বিশেষ প্রতিনিধি

নমঃ সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।

বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাং দেহি নমোহস্তুতে ।।

শাস্ত্রীয় এই প্রনামমন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে  মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে আজ শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারী) বেলা ১টা ৩৫ মিনিট থেকে শনিবার ১১টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে শ্রী শ্রী স্বরস্বতি পূজা।

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা।   মা সরস্বতী জ্ঞানদায়িনী বিদ্যাদেবী সরস্বতী শ্বেত-শুভ্র বসনা। তার এক হাতে বীণা অন্য হাতে বেদপুস্তক। অর্থাৎ বীণাপানিতে যার তিনি বীণাপানি- সরস্বতী, আর এ থেকেই বাণী অর্চনার প্রচলন।

বিদ্যাদেবীর কৃপালাভের আশায় সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে চলছে সরস্বতী পূজার সাড়ম্বর আয়োজন। 

ধর্মীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষে্দুর পঞ্চমী তিথিতে সাদা রাজহাঁসে চড়ে বিদ্যা ও জ্ঞানদাত্রী দেবী সরস্বতী পৃথিবীতে আসেন।

মহল্লায় মহল্লায় পূজামণ্ডপে পূজার্থীরা মায়ের পাদপদ্মে অঞ্জলি দেবেন। দেবীর সামনে ‘হাতেখড়ি’ দিয়ে শিশুদের বিদ্যাচর্চার সূচনা হবে অনেক স্থানে। এছাড়া কিছু মণ্ডপে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

পূজা অর্চনার জন্য মাগুরার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিদ্যাপীঠে বর্ণিল আয়োজন ও সাজসজ্জা হয়েছে।

বেচা-কেনা চলছে পূজার অন্যতম উপকরণ- ফলমূল, ফুল, বেলপাতা, খই-মুড়ি-মুরকী-বাতাসা-নাড়ু। তবে পূজা প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয় নিরামিষসহ লুচি বা খিচুড়ি। অনেকে কিনবেন জোড়া ইলিশ। কেননা অনেকেই দুর্গাপূজা থেকে সরস্বতী পূজা পর্যন্ত ইলিশ খান না। অপেক্ষায় থাকেন সরস্বতী পূজা অবধি। তেমনি বিদ্যার্থীরা সরস্বতী পূজার আগে কূল বা বড়ইও খান না।

বিদ্যার দেবী, জ্ঞানের দেবী বলেই বৈদিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত তিনি হিন্দুধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী। হিন্দুরা বসন্ত পঞ্চমী (মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমী তিথি) তিথিতে সরস্বতী পূজা করে থাকেন। এদিন শিশুদের হাতেখড়ি হয়।

জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী হিসেবে ভারতের বাইরে জাপান, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মায়ানমারেও সরস্বতী পূজার চল আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পূজা হয়ে থাকে। কালপরিক্রমায় এ পূজা ব্যক্তি ও পরিবারের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বাঙালি হিন্দুদের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে ক্রমশ এক সার্বজনীন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের রূপ লাভ করেছে।

ত্রিশ দশক আগে সরস্বতী পূজার দিন ছিল অন্যরকম। এদিন প্রেমিক-প্রেমিকরা দেখা করার ও নিজেদের মনের ভাব প্রকাশের সুযোগ পেতেন। প্রচুর চিঠি আদান-প্রদান হতো।

এদিন কিশোরী প্রথম শাড়ি পরে অচেনা নারী হয়ে উঠতো। সরস্বতী পূজা জ্ঞানের দেবীর আরাধনা হলেও এর পেছনে রয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভগবৎ আরাধনার এক বিশেষ পদ্ধতি।

হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থে সরস্বতীর রূপ- মাহাত্ম্য বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। বেদ, পুরাণ ও বিভিন্ন শাস্ত্রীয় গ্রন্থে সরস্বতীর নানান রূপ ও প্রকৃতির বর্ণনা পাওয়া যায়।

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে সরস্বতীর মাহাত্ম্য যেভাবেই বা যে রূপেই তুলে ধরা হোক না কেন, বাঙালি হিন্দু সংস্কৃতিতে সরস্বতীকে বিদ্যার দেবী হিসাবে পূজা করা হয়ে থাকে। বিদ্যার দেবী মানুষকে আলোকিত করে, মনুষত্বের চোখ খুলে দেয়।

হিন্দু সম্প্রদায় সরস্বতীর যে মূর্তি পূজা করে সেই সরস্বতীর রূপ দ্বিভূজা, শ্বেত বরণী, শ্বেতাম্বরা, শ্বেতদল বাসিনী, শ্বেত হংসবিহারিণী ও বীণা পুস্তক- কমলধারিণী।