Main Menu

মাগুরায় আজ থেকে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা

Magura Kartyani Puja Pic 01

রূপক আইচ, মাগুরাবার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
লাখ দর্শনার্থীর অংশগ্রহণে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা আর ধর্মীয় ভাব গাম্ভির্যের মধ্য দিয়ে মাগুরায় আজ বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা উৎসব। দূর্গা পূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও মাগুরায় কাত্যায়নী পূজাই প্রধান ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের আয়োজনে এ পূজা অনুষ্ঠিত হলেও এটি মাগুরার ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। উৎসব উপলক্ষে ইতিমধ্যেই শহর সেজেছে বর্ণিল সাজে। শহরের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা করা হয়েছে দৃষ্টি নন্দন গেট, প্যান্ডেল, মন্দিরসহ সারা শহরে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। মন্দির গুলো সাজানো হয়েছে প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্যের স্থাপত্য কলা ও বিভিন্ন থিমের উপর ভিত্তি করে।
এ বছর জেলায় মোট ৯১টি মন্ডপে কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে পূজার মূল আকর্ষণ থাকবে পৌরসভা এলাকার জামরুল তলা, নতুনবাজার, ছানার বটতলা, বাটিকাডাকা, সাতদোহা, নিজনান্দুয়লী, পারনান্দুয়ালীসহ পৌরসভার ১৫টি মন্ডপে। এর বাইরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৭৬টি মন্ডপে যাকজমকপূর্ণভাবে এ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থ নিয়েছে। ইতিমধ্যে তারা নিজ নিজ আঙ্গিকে একাধিকবার মিটিং করেছেন। পূজা নির্বিঘ্ন করতে নিয়েছেন বিভিন্ন সিদ্ধান্ত।
প্রতিবছর শারদীয় দুর্গা পূজার একমাস পরেই জাঁকজমকপূর্ণভাবে মাগুরাতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আগামী ৩০ অক্টোবর দশমী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৫দিন ব্যাপী এ পূজা শেষ হলেও শহরের নতুন বাজার ও ছানার বটতলায় মেলা চলবে আরো ১৫ দিন। যেখানে থাকবে বিভিন্ন ধারনের ফার্নিচারসহ নানা সামগ্রী পাশপাশি গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা আয়োজন। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরাও এ মেলায় অংশ নিতে ইতিমধ্যেই পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
মাগুরা জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব কুন্ডু জানান,  বৃটিশ আমল থেকে শহরে পারনান্দুয়ালি এলাকার সতীশ মাঝি নামে এক ব্যবসায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম এ পূজা শুরু করেন। পেশায় তিনি ছিলেন মুদি দোকানী। ৮০ দশকে এ পূজা কেবল মাগুরা শহরের ছানার বটতলা, নিজনান্দুয়ালি, নতুন বাজার, বাটিকাডাঙ্গা এবং জামরুল তলার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু গত দুই যুগে এর ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। বর্তমানে এ পূজা মাগুরা জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব হিসেবে দুর্গা পূজার আমেজকেও ছাড়িয়ে গেছে।
শাস্ত্র মতে, দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের আগে গোপবালারা  শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর, বন্ধু, স্বামী, পুত্র হিসাবে আরাধনা করতেন। তাদের এক মাসব্যাপি আরাধনা সে সময় কাত্যায়নী পূজা হিসেবে চিহ্নিত হতো। যার সময়কাল ছিল কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস। প্রতিমা স্থাপন থেকে শুরু করে দূর্গাপূজার আদলেই সবকিছু হতো। তবে অতিরিক্ত হিসেবে দেবী দুর্গার কোলে শ্রীকৃষ্ণের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। যার অর্থ দেবী দুর্গার আরাধনার মাধ্যমে কৃষ্ণের সান্নিধ্য পাওয়া। যেটি কাত্যায়নী পূজার ধর্মীয় যোগসূত্র।Magura
মাগুরায় এই বর্ণিল পরিবেশের উৎসবে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লাখ লাখ দর্শনার্থীদের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী নেপাল ও ভারত থেকেও ছুটে আসেন উৎসাহীরা ভক্তরা। এলাকার প্রতিটি বাড়িতে আত্মিয় স্বজন আসেন পূজা দেখতে।
মাগুরার পুলিশ সুপার মুনিবুর রহমান মাগুরাবার্তাকে জানান,  মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য শহরে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পোশাক ও সাদা পোষাকে পুলিশের  সার্বক্ষনিক টহলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
কাত্যায়নী পূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও গত তিন দশকে এটি মাগুরার সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। যেখানে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ সানন্দে অংশ নিয়ে থাকেন।

মাগুরা /২৬ অক্টোবর ১৭






Comments are Closed