রূপক আইচ,মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
আজ রবিবার (২৩ জুলাই) মাগুরার বহুল আলোচিত মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়ার দ্বিতীয় জন্মদিন। সন্তানের জন্মদিন প্রত্যেক বাবা মার জন্যই আনন্দের। কিন্তু শিশু সুরাইয়ার ক্ষেত্রে তা একেবারেই উল্টো। দুশ্চিন্তার ঘন মেঘ জমেছে সুরাইয়ার পরিবারে। মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে যাওয়া শিশুটি স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে না। একটি চোখে সে প্রায় কিছুই দেখে না। ডান হাত ও ডান পায়ে শক্তি কম পাচ্ছে। এছাড়া শারীরিক নানা জটিলতায় ভূগছে শিশুটি । সব মিলিয়ে তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে অসহায় এ পরিবারটি। সুরাইয়াকে নিয়ে প্রথম দিকে প্রশাসন, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন মহল যেভাবে সচেষ্ট ছিল। এখন আর তেমন কেউ খোঁজখবর নেয় না।
সুরাইয়ার মা নাজমা বেগম জানান- ঘটনার পর প্রথম প্রথম মন্ত্রী, এমপি, ডাক্তার, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন মহল সুরাইয়াকে দেখতে ও সাহায্য সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছিল। সে সময় তারা সুরাইয়ার সুস্থ হয়ে উঠার সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। কিন্তু ২ বছর পর এখন আর কেউ খোঁজ খবর নেন না। বলতে গেলে গরীব সংসারে অনাদরে অবহেলায় বড় হচ্ছে সুরাইয়া। তার চিকিৎসার জন্য এখন আর কারো কাছ থেকে কোন সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যায় না। ফলে সে ক্রমেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। ডান পায়ে সে শক্তি পায় না। ২ বছর বয়স হয়ে গেল এখনো সে হাটতে শেখেনি। গুলি বের হয়ে যাওয়া ডান চোখের পাতার একটি অংশ ফুলে গেছে। প্রায়ই চোখ লাল হয়ে যায়। ওই চোখে সে ঠিকমত দেখতে পায় না। ডাক্তারারা প্রথম প্রথম তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরে নেয়া লাগলে তা করা হবে বলে জানালেও এখন আর তেমন কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। কিন্তু তার জন্য ব্যায়বহুল চিকিৎসা এ পরিবারটির দ্বারা সম্ভব না। তার জন্মদিন আমাদের কাছে তাই তেমন আনন্দের না। তার পরও আল্লার কাছে শুকরিয়া আমার নাড়ী ছেড়া ধন বেঁচে আছে।
সুরাইয়ার বাবা চায়ের দোকানদার বাচ্চু ভূইয়া জানান- সুরাইয়ার চিকিৎসার জন্য প্রথম দিকে কিছু সহযোগিতা পেলেও এখন আর কেউ তেমন সহযোগিতা করে না। ফলে আমরা ঠিকমত তার চিকিৎসা করাতে পারছি না। মাগুরায় প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সরকার সহযোগিতা করলে হয়তো উন্নত চিকিৎসা করে আমার মেয়েটি সুস্থ্য হয়ে উঠতে পারে।
মাগুরা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের ক্লিনিকাল ফিজিও থেরাপিস্ট ডা. মো: মাসুদুর রহমান জানান- গর্ভে থাকাকালিন সময়ে সুরাইয়ার পিঠে গুলি লেগে পেট থেকে বের হয়ে থুতনি দিয়ে ঢুকে চোখের কোনা দিয়ে বের হয়ে যায়। এত বড় একটা দুর্ঘটনায় তার শরীরে বহুমাত্রিক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তার একটি চোখ প্রায় অন্ধ হয়ে গেছে। তবে দীর্ঘমেয়াদী ফিজিও থেরাপি দিলে তার শরীর আস্তে আস্তে ডেভেলপ হবে। তাকে আমরা থেরাপি ও পুনর্বাস সুবিধা দিচ্ছি। তবে উন্নততর চিকিৎসা করাতে পারলে ভাল হয়।
২০১৫ সালের ২৩ জুলাই দুপুরে মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় একই এলাকার ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলি গর্ভবতী নাজমা বেগমের পেটে লাগে। ওইদিন রাতেই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম হয় সুরাইয়ার। এ সময় গুলিবিদ্ধ সুরাইয়াকে নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তাকে পরদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসার জন্য পাঠালে সেখানে ১মাস চিকিৎসকদের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় বেঁচে যায় শিশু সুরাইয়া। যা চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যতিক্রমী বলে জানান সিজারের মাধ্যমে সুরাইয়াকে ভূমিষ্ঠ করা চিকিৎসক ডা. শফিউর রহমান।
মাগুরা / ২২ জুলাই ১৭