বিশেষ প্রতিনিধি

মাগুরার কৃতি সন্তান ঢাকা মেডিকেল কলেজের তুখোড় ছাত্রনেতা মো. তোফাজ্জেল হক চয়ন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত অসাম্প্রদায়িক  ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে যেতে চান ডা. চয়ন।

CHAYAN PCI 2

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মত একটি সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ পদে আসীন হওয়ায় তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন মাগুরাসহ সারাদেশের ছাত্রনেতা ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

ডা.মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের পর ছাত্রলীগের উচ্চ পদে আসীন হতে পেরে চয়ন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস. এম. জাকির হোসেনসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের প্রতি।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রেয়ী কার্য নির্বাহী সংসদের ২৮তম সংসদের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়েছে সম্প্রতি ।  এবারের কমিটিতে দীর্ঘ সময় পর মেডিকেল কলেজ থেকে সহ সভাপতির মত বড় পদ পেয়েছেন মাগুরার ছেলে মো. তোফাজ্জেল হক চয়ন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেধাবী এই ছাত্র নেতা দীর্ঘদিন সনামের সাথে রাজনীতি করে আসছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চয়নের পিতা সোনালী কর্মকতা মো মোজাম্মেল হক মাগুরা জেলার বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি। মোজাম্মেল ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে মাগুরা-২ আসনের আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোয়  মোজাম্মেল হককে ২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বর্তমানে সোনালী ব্যাংক এর প্রধান কার্যালয়ে সিনিয়র পিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও আওয়ামী পরিবারে জন্মগ্রহণ করার সুবাদে ছোট বেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ইতিহাস,  জননেত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রামের ইতিহাস, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ সহ দেশের নানা ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু পরিবারের ত্যাগ এওই সবই ইতিহাস নিজের মধ্যে বাল্যকাল থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। নিজের বাবাকে সক্রিয় রাজনীতি করতে দেখে আওয়ামীলীগের রাজনীতির প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হন তিনি।

চয়ন  জানান, বাবার কাছে বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনে শুনে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তীব্র ভাললাগা কাজ করত, মূলত তখন থেকেই অন্তরে মুজিব আদর্শের বীজ রোপিত হয় আমার হৃদয়ে।  তার তীব্রতা এতই বেশী ছিল যে বাল্যকাল হওয়া সত্ত্বেও ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে পাড়া মহল্লার ছোট ছোট ছেলেদের সাথে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী মাগুরা-১ আসনের প্রফেসর ডাঃ এম.এস আকবর এর সমর্থনে প্রচার মিছিলে অংশগ্রহণ করি।

পরে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে পড়ায় কিছুকাল রাজনীতে চ্ছেদ ঘটলেও বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালবাসা দৃঢ় হতে থাকে। চয়নের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে কৃতিত্বের সাথে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন চয়ন। তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছিল শিবির ও বিএনপি পন্থীদের আথড়া। পূর্ব থেকেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি প্রবল ভাললাগার কারনে মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে আমার প্রথম দিন থেকেই শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির পতাকাবাহী বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

এ বিষয়ে চয়ন বলেন, ২০০৬ সালে তৎকালীন বি.এন.পি জামাত সমর্থিত অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যখন কলেজ প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বত্র বি.এন.পি জামাত জোট সমর্থিত কুলাঙ্গার শিক্ষকদের বিরূপ ব্যবহার এবং ছাত্রদল ও ছাত্র-শিবিরের চোখ রাঙ্গানিকে উপেক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী ছাত্র বন্ধুদের পরবর্তীতে ক্যাম্পাসের ছোট ভাইদেরকে সু-সংগঠিত করার মাধ্যমে ছাত্রলীগের পতাকা তলে সকল মুজিব প্রেমী, অকুতোভয় মুজিব সেনাদের একত্রিত করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করি। একদিকে কলেজ প্রশাসন থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের বি.এন.পি-জামাত এর দোসরদের চোখ রাঙ্গানি, বিভিন্ন ধরনের হুমকি অন্যদিকে প্রচণ্ড মানসিক নির্যাতন। তারপরও সকল বাঁধা বিপত্তি মোকাবিলা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে দীর্ঘদিন পরে প্রাণের সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করি। তখন থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি রাজনীতিই আমার একমাত্র নেশা।

