বিশেষ প্রতিনিধি: মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
মাগুরা সদরের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রহমান মিয়া (৪৫) ও আলমগীর হোসেন মোল্যা (৪০)। মাগুরা শহরের দুটি সরকারি অফিসে চাকরি করেন। নিজ গ্রাম থেকে বাসে চড়ে  যাতায়াত করে তারা। বাস-টেম্পু যে বাহনেই উঠেন না কেন প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে জীবন বের হয়ে আসার উপক্রম। এই বুঝি বাস উল্টে জীবন যায় এমনই আশংকা নিযে প্রতিদিনই পথ চলতে হয় তাদের।
গত অক্টোবর মাসে ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে চলন্ত বাস থেকে ছিটকে সড়কে পড়ে গুরুতর আহত হয় দুই যাত্রী। তাদের সামনেই ঘটে এ ঘটনা।

হাসিব (১২) ও সজীব (১২) নামের একই গ্রামের দুই বন্ধু পড়ে মাগুরা শহরের একটি স্কুলে। ওই ঘটনায় আতঙ্কিত হাসিব বলে, ‘ছুটির দিন বাদে স্কুলে তো প্রতিদিন যেতেই হয়। রাস্তা যা খারাপ, ভয় লাগে। কিন্তু স্কুল তো আর বাদ দেওয়া যায় না। স্কুলে যাওয়া ও আসাটা আমাদের কাছে রীতিমত আতংকের ব্যাপার।  ’

মাগুরা-নড়াইল সড়কে চলাচলকারি সবাইকেই এভাবেই আতঙ্ক নিয়ে চলতে হয়।  সড়কটি সঠিকভাবে তৈরী ও সংস্কার না করার ফলেই এমন অবস্থা হয়েছে বলে তারা জানান। পিচ উঠে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা।

সড়ক ও জনপথের (সওজ) মাগুরা কার্যালয় সূত্র ও সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাগুরা-নড়াইল সড়কটির দৈর্ঘ্য ৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে মাগুরা অংশে আছে ৩২ কিলোমিটার। মাগুরা শহর থেকে ধলহরা পর্যন্ত নয় কিলোমিটার গত বছরের প্রথম দিকে সংস্কার বা মেরামত করা হয়। কিন্তু একেবারে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় দু-এক মাসের মধ্যেই তা আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এ ক্ষেত্রে ঠিকাদারের পাশাপাশি সওজের কর্মকর্তাদের তদারকের গাফিলতি ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাগুরা সওজের এক কর্মকর্তা মাগুরাবার্তাকে  বলেন, ‘আমরা নিরুপায়। মাগুরা থেকে ধলহরা পর্যন্ত যে ঠিকাদারেরা কাজ পেয়েছিলেন, তারা নামমাত্র কাজ করেন। ঠিকাদারেরা ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় আমরা কাজ ঠিকঠাক বুঝেও নিতে পারিনি। ফলে সংস্কারকাজ এক মাসও টেকেনি।’
ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, সংস্কারকাজের তিন-চার মাস পর সওজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সড়কটি পরিদর্শনে আসেন। ততদিনে সড়কটি আগের চেয়েও খারাপ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পৌছানোর আগেই সওজের স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে সড়কের কিছু কিছু জায়গা মেরামত করান।

সড়কের সাথের বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান শিকদার মাগুরাবার্তাকে  জানান, ‘সড়কটি এখন মাগুরা থেকে মহম্মদপুর উপজেলায় যাতায়াতের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। উপজেলার বিনোদপুরে নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মিত হওয়ায় ধলহরা থেকে সহজেই মহম্মদপুরে যাওয়া যায়। মাগুরা-মহম্মদপুর প্রধান সড়কের চেয়ে এ পথে দূরত্ব অন্তত সাত কিলোমিটার কম। চলাচলের অনুপযোগি হলেও নিরুপায় হয়েই অনেক কষ্ট করে সড়কে যাতায়াত করছেন জনসাধারণ।’

সিরাজুল ইসলাম (৬০) নামের মহম্মদপুরগামী এক বাসযাত্রী  মাগুরাবার্তাকে  বলেন, অসুস্থ মানুষকে নিয়ে এ সড়ক পথে চলাচল দুরূহ ব্যাপার। বিশেষ করে রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। বাস বা অটো লাফাতে লাফাতে চলে। মাত্র ৩০ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টা।

বাসচালক রেজাউল ইসলামমাগুরাবার্তাকে  বলেন, সড়কের দুরবস্থার কারণে এ সড়কে তাদের বিশেষ সাবধানতার সঙ্গে বাস চালাতে হয়। প্রতিদিনই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। ঝাঁকুনির কারণে গাড়ির যন্ত্রাংশ, টায়ার নষ্ট হয়। একবার আসা-যাওয়া করলে আরেকবার যাওয়ার শক্তি থাকে না।’

magura-naril-road-picture-01

ব্যাটারি চালিত অটো চালক আরব আলী মাগুরাবার্তাকে  বললেন, ‘মিরপাড়া মোড় থেকে মান্দারতলা পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। একটু অসতর্ক হলেই গাড়ি উল্টে যাওয়ার ভয় রয়েছে। ঝাঁকুনির কারণে বিপদে না পড়লে কেউ উঠতে চাননা। তাই আমি এখন এই রাস্তার ভাড়া ধরি না।’

মাগুরা বাস মালিক গ্রুপের সাধারন সম্পাদক বাহারুল ইসলাম  মাগুরাবার্তাকে  জানান, ‘প্রতিদিন মাগুরা থেকে মহম্মদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ৩৫টি বাস। আর নড়াইল অভিমুখে যায় ৩৭টি বাস। সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে সবাই চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছন।’

মাগুরা সওজের বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল কবীর তরফদার মাগুরাবার্তাকে  বলেন, ‘আগামী বছরের জুন মাস নাগাদ সড়কের এ অবস্থা থাকবে না। সড়কটি সংস্কারের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’

 

সম্পাদনা: রূপক আইচ, ২১ নভেম্বর ১৬