শোকের মাতমের পাশাপাশি শ্রমিকদের নিরাপত্তার জোরদারের দাবী এলাকাবাসির
চট্টগ্রামের জাহাজ ডুবির ৪ শ্রমিকের লাশ মাগুরার বাড়িতে ; এখনও নিখোঁজ-২

বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরা
গত ১২ অক্টোবর বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলি নদীর মাঝিপাড়া এলাকায় এম ভি সুলতান সানজানা নামে ডুবে যাওয়া জাহাজে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার নিখোঁজ ৬ শ্রমিকের মধ্যে চারজনের লাশ বাড়িতে এসে পৌছেছে। শনিবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার মন্ডলগাতি ও খলিশাখালি গ্রামে নামাজে জানাজা শেষে ৩ জনকে স্থানীয় মন্ডলগাতি গোরস্থানে দাফন করা হয়। পাশাপাশি দুই গ্রামের ৩ শ্রমিকের লাশ হয়ে বাড়ি ফেরা ও ২ জনের নিখোঁজ থাকার ঘটনায় এলাকায় শোকের মাতম চলছে। সেইসঙ্গে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে এলাকাবাসি। এ ঘটনায় উপজেলার বাবুখালি ইউনিয়নের দাতিয়াদহ গ্রামের নাজমুল নামে এক শ্রমিকের লাশও তার বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। ওই এলাকার আরও দুজন শ্রমিক সাতরে কুলে উঠতে সক্ষম হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মহম্মপুর উপজেলার মন্ডলগাতি ও খলিশাখালি পাশাপাশি গ্রাম। গত অন্তত ৩০ বছর ধরে এ এলাকার একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ জাহাজে বিভিন্ন পদে চাকরি করে আসছেন। অনেকের কাছে এলাকাটি জাহাজি পাড়া হিসেবে পরিচিত। জাহাজে চাকরি করেই এ গ্রামের অনেকে স্বচ্ছলতার মুখ দেখেছেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা সেই সুখের ঘরে নিয়ে এসেছে শোকের মাতম। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামে জাহাজ ডুবিতে নিহত শ্রমিকদের মধ্যে তিনজনের লাশ এম্বুলেন্স যোগে এ গ্রামে পৌছলে সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণ হয়। চারদিনের ফুলে যাওয়া লাশ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালেও এক নজর প্রিয় মানুষদের দেখতে গ্রামের হাজারো মানুষ উপস্থিত হন এখানে। পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে কেউবা হয়ে পড়েছেন বাকরুদ্ধ। এ এলাকার মন্ডলগাতী গ্রামের জাহাজের সহকারি মাস্টার শিমুল মিয়া, সুরুজ মোল্যা ও খলিশাখালি গ্রামের মনির হোসেন বুধবার জাহাজ দুর্ঘটনায় মারা যান। একই ঘটনায় এখনও নিখোঁজ আছেন শাকিলের আপন ভাই সুকানি জাহিদুল ও শ্রমিক নূর মোহাম্মদ। শাকিলের মা ফাতেমা বেগম জানান, তার ছেলেরা প্রায় ১মাস আগে বাড়ি থেকে জাহাজে গিয়েছেন। জাহাজ ডুবে তাদের পরিবারের আশা আকাংখা ধুলিস্যাত হয়ে গেছে। এক ছেলে শাকিলের লাশ পেলেও অন্য ছেলে জাহিদুল এখনও নিখোজ রয়েছে। তিনি দ্রæত ছেলের লাশ উদ্ধার চান। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আজ প্রায় ২৬ বছর যাবত আমার ছেলে জাহাজে চাকরি করছে। এ দুর্ঘটনা আমাদের পরিবারকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। তবে এখনও জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষের কেউই নিহতদের পরিবারের কোনখোঁজখবর নেননি। তিনি নিহত ছেলেদের সংসার ও সন্তানদের কথা বিবেচনা করে জাহাজ কর্তৃপক্ষতে তাদের দায়িত্ব নেয়ার দাবী জানান। এ ঘটনায় বাবুখালি গ্রামের অপর নিহত মহম্মদপুরের দাতিয়াদহ গ্রামের নাজমুল এর লাশ তার নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনাটির জন্য এমভি সুলতান সানজানা ও আকিজ লজিস্টিক জাহাজ কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন একই গ্রামের বাসিন্দা ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অন্য জাহাজের মাস্টার আবু বাসার, বিল্লাল হোসেনসহ একাধিক জাহাজ শ্রমিক । তারা এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার দাবী করে শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবী করেন। তারা জানান, এমভি সানজানাকে আঘাতকারি এমভি আকিজ লজেস্টিকস নামে জাহাজটি বেপরোয়া ভাবে সানজানাকে আঘাত করে। এরজন্য ওই জাহাজের চালকই দায়ী। তারা ওই জাহাজটির মাস্টারই মূলত দায়ী। জাহাজটির আঘাতে সানজানার ইঞ্জিনরুমে পানি ঢুকে যায়। মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই সেটি ঢুবে যায়। এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও ক্ষতিগ্রস্থদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবী জানিয়ে পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ সেকান্দার আলী জানান, এ এলাকার অন্তত ৩শ মানুষ বিভিন্ন জাহাজে চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। আশির দশক থেকে এ এলাকার মানুষ জাহাজে চাকরি শুরু করে। এসব জাহাজে প্রচুর আয় হলেও শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে তারা বরাবরই উদাসিন ছিলেন। এর কারণেই জাহাজটিতে এমন হতাহতের ঘটনা ঘটলো।
উল্লেখ্য এমভি সানজানা জাহাজটিতে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৮ কর্মী বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় যশোবন্তপুর গ্রামের রুবেল এবং খলিসাখালী গ্রামের রবিউল ইসলাম সাঁতরে বেচে যান।
রূপক আইচ/মাগুরা /১৫ অক্টোবর ২২
Comments are Closed