বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
১৯৫৪ সাল। সবেমাত্র গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে নিজ বাড়ি মাগুরায় এসেছেন তিনি। শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেন তাকে খবর পাঠালেন ঢাকা যেতে। দৈনিক ইনসাফ পত্রিকায় সাব-এডিটর পদে চাকরি দিলেন তাকে। কিছুদিন পর ফিরে এলেন মাগুরায়। ঢাকা তার ভাল লাগেনা। এবার পেলেন সরকারি চকরি। স্কুল ইনস্পেক্টর। কিছুদিন পর মাগুরা থেকে বদলি করা হল মেহেরপুরে। ব্যাস, এবার সিদ্ধান্ত নিলেন আর কোন সরকারি চাকরিই করবেন না। তারপর থেকে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে অদ্যাবধি মাগুরার শিক্ষা ও সংস্কৃতি অঙ্গনে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে দীর্ঘ পথ হেঁটে চলেছেন ভাষাসৈনিক খান জিয়াউল হক। স্থানীয়দের কাছে তিনি কাঠু স্যার হিসেবেই অধিক পরিচিত।
১৯২৮ সালের ৮ জুন মাগুরার ভায়না গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তৎকালিন মাগুরা এসডিও কোর্টেরু নাজির আবুল কাশেম খানের পূত্র খান জিয়াউল হক। পিতার চাকরিসূত্রে শৈশব কেঁটেছে নানা জায়গায়। বনগাঁ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করে যশোর জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, কোলকাতা রিপন কলেজে এবং যশোর এমএম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও বিএ পড়েছেন। এমএম ক্লাসে পড়াকালিন সময়ে তিনি পর্যায়ক্রমে ছাত্র সংসদের জিএস ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এসময় তিনি ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫২ সালে যশোর এমএম কলেজে ব্যাপক পুলিশি হামলার পর তিনি মাগুরায় চলে আসেন এবং ভাষা আন্দোলনে অন্যতম সংগঠকের ভুমিকা পালন করেন। ২১ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে মাগুরায় মিছিল বের হলে মিছিল থেকে পুলিশ খান জিয়াউল হকসহ তিনজনকে আটক করে।
শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে মাগুরা মডেল হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন খান জিয়াউল হক। ১৯৬২ সালে মাগুরা এজি একাডেমীতে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দিয়ে চুয়ল্লিশ বছর বছর এ পদে নিষ্ঠার সাধে দায়িত্ব পালন করেন। মূলত: এখান থেকেই জড়িত হন নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে এবং পরিণত হন মাগুরার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্বে। দীর্ঘ ২২ বছর মাগুরা টাউন হলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এ অঞ্চলের থিয়েটার আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা রাখেন। এসময় অসংখ্য নাটকে তিনি অভিনেতা ও নির্দেশক হিসেবে কাজ করেন। চুয়াল্ল্শি বছর মাগুরা সৈয়দ আতর আলী পাবলিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে এটিকে মাগুরার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেন। ১৯৬৫ সালে মাগুরায় সর্বপ্রথম তিনি স্কাউট আন্দোলনের প্রবর্তন করেন। তার উদ্যোগেই এজি একাডেমীতে শুরু হয় মাগুরা দুধ মল্লিক বালিকা বিদ্যালয়, মাগুরা আদর্শ কলেজ, তিন নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম । এছাড়া মগুরা সরকারি মহিলা কলজ, আদর্শ কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বাংলাদেশ স্কাউট্স এর সর্বোচ্চ সম্মান রৌপ্য ব্যাঘ্র, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয় সমাজ কল্যাণ পুরস্কার, নরেন বিশ্বাস পদক, শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক পুরস্কার,আব্দুল হাই গোল্ড মেডেল, হরিশ দত্ত  নাট্য পদক, থিয়েটার ইউনিট নাট্য পদক, জেলা শিল্পকলা একাডেমী পদকসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাাননায় ভূষিত হয়েছেন খান জিয়াউল হক।

৯০ বছরে পা দিয়েও মাগুরার সামাজিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এখনো তার পদচারণা নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করে। জীবনের ৯০ তম বছরে পদার্পণ উপলক্ষে অসংখ্য শুভেচ্ছা আপনাকে।

মাগুরা/ ৮ জুন ১৭