মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মহম্মদপুর:
মাগুরাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। জেলার মহম্মদপুর উপজেলার পূর্বপাশ দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার শাখা মধুমতির নদীর উপর দিয়ে শেখ হাসিনা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতলয়ে। রাতদিন সমান তালে চলছে সেতুর নির্মাণযজ্ঞ। ইতিমধ্যে ৬০% কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের ৫ মাস আগেই এ বছরের ডিসেম্বর নাগার সেতু সবার জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে আশা করছেন নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বহুল কাঙ্খিত ও প্রতিক্ষিত সেতুর নির্মাণ শেষ হলে মাগুরা-নড়াইলের সাথে প্রতিবেশি ফরিদপুরের সাথে মেলবন্ধন তৈরি হবে। ‘শেখ হাসিনা সেতু’ মধুমতি নদীর দুই পারের লাখ লাখ মানুষের যোগাযগ ও কর্মসংস্থানসহ জীবনমান বৃদ্ধির আশার সঞ্চার হবে।
মহম্মদপুর উপজেলা এলজিইিডি সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৭ নভেম্বর উপজেলা সদরে মধুমতি নদীর বাঁশতলা খেয়া ঘাট এলাকায় ৬০০ দশমিক ৭০ মিটার পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন মাগুরা-২ আসনের সাংসদ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার। ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর পায় কার্যাদেশ পায় ম্যাক্স-রেনকিন নামের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাটি পরীক্ষা ও মার্চ মাসে সেতুর মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৫৯ কোটি ৯০ লাখ ৩৪ হাজার ৭০৫ টাকা ২৫ পয়সা ব্যয়ে কার্যাদেশের ১৮ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
সূত্র জানায়, সেতুরমোট দৈর্ঘ্য ৬০০ দশমিক ৭০ মিটার, প্রস্থ ৯ দশমি ৮০ মিটার। ১৫০টি পাইল, ১৫টি স্প্যান, ৭৫টি গার্ডার রয়েছে। ইতিমধ্যে সেতুর ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই সেতুর কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন নির্মাণ সংস্থার কর্তা ব্যক্তিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মধুমতি নদীর দুই পারে নির্মাণযজ্ঞ চলছে। রাত-দিন এখানে সমান। নির্মাণ উপকরণ আর সামগ্রীতে দুই পার ঠাসা। ক্রেন হ্যামার ও মিক্সারসহ ভারি যন্ত্রপাতি ব্যহার করা হচ্ছে নির্মাণ কাজে। কয়েক হাজার শ্রমিক রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন। নির্মাণ কাজ দেখতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভীড় জমাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘শেখ হাসিনা সেতু’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভারী যানবাহনগুলোর গতি পরিবর্তন করে খুলনা-যশোর মহাসড়কের যানজট হ্রাস করাও সম্ভব হবে। অন্যদিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যানবাহন এড়িয়ে মাগুরা, নড়াইল ও যশোরের একাংশের মানুষ দ্রুত ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে। দূরত্ব কমবে ৫০ কিলোমিটার। ভবিষ্যতে এই এলাকা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পকিল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা ব্রীজ নির্মাণ শেষ হলে রাজধানিতে যাতায়াতে যুগান্তকারি পরিবর্তন আসবে। এ সেতুটি দিয়ে এ এলাকার মানুষ পদ্মা সেতুতেও সংযুক্ত হতে পারবে।’
সেতুসংলগ্ন জাঙ্গারিয়া গ্রামের প্রধান শিক্ষক এ.কে.এম নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই সেতু নির্মাণ হওয়ায় কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের জনগণ তাদের উৎপাদিত পণ্য স্বল্পসময়ে কম খরচে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে পারবে। তা ছাড়া উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এলাকার মানুষের দ্রুত আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে।’
মহম্মদপুরের ছাত্রনেতা পংকজ রায় বলেন- এ এলাকার মানুষের শত বছরের স্বপ্নের বাস্তবায়ন শেখ হাসিনা সেতু। এজন্য আমরা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদারকে ধন্যবাদ জানাই।
সদরের বাসিন্দা আনিসুর রহমান জানান, ‘এটি মানুষের কাছে স্বপ্নের সেতু। এলাকার মানুষ অধীর আগ্রহে দিন গুনছে কখন সেতুটি উদ্বোধন হবে। এ সেতু নির্মাণের ফলে মাগুরা, নড়াইল, জেলার মানুষ ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কম খরচে স্বল্পসময়ে ও সহজে যাতায়াত করতে পারবেন।’
মাগুরা -২ (মহম্মদপুর-শালিখা) আসনের সাংসদ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার বলেন, ‘মধুমতি নদীর উপর সেতু নির্মাণ আমার অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। সেতুর উপর দিয়ে জনগণের হাত ধরে হেটে পার হওয়া আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নিতে যাচ্ছে।
মহম্মদপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী মোহাঃ রবিউল ইসলাম বলেন, ‘মধুমতির উপর সেতু নির্মাণশেষ হলে স্বপ্ন ও বাস্তবের দূরত্ব কমে আসবে। এইসেতু ঘিরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে।
গড়াই,মধুমতি, কুমার, চিত্রা, নবগঙ্গা, ফটকী ও মুচিখালী নদী বিধৌত জনপদ মাগুরা। স্বাধীনতার পর থেকে চরম উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার অবহেলিত এই জনপদ। যোগাযগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ‘শেখ হাসিনা সেতু’ খুলে দেবে সম্ভাবনার নতুন দোয়ার। বদলে যাবে মাগুরা। তাই নির্মিতব্য সেতুকে ঘিরে আশা-আকাক্সক্ষা ও প্রবল উদ্দীপনার সঞ্চার হয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের মনে। এখন শুধু মধুমতির দুই তীরের মতো স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে মেলানোর জন্য অপেক্ষা।