বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মাগুরা জেলার বিনোদপুর ও ধলহরা এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোপন সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে। তাদের লক্ষ্য—মাগুরা জেলায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় মাদক চক্রের শীর্ষ অপরাধীদের গ্রেফতার করা এবং এলাকাটিকে মাদকমুক্ত করার পথে অগ্রসর হওয়া। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন হাসান, ক্যাপ্টেন রিফাত এবং লেফটেন্যান্ট শাহরিয়ার। রাত ১০টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এই উত্তেজনাপূর্ণ অভিযানে পুরো এলাকায় নতুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
অভিযান শুরুর পরিকল্পনা:
মাগুরার বিনোদপুর ও ধলহরা এলাকায় মাদক চক্রের আস্তানা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সূত্রে তথ্য পাওয়া যায়। স্থানীয়দের কাছে মাদক চক্র ছিল এক আতঙ্কের নাম; বছরের পর বছর ধরে চক্রটি মাদক ব্যবসার জাল বিস্তার করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এই চক্রের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে এবং তিনটি পেট্রল দল—ক্যাপ্টেন হাসান, ক্যাপ্টেন রিফাত এবং লেফটেন্যান্ট শাহরিয়ারের নেতৃত্বে এলাকায় প্রবেশ করে।
প্রথম সাফল্য: শিল্পি বেগমের গ্রেফতার
রাত ১০টার দিকে অভিযান শুরু হয়। প্রথমেই ধরা পড়েন শিল্পি বেগম (৩৫), যিনি এই মাদক চক্রের মূল হোতা জিগলুর স্ত্রী। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন। শিল্পি বেগমের গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়, যা অভিযানকে আরও সাফল্যের দিকে এগিয়ে নেয়।
চক্রের মূল হোতা জিগলুর গ্রেফতার:
শিল্পির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দলটি দ্রুত এগিয়ে যায় এবং গ্রেফতার করে চক্রের মূল হোতা জিগলু (৪৮)-কে। তার বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা রয়েছে, যা মাদক ব্যবসায় তার দীর্ঘদিনের প্রভাব ও অপরাধের ইতিহাসকে স্পষ্ট করে। জিগলু ছিল এই চক্রের কেন্দ্রীয় ব্যক্তি এবং তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আরও তিনজন মাদক ব্যবসায়ীকে ধরার ব্যবস্থা করে।
রাতভর তল্লাশি এবং চক্রের ধ্বংস:
জিগলুর তথ্যের ভিত্তিতে সারা রাত সমন্বিত তল্লাশি চালায় সেনাবাহিনী। একে একে ধরা পড়েন চক্রের আরও তিন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।
• দবির (৫৪), যার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে, তিনি মোতিয়ারের ছেলে; কালুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং একজন পরিচিত মাদক ব্যবসায়ী।
• খবির (৫৫), পিতা হারেছ বিশ্বাস; জগদল বেলে পাড়ার বাসিন্দা, যার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা রয়েছে। তার দীর্ঘদিনের মাদক ব্যবসার কার্যক্রমে এলাকাবাসী ভীত ছিল।
• মোফাজ্জল ফকির (৫১), পিতা সানাউল্লাহ ফকির; তিনি বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা এবং তার বিরুদ্ধে ৬টি মামলা রয়েছে।
ক্যাপ্টেন রিফাত এবং লেফটেন্যান্ট শাহরিয়ারের নেতৃত্বে সুনিপুণ পরিকল্পনায় পুরো এলাকা সুরক্ষিত করে চক্রের সকল সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
স্থানীয় জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া:
মাগুরার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এই মাদক চক্র ছিল এক আতঙ্কের নাম। এই অভিযান তাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করে এবং তারা সেনাবাহিনীর সাহসী পদক্ষেপকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্বাগত জানায়। এলাকাবাসী বিশ্বাস করেন, এ ধরনের অভিযান মাগুরাকে মাদকমুক্ত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
অভিযানে আটককৃত পাঁচজন অপরাধী একে অপরের পরিচিত ছিলেন এবং তাদের একাধিক অপরাধমূলক কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা ছিল। অভিযান শেষে তাদের মাগুরা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। তারা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে এবং পরস্পরের সাথে জড়িত থাকার বিষয়েও তথ্য দেয়।
অভিযানের পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সক্রিয়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং এলাকাকে মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে পরবর্তী পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাগুরার নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে বদ্ধপরিকর।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই সাহসী অভিযান শুধু মাগুরায় নয়, সারা দেশেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। দেশজুড়ে প্রশংসিত এই অভিযান এলাকাকে নিরাপদ ও মাদকমুক্ত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন।