবনযাত্রা নিশ্চিত হবার পাশাপাশি নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ শুষ্ক মৌসুমে নানা কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতে পারবে।

মাগুরা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রভাব পলি পড়ে কুমার ও নবগঙ্গা অনেকাংশেই ভরাট হয়ে গেছে। তবে বর্তমান সরকার নদী গুলো সংরক্ষণের ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। কুমার নদী খনন প্রকল্পটির বিষয়ে মন্ত্রণালকে জানানো হয়েছে। আর ইতিমধ্যে নবগঙ্গা খননের জন্য পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাব পানি সম্পাদ মন্ত্রনালয় থেকে পরিবেশ মন্ত্রনালয়ে স্থানান্তর হয়েছে বলে জেনেছি। আশা করছি প্রকল্প দুটি দাপ্তরিকভাবে গৃহীত হলে নদী খনন কাজ দ্রুত শুরু করা সম্ভব হবে। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়িত হলে জীববৈচিত্র, প্রাকৃতিক ভারসাম্য এবং পরিবেশ রক্ষার পাশপাশি কৃষি জমিতে সেচ কার্যক্রম চালানো ও মানুষের জীবন মানের উন্নয়নে অবদান রাখবে। এর পাশাপাশি মাগুরার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী গুলোর পানি প্রবাহ কিছুটা হলেও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।