রূপক আইচ, মাগুরা
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কাদিরপাড়া ইউনিয়নে নকল সার ও এন্টাকল নামের একটি ছত্রাক নাশক এর নকল পণ্য ব্যবহার করে এ এলাকার অন্তত ছয়টি গ্রামের শতাধিক কৃষকের পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। শতাধিক একর জমির পেয়াজ গাছ পচে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার ফসল। এ ক্ষতি পূরণের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানিয়েছেন ওই এলাকার কৃষকরা। সরেজমিনে কৃষকের ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, যে সময় পুরো মাঠ ভরা থাকার কথা পেয়াজ গাছে। সেখানে গাছ নষ্ট হয়ে গিয়ে এখন শুধুই আগাছার বাড়ন্ত। কমলাপুর গ্রামের কৃষক মোঃ ইবাদত আলী জানান, তার ৬০ শতক জমিতে পেয়াজের আবাদ করেন। মাটিকাটা গ্রামের সার ও কিটনাশক এর ব্যবসায়ী আলী আজগর খান এর খান ট্রেডার্স নামক দোকান থেকে এন্টাকল নামে একটি ওষুধ নিয়ে এসে মাঠে দেয়ার পরপরই গাছগুলি মরে গোড়া পঁচে যেতে শুরু করে। পরে আরও বেশকিছু ওষুধ ব্যবহার করলেও সেগুলিতে কোন কাজ হয়নি। একইভাবে ওই গ্রাম ও পাশর্^বর্তী অন্তত ৬টি গ্রামের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এ এলাকার কৃষক মোঃ শরিফুল ইসলাম, মিল্টন মল্লিক, বাবু মল্লিক, জুবায়ের শেখসহ একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন, খান ট্রেডার্সের মালিক আলি আজগর ও তার ছেলে বেশ কয়েকজন কর্মচারি রেখে নিজ বাড়ির মধ্যে একটি নকল সার ও কিটনাশকের কারখানা গড়ে তোলে। ওই কারখানা থেকে নকল সার ও কিটনাশক চাষিদের কাছে বিক্রি করেছে। যা ব্যবহার করে এ এলাকার কমলাপুর, ঘাসিয়াড়া, মাটিকাটা, গোয়ালবাড়ি, বিষ্ণুপুর, দোরাননগরসহ বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১শ কৃষকের ক্ষেতের পেয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের ওষুধ যে নকল ও ক্ষতিকর তার প্রমাণ পাওয়া গেছে হাতে হাতে। তারা দেখান যেসকল কৃষক ওই দোকান থেকে ওষুধ ও সার কিনেছে তাদেরই পেয়াজ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। একই সময় যারা অন্য দোকান থেকে ওষুধ কিনেছেন। তাদের গাছ বড় হয়েছে এবং সেখানে সুন্দর ফসল পাওয়া গেছে। একই মাঠে পাশাপাশি দুই ক্ষেতে দুরকম ফলনই এখানে স্পষ্ট প্রমাণ। কৃষকরা দাবী করেন, যেহেতু কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের যৌথ অভিযানে আলী আজগরের বাড়ির ভেতরে নকল সার ও কিটনাশকের কারখানা পাওয়া গেছে। তাদের ১লাখ টাকা জরিমানা ও ৬মাসের জেল দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। কিন্তু ওই নকল ওষুধ প্রস্তুতকারীদের কাছ থেকে ওষুধ ও সার কিনে যেসব কৃষক সর্বশান্ত হয়েছেন তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। প্রয়োজনে খান ট্রেডার্সকে বাধ্য করতে হবে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে। বুল মোল্যা নামে ঘাসিয়াড়া গ্রামের এক কৃষক দুঃখ করে বলেন, এনজিও থেকে কিস্তির মাধ্যমে টাকা নিয়ে আমি ৮০শতক জমিতে পিয়াজ চাষ করেছি। নকল ওষুধের ব্যবহার করায় মাঠের পেয়াজ পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমার ১কেজি পিয়াজও উৎপাদন হবে না। এখন আমি কিভাবে সংসার চালাবো আর কিভাবে আর কিস্তির টাকাইবা কিকরে শোধ করবো?Magura Onion Farming Prob Pic 2
এ এলাকার বর্তমান ইউপি সদস্য ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও মো শিহাব উদ্দিন বলেন, কৃষকের সরলতার সুযোগ নিয়ে নকল সার ও কিটনাষক বিক্রি করে একটি মহল টাকার পাহাড় গড়ছে। কিন্তু কৃষি বিভাগের লোকজন এসবের কোন খোঁজখবরই নেন না। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পর দেন দরবার শুরু করলে সরকারি অফিসারেরা মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে কিছুটাকা জরিমানা করে সরকারের কোষাগারে জমা দেন। কিন্তু সাধারণ কৃষকের ক্ষতিপূরণের কি ব্যবস্থা? তাদের যে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেল তার তো কোন ব্যবস্থা হলো না। উপরন্তু খান ট্রেডার্সের মালিকের ছেলেরা গ্রামের কৃষকদের উপর হুমকি ধমকি দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, শ্রীপুর উপজেলায় এ বছয় ৬শ হেক্টর জমিতে পেয়াজ আবাদ হয়েছে। এসেব কৃষকরা এন্টাকল নামেও ওই ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে অভ্যস্ত। কিন্তু নকল সার ও ছত্রাকনাশকের খবর পেয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেসার্স খান ট্রেডার্সে অভিযান চালিয়ে সেখানকার মালিককে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৬মাসের জেল ও নগদ ১লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কৃষকদের ক্ষতির বিষয়টি আমরা জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভা ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

রূপক /মাগুরা /২১ মার্চ ২২