তোফাজ্জল হক চয়ন আরো জানান, ২০০৭ সালে ১/১১ পরবর্তী জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। ইতিমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগে মুজিব সৈনিকরা ধীরে ধীরে যখন সুসংগঠিত হচ্ছে ঠিক তখনই ২০০৮ সালের ১১ই এপ্রিল ভোররাতে ছাত্রদল-ছাত্র শিবিরের হায়েনারা সকল ছাত্রলীগের কর্মীদের উপর আতর্কিত হামলা করে। ঐ বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়ে পরবর্তী ২৮ দিন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। তবুও আমরা ছাত্রলীগের মুজিব প্রেমী সৈনিকরা এতটুকু পিছপা না হয়ে পুনরায় সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে পূর্বের তুলনায় আরো বেশী সক্রিয় হই। যার দরুন তৎকালীন বি.এন.পি জামাত সমর্থিত শিক্ষকদের প্রতিহিংসার কারণে প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষা দিতে ব্যর্থ হই। তবুও বিন্দুমাত্র আতঙ্কিত না হয়ে ছাত্রলীগের পতাকা তলে দীপ্ত পদক্ষেপে নিজেদের সংগঠিত করতে থাকি।

পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্যে দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চূড়ান্ত পুনঃপ্রতিষ্ঠা পায়। অমানুষিক নির্যাতন, বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়েও অন্তরে শুধু মাত্র প্রবল মুজিব প্রেম থাকার কারণে কখনও একমুহূর্ত পিছপা হইনি।

চয়ন বলেন, সেই ২০০৬ সালের ক্যাম্পাসের প্রথম দিন থেকে অদ্যবধি মুজিব আদর্শকে আরো বিস্তৃত করতে, দেশরত্ম জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে বাঙ্গালী জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্ঠা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে এই বাংলার মাটি থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের চিরতরে নির্মূল করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

সেই সাথে প্রতিজ্ঞা করছি যে, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে মুজিব আদর্শকে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করতে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে সদা প্রস্তুত থাকব। সহ-সভাপতি পদে আসীন হওয়ার আগে চয়নের রাজনৈতিক পদবী সমূহ: ১ম বর্ষেই চরমভাবে সক্রিয়তার কারণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন চয়ন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের কার্যকরী সংসদের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হই। প্রিতম-রোজেন নেতৃত্ত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম কার্যকরী সদস্য মনোনীত হন তিনি। চয়ন মুক্তাদীর-জুয়েল নেতৃত্ত্বাধীন কমিটির কার্যকরী কমিটির ১ নং সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হই। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি প্রার্থী থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী সংসদের বদিউজ্জমান-সোহাগ এবং সিদ্দীকী নাজমুল আলম নেতৃত্ত্বাধীন কমিটির উপ-স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হই।

তিনি জানান- জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে দিন রাত নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমি জননেত্রীর সৈনিক হিসেবে একু্ট সুখি সুন্দর অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনে কাজ করে যেতে চাই।

মাগুরা জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন সবুজ চয়নের সাফল্য কামনা করে বলেন- চয়ন ভাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকের  দায়িত্বপ্রাপ্ত অবস্থায় আমরা তার বিচক্ষণতার প্রমাণ পেয়েছি। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার এক নিরন্ত আকুতি আছে। যে আকুতি আমাদের শত বাধা উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহস যোগায়। তার সাফল্য ও সুস্থ্যতা কামনা করি। এছাড়া চয়নের সাফল্য কামনা করেন মাগুরা জেলা ছাত্রলীগের উপ আইন বিষয়ক সম্পাদক গৌতম বিশ্বাস, সদস্য শামসুর রহমান, নাজমুল হুদা অমিসহ অন্যরা।

এছাড়া ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি- মাগুরা, বঙ্গবন্ধু পরিষদ মাগুরা, উদীচী মাগুরাসহ  বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তোফাজ্জেল হক চয়নের সার্কিব সাফল্য কামনা করা হয়েছে।