স্টাফ রিপোর্টার
মাগুরা পৌর মেয়র ও পুলিশ সুপারের আহবানে সাড়া দিয়ে মাগুরা শহরের মাদক পল্লী হিসেবে পরিচিত নান্দুয়ালী এলাকার ২০ জন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ি তাদের দীর্ঘদিনের পেশা মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গিকার করেছেন। এটি ছিল গত পৌর নির্বাচনে পৌর মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।

বৃহস্পতিবার রাতে ওই মাদক ব্যবসায়ীরা মাগুরার পুলিশ সুপারের বাস ভবনে গিয়ে তার কাছে আর মাদক কেনা বেচার সঙ্গে জড়িত না থাকার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন। এ সময় পুলিশ সুপার একেএম এহসান উল্লাহ তাদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেন।

মাদক ব্যবসায়িদের জীবন ধ্বংসকারী সমাজ বিরোধী অবৈধ এ ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে উদ্বুদ্ধ করার কাজে সহযোগিতা করেছেন মাগুরা পৌর-সভার ৭ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর সাকিবুল হাসান তুহিন।

সদ্য সমাপ্ত পৌর-নির্বাচনের আগে নব-নির্বচিত এ দুজন প্রতিনিধিরই প্রতিশ্রুতি ছিল মাগুরা শহরের নান্দুয়ালীকে মাদক মুক্ত করার। শপথ নেওয়ার আগেই পুলিশ সুপারের উদ্যোগে সাড়া দিয়ে পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর তাদের নির্বাচনী অঙ্গিকার বাস্তবায়ন করায় খুশি হয়েছে এলাকাবাসি।

স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ২০ মাদক ব্যবসায়ি হচ্ছেন- শাহিনুর, শাহিন, জাহিদ, রাজ্জাক, মোঃ আলী, আলম, রসুল, রাশেদ, মনিরুল, সোহেল, মজনু, রেজাউল, কাশেম, বাশার, আমিরুল, রফিক, সলেমান, আইয়ুব, ডালু ও মুক্তার। যাদের নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। অধিকাংশরা বিভিন্ন সময়ের মাদকসহ গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন।

স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা মাদক ব্যবসায়িদের মধ্যে কাশেম (৫০) জানান, তিনি অত্যন্ত গরীব মানুষ। ঘরে থ্যলাসামিয়া আক্রান্ত ৩ টি মেয়ে রয়েছে। জীবিকার তাগিতে তিনি মাদক ব্যবসা করতেন। তবে সম্প্রতি মাদক ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে পুলিশের ব্যাপক অভিযানে অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ি গ্রেফতার হয়েছেন। অনেকে জেলে আছেন আবার অনেকে জামিনে জেল থেকে বের হয়ে পুলিশী অভিযানের কারনে মাদক ব্যবসাতো দূরের কথা বাড়ি ঘরে থাকতে পারছেনা। এর মাঝে পৌর মেয়রের তাকে সহ এলাকার মাদক ব্যবসায়িদের অবৈধ ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পরামর্শ দেন।

মাগুরার নব নির্বাচিত মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল জানান, পুলিশ সুপার মাদক ব্যবসায়িদের ভাল হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। প্রয়োজনে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা মাদক ব্যবসায়িদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনিসহ এলাকার ২০ মাদক ব্যবসায়ি পুলিশ সুপারের কাছে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গিকার করেছেন।

পুলিশ সুপার এহসান উল্লাহ জানান, তিনি মাগুরা জেলায় যোগদানের সময় অঙ্গিকার করেছিলেন, এ জেলাকে মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত করার। জেলার রাজনীতিবিদ, সামাজিক নেতৃবৃন্দর সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে তিনি বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিরোধী সভা, সমাবেশ শুরু করেন। মাদক ব্যবসায়ি, সেবনকারি ও সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করতে শহরে ২০ টি স্থানে চেক পোষ্ট বসিয়ে চেকিং এবং ৪০ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেন। পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়িদের তথ্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে অব্যহত অভিযান চালাতে থাকেন। প্রায় প্রতিদিনই মাদকসহ গ্রেফতার হতে থাকে একের পর এক মাদক ব্যবসায়ি। এ অবস্থায় মাদক ব্যবসায়ি ও সেবনকারিরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। আগে যেখানে জেলায় বছরে একশ’ মাদক মামলা হতো, এখন ছয় মাসেই মাদক মামলার সংখ্যা দুই শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে অব্যহত মাদক বিরোধী অভিযানের পাশাপাশি তিনি মাদক ব্যবসায়িদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুয়োগ দিয়েছেন। এ জন্য তিনি রাজনীতিবিদ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য নিয়ে কাজ করছেন। যার সুফল হিসেবে পৌর মেয়রের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার রাতে ২০ মাদক ব্যবসায়ি তার কাছে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গিকার করেছেন।

তিনি ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি, জেলা প্রশাসন, পৌর মেয়র, সমবায় ও সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং রাজনীতিদের সহায়তা নিয়ে তাদের কাজের ব্যবস্থাসহ পুণর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছেন।

পৌর মেয়র আরো জানান, যুব সমাজকে ধংসের হাত থেকে বাঁচাতে তিনি নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন মাগুরা শহরকে বিশেষ করে নান্দুয়ালী এলাকাকে মাদক মুক্ত করবেন। পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় তিনি শপথ নেওয়ার আগেই সে কাজ শুরু করেছেন। তার এ প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে।

নান্দুয়ালী বিশ্বাস পাড়া মসজিদ এতিমখানার মাদ্রাসার সভাপতি আকরাম বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তার এলাকা মাদকে জর্জরিত ছিল। পুলিশের অভিযানে সম্প্রতি এলাকায় মাদক ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পথে। তবে সর্বশেষ পৌর মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলরের উদ্যোগে পুলিশ সুপারের আহবানে সাড়া দিয়ে এলাকার মাদক ব্যবসায়িরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গিকার করায় তারা খুশি। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন যদি একত্রি হয়ে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন তবে সমাজ থেকে সব অন্যায়, অনিয়ম দুর করা সম্ভব।