খান নয়ন, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত, গ্রামের গলি পথ থেকে সরূপথ সবটাই কি অদ্ভুত মিল! একটা জটলা, একটু ব্যস্ততা, কিছু উচ্চাভিলাষী মানুষের ছুটোছুটি। মাইকে বারবার বলঁছে “মাথায় নষ্ট মামা”

মাথা নষ্ট না হোক, আমার মাথা নুয়ে আসে। মনে কেঁদে বলে এটা কি আমাদের “বিকশিত মাগুরা”!! এই ক্রন্দন, এত আত্বনার্দ সবই ছিল পুরো মাস জুড়েই। এখন কিছুটা স্বস্তি মিলেছে, তবে সবাই কে চোখ রাঙ্গিয়ে টু স্টার নামের যে অশনি অভিশাপ, তার দায় বহুকাল বইতে হবে এই মাগুরাবাসীকে।

সাধারণত প্রতিটি নিউজে কিছু ছবি ব্যবহার করা হঁয়। ঘটনার কিছু চিত্র তুলে ধরতে। আমার মনে হয় না এই ঘটনার কোন ছবি বা চিত্র দেখানো পাঠকদের খুব জরুরী। সবাই দেখেছে দিনের আলোই আর রাতে কেবল নেটওয়ার্কের সাহায্যে!

Magura Lottery Ticket Pic 2

টু স্টার লটারী। ২০০ এর বেশী বুথ। সকাল থেকে চলছে প্রকাশ্যে বিক্রি আর রাতে ড্র, তাও কেবল নেটওয়ার্কের সরাসরি সম্প্রচার। এর বৈধতা কতটুকু ছিল না জানলেও এর বিচরণ ছিল সমগ্র জেলা জুড়ে। ২০ টাকার লটারী ১০ টাকায়, দিন গডিয়ে রাতেই ড্র। লাখে ৫-৬ লাখ, কখনও বা ১৫০ সিসি পালসার মোটরবাইক বা অন্য নানা লোভনীয় পুরস্কার।

আমি শহরের প্রাণ কেন্দ্রে দেখেছি প্রকাশ্যে মাইকে লটারী বিক্রি করতে। দেখেছি মানুষ আগ্রহ নিয়ে ছয় কালারের টিকিট কিনে পবিত্র দোআকালাম পাঠ করে স্বযত্নে তুলে রাখতে। কেউ দমাতে পারেনি। প্রায় সব পত্রিকায় ছবি সহ সংবাদ প্রচার হয়েছে। প্রশাসনের চোখ হয়তো এডিয়ে গেছে। তাই তখন লিখতে যেয়েও লিখিনি। লিখে কি হবে, তবে বিবেক ভীষণ কেঁদেছিল বলেই হয়তো আজ না লিখে পারলাম না! দুংখিত আমিও এর দায় এড়াতে পারিনা একজন সচেতন বিকশিত মাগুরাবাসী হয়ে!

১০ এপ্রিল, ১৮৬৭ সালে পাবলিক গ্যাম্বেলিং এক্ট বা প্রকাশ্যে জুঁয়া আইন ১৮৬৭ (২নং আইন) এ জনগণ বসবাসরত স্থান বা প্রকাশ্য লোকালয়ে জুঁয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং শাস্তির বিধানও রয়েছে। এছাড়া সকল পবিত্র ধর্মে জুয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জুয়াকে আরবিতে ‘মায়সির’ ও ‘কিমার’ বলা হয়। মায়সির ও কিমার এমন খেলাকে বলা হয়, যা লাভ ও ক্ষতির মধ্যে আবর্তিত থাকে। অর্থাৎ যার মধ্যে লাভ বা ক্ষতি কোনোটাই স্পষ্ট নয়।

একটি গল্প না বললেই না। আমার বাড়ীর পাশে একটি প্রাইমারী স্কুল রয়েছে, সেখানে বাচ্চাদের খেলনা আর ঝালমুডি বিক্রি হঁয়। খুব বিক্রি না হলেও টুকটাক বিক্রি হয়। এক দুপুরে টু স্টার লটারী ভ্যান টি স্কুলটির সামনে আসতেই ঐ শিশু-কিশোর কোমলমতি বাচ্চাদের ভিড। ভ্যানটি ঘিরে রেখেছে। মাইকে বারবার বলঁছে, “মাথায় নষ্ট মামা” লাখে ৫ লাখ! ছোট বাচ্চারা খুব আগ্রহ নিঁয়ে তাদের টিকিট কিনছে। আবার বাচ্চাগুলোদের খেলার ছ্বলে বলতে শুনেছি, “মাথায় নষ্ট মামা”!

সত্যি বলতে আমাদের মাথা নষ্ট হয়েছিল কি না জানিনা, তবে বিবেকের প্রশ্নে খানটির মাথা নত হয়ে গেছে। যেদিন মাগুরা কে “বিকশিত মাগুরা” ঘোষণা করা হয়েছিল সেদিনের পর থেকে একটা আলাদা গর্ব অনুভব করতাম মাগুরা নিয়ে কিন্তু টু স্টার জুঁয়ার অবাধ বিচরণ সে অনুভূতিতে আঘাত করেছে। নিজেকে কিছুটা হলেও অভিভাবক শূন্য মনে হচ্ছে।

সত্যি এইদায় বহুকাল বহন করতে হবে। কোন একদিন হয়তো ঐ কোমলমতি শিশুদের প্রশ্নে নিজেদের বিবেকহীন অভিভাবক বলে মনে হবে। কানের মধ্যে বেঁজে উঠবে, “ঐ মাথা নষ্ট মামা” মাইকিংয়ের প্রতিধ্বনি।

সোহানুজ্জামান খান নয়ন/১ ফেব্রুয়ারী১৭