Main Menu

মহাম্মদপুরে ১৫০ বিঘা জমিতে সমালয় চাষ শুরু

IMG-20230114-WA0003

পংকজ রায়, মোহাম্মদপুর
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের হরিণধরার মাঠে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে ১৫০বিঘা জমিতে সমলয়ে বোরো ধানের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। আধুনিক এ পদ্ধতির চাষাবাদে বীজতলা থেকে শুরু করে ধান মাড়াই পর্যন্ত যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে একই সময়ে  সম্পন্ন করা হবে। এই চাষাবাদে কম খরচে  অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হবে। এক সময়ে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম জাতীয় ফসল চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরো সমৃদ্ধ হবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) লাভজনক ও  যান্ত্রিকীকরণ কৃষি কার্যক্রমের আওতায় মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন এর যৌথ আয়োজনে রবি প্রণোদনা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বোরো হাইব্রিড (এসএলএইট এইচ) ধানের সমলয় চাষের ট্রেতে উৎপাদিত চারা রাইসট্রান্স প্লান্টার এর মাধ্যমে চারা রোপন কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে  সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাসুদেব কুমার মালোর সভাপতিত্বে   প্রধান অতিথি ছিলেন মোহাম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আব্দুল মান্নান।   বিশেষ অতিথি ছিলেন  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মাগুরার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ)  কৃষিবিদ বিষ্ণু পদ সাহা, বিনোদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিকদার মিজানুর  রহমানসহ অন্যরা  । IMG-20230114-WA0002

সভায় স্বাগত বক্তব্য যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিক চাষাবাদে কৃষকদের সুফল নিয়ে মূল্যবান দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য রাখেন কৃষিবিদ জনাব মোঃ আব্দুস সোবহান,  উপজেলা কৃষি অফিসার, মহম্মদপুর।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই চাষাবাদে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। এতে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা। শ্রমিক দিয়ে ধান রোপণ করতে গেলে অন্তত ৬ হাজার টাকা খরচ হতো। এছাড়া উইডার মেশিন দিয়ে নিড়ানি দেওয়া হবে। এতে মাত্র ২জন শ্রমিক প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে অন্তত ১০জন শ্রমিকের মজুরি সাশ্রয় হবে। এই ধান পাকার পর কম্বাইন্ড হারবেস্টার দিয়ে কেটে মাড়াই করে দেওয়া হবে। এই মেশিন দিয়ে ১ বিঘা জমির ধান কাটতে মাত্র ১৫০০ টাকা ব্যয় হবে। এতে সাশ্রয় হবে অন্তত সাড়ে ৭ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এই পদ্ধতির চাষাবাদে কৃষকের বিঘা প্রতি অন্তত ১২ হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। এছাড়া এই পদ্ধতির চাষাবাদে বিঘা প্রতি হাইব্রিডে ৩০ মনের স্থলে ৩৫ মন ধান উৎপাদিত হবে। উফশী জাতে ২৫ মনের স্থলে ৩০ মন ধান উৎপাদিত হবে। এই পদ্ধতির চাষাবাদে জমিতে কোন আইল থাকে না। এছাড়া ২০ থেকে ২২ দিন বয়সের ধানের চারা রোপণ করতে হয়। তাই ধানের উৎপাদন বেড়ে যায়।

পেয়াদাপাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ আবু হাসান মোল্যা  বলেন, নতুন পদ্ধতির চাষাবাদে সবই যন্ত্রের ব্যবহার। এখানে শ্রমিক তেমন লাগে না। ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। তখন শ্রমিককে ১ হাজার টাকা মজুরি দিতে হয়। ধান নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না।সময়মতো শ্রমিক না পাওয়ায় ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক সময় ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই চাষাবাদে অধিক ফলন পেয়ে দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পারবো। এতে আমাদের অধিক লাভ হবে।

মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান বলেন, সমলয়ে চাষাবাদে পেয়াদাপাড়ার গ্রামের ১০৪ জন কৃষককে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তাদের জমিতে এই পদ্ধতির চাষাবাদ হচ্ছে। চাষাবাদের শুরুতে আমরা ট্রেতে বীজতলা করেছি। প্রতি বিঘায় প্রচলিত চাষাবাদে হাইব্রিড ধানবীজ ২ কেজি ও উফশী ধানবীজ ৫ কেজি দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়। সেখানে সমলয়ে চাষাবাদে বিঘা প্রতি বীজ খরচ অর্ধেক হয়েছে। মহম্মদপুর  উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৬ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে আইল রয়েছে প্রায় ৩০০হেক্টর। জমির আইল অনাবাদী থাকে। সব জমিতে সমলয়ে চাষাবাদ হলে ওই জমি চাষাবাদের আওতায় আসতো। এতে আরো প্রায় ১৫০০মেট্রিক মেট্রিক টন ধান বেশি উৎপাদন হতো। এই চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরো সমৃদ্ধ হবে বলে ওই কৃষি কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক সুফি মোঃ রফিকুজ্জামান বলেন, সরকার কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করতে চাইছে। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে শ্রমিক কম লাগে। এছাড়া ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। মাগুরার মহম্মদপুরে  উপজেলায় সমলয়ে চাষাবাদ কার্যক্রমের আওতায় ১৫০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এই পদ্ধতির চাষাবাদে একই জাতের ফসল আবাদ করতে হয়। ম্যানেজমেন্ট ও সেচ-নিকাশ খুব সহজ। ধানের অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হন।

পংকজ রায়/মহম্মদপুর/মাগুরা






Comments are Closed