সরেজমিন…..

বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

গত ৭ মে স্থগিত হওয়া ইউ পি নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতায় শালিখার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের সাবেক খাটোর গ্রামে আজ এক মসজিদের ইমামকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে প্রতিপক্ষরা। পুনরায় হামলা মামলার ভয়ে মাগুরার শালিখা উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের ৪ গ্রামের শতাধিক পরুষ এলাকা ছেড়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে ওই এলাকার সাবেক খাটোর গ্রামে শিমুল মোল্যা নামে এক যুবককে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করার পর এ অবস্থা আরো ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। গোটা এলাকায় চলছে ভয়ানক আতংক। শিমুল স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম ও আওয়ামীলীগ কর্মী মোহন মোল্যার ছোট ভাই।

গত ৭ মে অনুষ্ঠিত গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী আব্দুল হালিম ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ ফিরোজের পক্ষে বিপক্ষেঅবস্থান নেয়া নিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ এলাকায় আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামীলীগ। নেপথ্যে কলকাঠি নাড়াচ্ছেন সোনা কাজী নামে বিএনপির এক ধনাঢ্য নেতা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে রামান্দকাটি, সাবেক খাটোর, খাটোর, বামনখালি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাড়িতেই পুরুষ মানুষ নেই। বন্ধ রয়েছে স্থানীয় বাজারগুলো। অন্তত ২০টি দোকানপাটে ঘটেছে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা। গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদের আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ ফিরোজ ও শালিখা উপজেলা বিএনপি’র বিদ্রোহী গ্রুপের সাবেক সভাপতি সোনা কাজির লোকজন এসব হামলা লুটপাট চালিয়েছে বলে ভূক্তভোগীরা জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনের দিন মধ্যরাত থেকে শুরু করে গত তিনদিন প্রতি রাতেই বেশকিছু সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী এসব গ্রামে এসে তাদেরকে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। কারণ হিসেবে ভূক্তভোগীরা জানিয়েছে, এ ইউনিয়নের বামনখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহণ স্থগিত থাকার ফলে ফলাফল গোটা ইউনিয়নের ফলাফল স্থগিত রয়েছে। অন্যান্য কেন্দ্রের মোট ভোটে দুই আওয়ামীলীগ প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ২৭৮। অন্যদিকে নির্বাচনের দিন সহিংসতার কারণে স্থগিত বামনখালি কেন্দ্রটি আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী আব্দুল হালিমের নিজ গ্রামে হওয়ায় সেখানে মোট ১৪শ ভোটের মধ্যে বেশীর ভাগ ভোট তার পাবার কথা। ফলে তার বিজয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে রয়েছে এমন আশংকায় ওই এলাকা  থেকে তার সমর্থকদেরকে বাড়ি ছাড়া করতেই এসব হামলা ও হুমকির ঘটনা ঘটাছে প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী। এরই এক পর্যায়ে আজ সকালে রামানন্দকাঠি মসজিদের ইমাম মো: শিমুল হোসেনের উপর হামলা চালিয়ে তাকে মারাত্মক জখম করায় নতুনকরে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। সাবেক খাটোর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, আয়ুব মাষ্টার, জুয়েল, সাত্তার, সামাদ মিয়া, মুরাদসহ একাধিক ব্যক্তি ওই এলাকার সামসুদ্দিনের বাড়ির পাশে শিমুলকে ডেকে নিয়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। তাকে আশংকা জনক অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিমুল সাবেক খাটোর গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা মোহন মোল্যার ছোট ভাই। নির্বাচনে মোহন মোল্যা নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার কারণে শিমুলকে একা পেয়ে সকালে এ হামলা চালায়।

বামনখালি গ্রামের বাসিন্দা চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হালিমের ভাতিজা ও কুচিয়ামোড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান- গত তিনদিন যাবত প্রতিপক্ষ শেখ ফিরোজ ও সোনা কাজির লোকজনের ভয়ে তিনি স্কুলে যেতে পারছেন না। বাড়ি থেকে বের হলেই তার হাত পা কেটে দেয়া হবে এমন হুমকি দিচ্ছে ওই সন্ত্রাসীরা।

একই গ্রামের ডালিয়া বেগম জানান- আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কারণে সোমবার রাতে একদল সন্ত্রাসী তাদের বাড়িতে এসে তার ছোটভাই আসাদুজ্জামানকে অপহরণের হুমকি দিয়ে গেছে। সে এখন ভয়ে বাড়িছাড়া।

ওই গ্রামের আয়ুব আলী জানান- সোনা কাজির লোকজনের হুমকিতে তিনি তিনদিন যাবত সাবেক খাটোর বাজারে নিজের দোকান খুলতে পারছেন না।

একই এলাকার আয়ুব হোসেন, ইমদাদ মোল্যা, রাকিবুল ইসলামসহ কমপক্ষে ১০জন একই ধরণের অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে ভূক্তভোগী চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হালিম জানান- ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে যোগ দেবার কারণে তার সাথে সাবেক এমপি ও মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী সালিমুল হক কামালের ছোট ভাই সোনা কাজির বিরোধ শুরু হয়। এ বিরোধ সূত্রেই তার নামে ২০০১ সালে খুনের মিথ্যা মামলাসহ একাধিক মামলা দেয়া হয়েছে। এছাড়া নানাভাবে হয়রানি ও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান ইউপি নির্বাচনে সোনা কাজি তার প্রতিপক্ষ প্রার্থী শেখ ফিরোজের পক্ষ নিয়ে এসব হামলা ভাংচুর ও সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। তিনি একাধিকবার পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না।

Magura Shalikha pic 1

তিনি আরো অভিযোগ করেন, এই সোনাকাজি ১৯৯৪সালের আলোচিত মাগুরা-২ উপনির্বাচনে চরমপন্থী সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী দিয়ে গোটা নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ও তার চাচাতো ভাই কাজী কামালকে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে বিজয়ী করেছিল। যা নিয়ে আওয়ামীলীগ দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তৎকালিন বিএনপি সরকারের পতন ঘটায়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের এসআই মবিনুর রহমান হামলার সত্যতা স্বীকার করে জানান- নির্বাচন ঘিরে আওয়ামীলীগের দুই পক্ষে এ ধরণের বিরোধপূর্ণ অবস্থা তৈরী হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে গোটা এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে  সোনা কাজি মোবাইলে সাংবাদিকদের জানান – নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দুই প্রার্থীর বিরোধ নিয়েই এসব ঘটনা ঘটেছে। এখানে তিনি কিংবা তার লোকজনের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

অপরদিকে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ ফিরোজ তার বিরুদ্ধে আনিত আব্দুল হালিমের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।