বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরাবার্তা
১০০০ টাকায় পলিথিনের ছাউনি দেয়া ঘরও ভাড়া পাওয়া যায় না। ডাক্তারের ফি সরকারি স্কুলের শিক্ষকের চেয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের কাছ থেকে কম নেয় না। মানসম্মত শিক্ষা চাইলে শিক্ষকদের মানসম্মত জীবন দিতে হবে। -মাগুরায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থাকে শতভাগ জাতীয়করণসহ চার দফা দাবিতে মাগুরায় মানববন্ধন থেকে এসব কথা বলছিলেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা। মানববন্ধন শেষে সমাবেশ থেকে অবিলম্বে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করার দাবি জানান শিক্ষকবৃন্দ।
আজ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২৪) বেলা বারোটার দিকে মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জেলা শিক্ষক সমিতি ঐক্য জোটের সভাপতি মো: আমির হোসেন এর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এটিএম আনিসুর রহমান, সহ-সভাপতি মো: মিজানুর রহমান, মাগুরা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সামসুজ্জামান সেলিম, জগদল রূপাটি আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলমগীর কবির, পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইমাম হোসেন মো: ফরহাদসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ।
সভা থেকে মাধ্যমিক শিক্ষাকে শতভাগ জাতীয়করণ, জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষা প্রশাসনে পদায়ন বন্ধ করা, যুগোপযোগী শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন ও শিক্ষা প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধের দাবি জানানো হয়। পরে একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবরে পাঠানো হয়। স্মারকলিপিতে শিক্ষকবৃন্দ উল্লেখ করেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার মাধ্যমিক শিক্ষাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৭% বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু এ সকল বেসরকারি শিক্ষকরা মারাত্মক বৈষম্যের শিকার হয়ে অনেকটাই মানবতার জীবনযাপন করে। একই বোর্ডের অধীনে, একই সিলেবাসে একই বই পড়িয়েও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তুলনায় বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেতন বোনাস উৎসব ভাতা সহ সকল ক্ষেত্রেই বঞ্চনার শিকার হন। উদাহরণ হিসেবে তারা জানান -বেসরকারি শিক্ষকদের ঘর ভাড়া হিসেবে প্রতিমাসে মাত্র ১০০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। যা দিয়ে একটি পলিথিনের শেড দেয়া বস্তির ঘরও ভাড়া পাওয়া যাবে না উল্লেখ করে শিক্ষকরা দাবি করেন বেসিকের ৪০% বাড়ি ভাড়া দিতে হবে। শিক্ষকরা উল্লেখ করেন একজন শিক্ষক যখন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যান সেক্ষেত্রে তার জন্য কখনোই চিকিৎসকের ফি কম দেয়া সম্ভব হয় না। অথচ একজন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চিকিৎসা ভাতা ১৫০০ টাকা দেয়া হলেও বেসরকারি শিক্ষকরা পান মাত্র ৫০০ টাকা। বিগত সরকার মাধ্যমিক স্তরে বিদেশ থেকে নানা পরিকল্পনা নিয়ে এসে বাস্তবায়ন করলেও শুধুমাত্র শিক্ষকদের বেতনের ক্ষেত্রেই তারা কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেননি। যার ফলে ব্যাপক বৈষম্যের প্রভাবে বেসরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরা বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে এবঞ্চনাই সবচেয়ে বড় বাধা। এজন্যেই মাধ্যমিক শিক্ষা শতভাগ জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি। স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয় সম্প্রতি শিক্ষা প্রশাসনের জেলা শিক্ষা অফিসার, উপ-পরিচালক সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকদের পদায়নের পরিকল্পনা করছে একটি মহল। যেটি শিক্ষা সংস্কারে ও বৈষম্য বিলোপে নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে দাবি করেন শিক্ষকরা । এছাড়া শিক্ষা প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের জনবলকে দ্রুত রাজস্ব খাতে নেয়া ও শিক্ষাক্ষেত্রে সকল বৈষম্য দূর করতে একটি কার্যকর শিক্ষা সংস্কার কমিটির গঠনের দাবি জানান শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।